মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ১১:০৭ পূর্বাহ্ন

রাণীশংকৈলে আগাম জাতের ধানে কৃষকের মুখে হাসি

রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি:: চলতি মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলায় আগাম জাতের ধান চাষ করে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। এবার ধানের ফলনও ভালো হয়েছে।

শনিবার (৯ অক্টোবর) উপজেলার হোসেনগাঁও, ধর্মগড়, কাশিপুর, নেকমরদ এলাকার পথ দিয়ে যেতে চোখে পড়ে বিস্তীর্ণ আমন ক্ষেত। কোনো কোনো ক্ষেতের ধান পাকতে শুরু করেছে। ক্ষেত থেকে সেসব ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষকেরা।

পথে থামলে এসব এলাকার কয়েকজন কৃষক জানান, এ বছর আমন ধানের উৎপাদন হচ্ছে একর প্রতি (১০০ শতক) ৫৪ থেকে ৬০ মণ। খরচ হয়েছে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকা। বাজারে প্রতি মণ ধান বিক্রি হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকায়। সে হিসাবে প্রতি একরে উৎপাদিত ধান বিক্রি করে পাওয়া যাচ্ছে ৩৮ হাজার টাকার বেশি। এই ধান কাটার পর জমিতে আগাম আলু চাষের সুযোগ পাচ্ছেন তাঁরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বছরের এই সময়ে আশ্বিন-কার্তিক মাস এলেই আগে উত্তরাঞ্চলে মঙ্গা বা আধা দূর্ভিক্ষ দেখা দিতো। বেশির ভাগ মানুষের ঘরে খাবার থাকতো না। আমন ধান ঘরে তোলার আগ পর্যন্ত খাবার জুটতো না। আমনের ফসল আসতে যেখানে ১-২ মাস সময় লাগবে, সেখানে এই মুহূর্তে আমন ধান পেকেছে। বিনার উদ্ভাবিত এ জাতগুলোর অপার সম্ভাবনা রয়েছে। একদিকে উৎপাদন ভালো অন্যদিকে ১০০ দিনের মধ্যে পাকে। এ ধান কেটে আলু, সরিষাসহ অন্যান্য ফসল করা যাবে। আশ্বিন-কার্তিক মাসে এই অঞ্চলে একসময় কাজের সংকট ছিল। কৃষক-দিনমজুরসহ সবাই প্রায় বেকার হয়ে যেতেন। তা দূর করতে আগাম জাতের আমন ধান চাষ শুরু করা হয়। উপজেলায় চলতি মৌসুমে এবার আমনের ২১ হাজার ৪৫৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে কৃষকেরা ৫ হাজার ১৪৫ হেক্টটর জমিতে আগাম হাইব্রিড জাতের আমনের চাষ করেছেন। হাইব্রিড ছাড়াও উচ্চ ফলনশীল বিনা-১৭, ব্রি-৭৫, ব্রি-৮৭ জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত ২৫০ হেক্টর জমির ধান কাটা শেষ হয়েছে।

উপজেলার ভাংবাড়ি এলাকার কৃষক আবুল হোসেন (৩৭) দুই একর জমিতে হাইব্রিড ধানের চাষ করেছিলেন। এখন জমির সেই ধান কাটতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তিনি। আবুল হোসেন বলেন, এবার ফলনের পাশাপাশি ধানের দামও ভালো। আর এতেই কৃষকেরা খুশি। ধর্মগড় মন্ডলপাড়া গ্রামের আরেক কৃষক মুন্জর হোসেন (৫৫) দুই বিঘা জমিতে হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করেছেন। ফলনের কথা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, খরচ আর ধানের দাম মিলিয়ে এবার মোটামুটি লাভ হবে। ধান উঠলে যে টাকা হাতে আসবে, তা আবার আলুর আবাদে খরচ করবেন।

কৃষি কর্মকর্তা সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, আগাম জাতের ধান কৃষকরা ১১০ থেকে ১১৫ দিনের মধ্যে ঘরে তুলতে পারছেন। আমনের জাতগুলোর তুলনায় ৬০ থেকে ৭০ দিন আগে এ ধান পেকে যায়। ফলে বাকি সময়ে কৃষক অন্য ফসল চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। এ জাতের ধানচাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। এখন ধানি জমিতে কৃষকেরা বছরে তিনবার ফসল ঘরে তুলতে পারছেন। আগাম জাতের ধান চাষ, কাটা ও মাড়াইয়ের পরে বর্তমানে জমিতে আলু ও সরিষা চাষ করছেন। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com