বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৪০ পূর্বাহ্ন
বিপ্লব হাসান : সূর্য উঠেছে সবেমাত্র । নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার ভূলতা মীর মার্কেটের সামনে চোখে পড়ে মানুষের জটলা। ফজরের আজানের পর থেকেই অভাবী লোকজন জড়ো হতে শুরু করে এখানে। এসব মানুষ বাজারে আসে বিক্রি হতে। আরেক শ্রেণীর মানুষ এখানে আসে ওদের কিনতে। চলতে থাকে দরদাম, দাম ওঠানামা করে;অন্য আর দশটা পণ্যের মতোই এই দাম ওঠে নামে। স্থানীয় ভাষায় বিক্রি হওয়া মানুষকে বলা হয় বদলি; কেউ বলে কামলা আবার অনেকে ডাকেন শ্রমিক বলে। প্রতিদিন ভোর পাঁচটা থেকে সকাল আটটা পর্য়ন্ত চলে এই বদলির বাজার। এ বাজার ঘুরে দেখা গেছে,মূলত বিভিন জেলার অভাবী লোকজন আসেন এখানে কাজের খোঁজে। তবে এক বেলার জন্যই বিক্রি হয় এসব মানুষ। এক সময় এ অঞ্চলে আলু,ইরি,বোরো,পেঁয়াজ,রসুন লাগাত কিন্তু বর্তমানে এ অঞ্চলে ফসলের জমি নাই বললেই চলে। ক্রেতারা এখন তাদের কিনে না ফসলের কাজের জন্য। এখন তাদের কিনে ঘর-বাড়ির কাজের জন্য কেউ কিনেন মাটির কাজের জন্য কেউ কিনেন রাস্তার কাজের জন্য আবার কেউ কিনেন রাজের কাজ করার জন্য । তবে কি শ্রম বাজার নাই,না শ্রম বাজারের সেই শ্রমিকরা এখন কষ্টে থাকলেও আশায় থাকে কে কিনবে তাদের। তবে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকার বেলা হিসেবে শ্রম বিক্রি হচ্ছে এখানে। মীর মার্কেটের সামনে কথা হয় বরিশাল জেলার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল গ্রামের আরব আলীর ছেলে মানিক (২৮) নামের এক জনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন,নিজ জেলায় কাজ নেই বলে এসেছি। তিনি বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার উপজেলার কালি বাড়ি থাকেন । তিনি আরও বলেন,এলাকায় শ্রমের দাম বেশি;কাজও বেশি। তাছাড়া,প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে চলে আসি। এছাড়াও কথা কিশোরগঞ্জ বাজিতপুর উপজেলার আবুল হোসেনের (৬০) সঙ্গে। তার নিজ উপজেলায় কাজ নেই। সাত সদস্যেও পরিবারের তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তিনি বলেন,এ এলাকায় শ্রমের দাম বেশি কাজও বেশি তাই প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। এ জন্য এখানে চলে আসি। তবে তিনি অভিযোগ করেন, মহাজনেরা তাদের একটুও বিশ্রাম দিতে চান না,পারলে রাত পর্যন্ত খাটাতে চান। আড়াইহাজার উপজেলার পুরিন্দা গ্রামের আব্দুল জলিল (৪৫) অভিযোগ করেন,ভোর পাঁচটা থেকে বেলা তিনটা পর্যন্ত টানা কাজ করার পরেও মালিকেরা সন্দেহের চোখে দেখেন। তিনি আরও বলেন,বাজারের চাল-ডালসহ সবকিছুর দাম বেড়েছে। এ অবস্থায় আমরা প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ টাকা পাই। এ টাকায় সংসার চলে না। এদিকে বদলি শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষের অভিযোগও কম নয়। আড়াইহাজর থেকে আসা নাসির উদ্দিন (৪৫) বলেন, হালের বদলিরা সাহেবের মতো। তারা ঘড়ি দেখে কাজ করে। কাজ শেষ না হতেই ঘড়ি দেখে কাজ ফেলে রেখে চলে যায়। রূপগঞ্জ উপজেলার মানিক (৬০) বলেন,একদিকে সার ও বীজের দাম বেশি অন্যদিকে বদলির দাম বেশি। এ অবস্থায় কৃষিকাজ ছেড়ে দেয়া ছাড়া উপায় কী?