রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৫ পূর্বাহ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ লালমনিরহাটে নানামুখী সংকটে ১৫টি নদী এখন বিলুপ্তির পথে। ধীরে ধীরে নদী শুকিয়ে পরিণত হচ্ছে মরুভূমিতে। নদীর বুকজুড়ে বালু আর বালু। নদীর বুকচিরে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিয়ে কৃষকরা ইরিধান লাগাতে ব্যস্ত সময় পার করছে।
স্থানীয়দেরা জানায়, একসময়ের খরস্রোতা এ নদীগুলো খনন করে রক্ষা করা না হলে অচিরেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিলুপ্তির পথে থাকা নদীগুলোর মধ্যে রয়েছে, তিস্তা, ধরলা, রতনাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান, সাঁকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহিনী, সতি, গিরিধারী, ছিনাকাটা, ধলাই, ভেটেশ্বর নদী ইত্যাদি। এসব নদীর মোট দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে তিনশ কিলোমিটার। বর্তমানে নদীগুলো পানি নেই বললেই চলে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন নদীগুলোর মতো পাটগ্রাম উপজেলার ৬ নদী হারিয়ে যেতে বসেছে। এসব নদীতে দীর্ঘদিন ধরে পানিপ্রবাহ ঠিক না থাকায় পলি পড়ে অধিকাংশ নদী ভরাট হয়ে গেছে। এতে বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি উপচে পড়ে গ্রাম এলাকায় প্রবেশ করে ব্যাপক ক্ষতি হয়। গত ২০ অক্টোবর জেলায় প্রবাহিত সানিয়াজান ও তিস্তা নদীর পানি আকস্মিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে প্রায় কয়েকশ একর ধান ক্ষেত, ঘরবাড়ি, দিঘির মাছসহ কয়েকটি সেতুর ব্যাপকক্ষতি হয়েছে।
ভারত থেকে নেমে আসা পদ্মা নদীর ওপর ভারতের ফারাক্কা বাঁধ ও তিস্তা নদীর ওপর গজলডোবা ব্যারেজ নির্মাণ করে পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় রংপুর লালমনিরহাট অঞ্চলের বেশকিছু (প্রায় ৬০টি) নদীর মতো জেলার ১৫ নদী প্রায় বিলুপ্তির পথে। বিশেষজ্ঞ ও সচেতন মহলের আশংকা এ অবস্থা চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে এ অঞ্চলের অধিকাংশ নদী মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে।
গজলডোবা ব্যারাজ বাঁধের মাধ্যমে ভারত আন্তর্জাতিক নদী শাসন আইন অমান্য করে একচেটিয়াভাবে তিস্তার পানি প্রত্যাহার করে নেয়ায় শুষ্ক মৌসুমে জেলার তিস্তা, ধরলা, রতনাই, স্বর্ণামতি, সানিয়াজান সহ বিলুপ্তির পথে উত্তরের ১৫ নদী খনন না করায় কমছে পানি ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্যে বিপর্যয় নামবে।
উজান থেকে প্রবাহিত নদীগুলোর ওপর ভারতের একের পর এক বাঁধ নির্মাণসহ আন্তর্জাতিক আইন অমান্য করে করায় দেশের উত্তরাঞ্চলের নদীগুলো মরে যাচ্ছে দিন দিন। সাঁকোয়া, মালদহ, ত্রিমোহিনী, গতি, গিরিধারী, ছিনাকাটা নদীর নাব্যতা হারিয়ে মাইলের পর মাইল বালুচর পড়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে। এসব নদীর বুকে মানুষ এখন ইরি-বোরো, ভুট্টা, পিয়াস হবে। মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন ফসলের চাষাবাদ শুরু করছে। ইতোমধ্যে অবৈধ দখলদারেরা (ভূমিদস্যুরা) দখল করে নিচ্ছে নদীর তীরবর্তী এলাকা।
অপরদিকে, জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার তিস্তা ব্যারেজ সেচ প্রকল্পের কার্যক্রম ভেস্তে যেতে বসেছে। শুষ্ক মৌসুমে নদীগুলোতে সামান্য পানি থাকলেও জোয়ার ভাটার প্রভাব থাকে না বললেই চলে। আন্তর্জাতিক নদীশাসন আইন অনুযায়ী পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে নদীগুলোর পানি প্রবাহের গতি ও খনন করে নদীর প্রবাহ ঠিক করা না হলে এ সব নদী আগামী ক’বছরের মধ্যে বিলুপ্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এর ফলে দেশের ভূ-প্রাকৃতিক ভারসাম্যের ওপরও বড় ধরণের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে।
পাটগ্রাম উপজেলার কৃষক আনিছুর রহমান বলেন, বর্তমানে ধরলা নদীতে পানি নাই। তাই এ নদীর পাশে বালু সরিয়ে জমি তৈরি করে এবার ইরি ধান লাগাচ্ছি। নদীতে পানি সেচ লাগে না কম খরচে প্রচুর পরিমাণে ধান পাওয়া যায়। তিস্তা পাড়ের হযরত আলী বলেন, ভিস্তায় যে পানি তা এখন কাজে লাগেছে। যে টুকু পানি আসে তা ক্যানেল দিয়ে নীলফামারীতে যায়। আমাদের দাবি তিস্তা খনন চাই। তিস্তা খনন হলে আমাদের অনেক চাষের জমি বের
পানি উন্নয়ন বোর্ড লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ভারত যদি আন্তর্জাতিক নদীশাসন মেনে নদী শাসন ও পানি নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করতো তাহলে বাংলাদেশের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোতে পানি প্রবাহ বাড়তো। ভারতেও পানি প্রবাহ কম। যা পানি প্রবাহ আছে তারা (ভারতীয় কর্তৃপক্ষ) আন্তঃনদী সংযোগের মাধ্যমে অন্য জায়গায় নিয়ে তাদের চাষাবাদে ব্যবহার করছে।