সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৩১ পূর্বাহ্ন
জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: শিশু থেকে প্রবীণ, পুষ্টিকর খাবার সর্বজনীন এই স্লোগানকে সামনে রেখে লালমনিরহাটে অনুষ্ঠিত হলো জাতীয় পুষ্টি সপ্তাহ ২০২৫ উপলক্ষে এক বিশেষ মা সমাবেশ।
রবিবার (১ জুন) সিভিল সার্জনের কার্যালয়, লালমনিরহাটের বাস্তবায়নে ও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের আয়োজনে এ কর্মসূচি সম্পন্ন হয়। সমাবেশে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন ইএসডিও এবং ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম (এইচভিইউপি), লালমনিরহাট।
সমাবেশে ডা. দিপংকর রায়, সিভিল সার্জন (ভারপ্রাপ্ত), লালমনিরহাট এর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, জেলা প্রশাসক মোঃ রকিব হায়দার। বিশেষ অতিথি ছিলেন, ডা. মোঃ আব্দুল মোকাদ্দেম, তত্ত্বাবধায়ক, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল, লালমনিরহাট, পুলিশ সুপার মোঃ শরিফুল ইসলাম।
সমাবেশে লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. মোঃ আব্দুল মোকাদ্দেম বক্তব্যে বলেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাসে পুষ্টির ভূমিকা অপরিসীম। গর্ভকালীন ও প্রসব পরবর্তী সময়ে মায়েদের পুষ্টির ঘাটতি থাকলে শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। আমাদের প্রত্যেক স্বাস্থ্যকর্মীকে মাঠ পর্যায়ে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
হাসপাতালের গাইনি বিশেষজ্ঞ ডা. কেয়া তার বক্তব্যে নারীদের গর্ভকালীন যত্ন, নিরাপদ প্রসব এবং শিশুর প্রথম ৬ মাসে মাতৃদুগ্ধের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
ম্যাক্স ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ-এর ওয়াশ ভ্যালু চেইন স্পেশালিস্ট মোঃ আমিনুল ইসলাম মৃধা বলেন, শিশুর প্রথম ১,০০০ দিনই তার ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্য নির্ধারণ করে। তাই এই সময় মায়ের পুষ্টি নিশ্চিত করা অপরিহার্য। সেই সাথে এই ১০০০ দিনের করণীয় ও বর্জনীয় সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, শুধু খাদ্য নয়, নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্যবিধি পুষ্টির সাথে সরাসরি সম্পর্কিত। আমরা চাই প্রত্যেকটি পরিবার হোক হেলদি ভিলেজ ইন আরবান প্রোগ্রাম-এইচভিইউপি মডেলের অংশ।
পুলিশ সুপার মোঃ শরিফুল ইসলাম বলেন, জনগণের মধ্যে পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার এবং প্রশাসনের সম্মিলিত উদ্যোগ প্রয়োজন। নারীদের মধ্যে পুষ্টি সচেতনতা মানে একটি পুরো পরিবারকে সচেতন করা।
সমাবেশে প্রধান অতিথি উপস্থিত সুধী ও সকল মায়েদের উদ্দেশ্যে বলেন, একটি সুস্থ ও উন্নত জাতি গঠনের মূল ভিত্তি হচ্ছে পুষ্টি। শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে পর্যাপ্ত ও সুষম খাদ্য নিশ্চিত করার কোনো বিকল্প নেই। সরকার এ বিষয়ে আন্তরিকভাবে কাজ করে যাচ্ছে, তবে স্থানীয় পর্যায়ে জনসম্পৃক্ততা আরও জরুরি।
সমাবেশে অংশগ্রহণ ও প্রাসঙ্গিক বার্তা
অনুষ্ঠানে জেলার বিভিন্ন উপজেলার মা ও শিশু, স্বাস্থ্য সহকারি, কমিউনিটি স্বাস্থ্যকর্মী, জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক এবং উন্নয়ন সংগঠনের প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন। সবার মাঝে পুষ্টিকর খাবারের প্রদর্শনী, হ্যান্ডওয়াশিং ডেমো এবং সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়।
সমাবেশ এর মাঝে মাঝে বিভিন্ন ভিডিও চিত্র ও ডকুমেন্টারি পরিবেশনার মাধ্যমে শিশুর স্বাস্থ্য ও পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতামূলক বার্তা দেওয়া হয়।
এই আয়োজন পুষ্টি বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি একটি সমন্বিত, অংশগ্রহণমূলক ও সামাজিকভাবে সংবেদনশীল উদ্যোগ হিসেবে প্রশংসিত হয়। বক্তারা আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নিয়মিত সচেতনতামূলক কর্মসূচির মাধ্যমে আগামী প্রজন্মকে সুস্থ, সবল ও মেধাবী করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
পরিশেষে মা সমাবেশের সভাপতি ডাঃ দিপংকর রায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন এবং উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে মা সমাবেশের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।