বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন

যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আমাদের সঙ্গে দাদাগিরি আর মাস্তানমুখী আচারণ বন্ধ করেন, ভারতকে ফখরুল

যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আমাদের সঙ্গে দাদাগিরি আর মাস্তানমুখী আচারণ বন্ধ করেন, ভারতকে ফখরুল

জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই- আগেও বলেছি, এখনও বলছি। বাংলাদেশের মানুষের সাথে যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আগে তিস্তার পানি দেন। সীমান্ত হত্যা বন্ধ করেন। আমাদের সঙ্গে বড় দাদা আর মাস্তানমুখী আচারণ বন্ধ করেন। আমরা আমাদের পায়ের ওপরে দাঁড়াতে চাই। আমরা আমাদের হিস্যা বুঝে নিতে চাই। আমরা অবশ্যই ভারতকে একটা বন্ধু হিসেবে দেখতে চাই, সে বন্ধুত্ব হবে সম্মানের সঙ্গে আমার যে পাওনা আছে সে পাওয়া বুঝে দেওয়ার সঙ্গে।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিস্তা রেলসেতু এলাকায় “জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই’ স্লোগানে তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের ৪৮ ঘন্টার অবস্থান কর্মসুচির উদ্বোধনকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি’র মহাসচিব বলেন, শুধু তিস্তা নয়; ৫৪টি নদী আছে যেগুলো ভারত থেকে আমাদের দেশে আসে। সবগুলো নদী উজানে তাঁরা বাঁধ দিয়েছে। বাঁধ দিয়ে পানি তুলে নিয়ে যায়, বিদ্যুৎ উৎপাদন করে আর আমাদের দেশের মানুষ এখানে ধান ফলাতে পারে না, ফসল ফলাতে পারে না। এখানে মানুষ জীবন জীবিকা থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত হয়েছে। আমাদের জেলে যারা মাছ ধরেন, তাঁরা মাছ ধরতে পারে না।

আওয়ামীলীগ ও ভারতের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, প্রত্যেকটা মানুষ আজকে কষ্টের মধ্যে পড়তে হয়েছে। আমরা লড়াই করেছি ১৫ বছর। ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে। আমাদের ছেলেরা লড়াই করেছে। সকলের লড়াইয়ের মাধ্যমে পালিয়েছে, কোথায়? ওই ভারতে। একদিকে পানি দেয় না, অন্য দিকে আমাদের যে শত্রু তাকে দিল্লিতে রাজাহালে বসায় রাখছে। ওইখান থেকে আবার সে বিভিন্ন রকম হুকুম জারি করে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আওয়ামী লীগ আছে নাকি এ্যালা। পালাইছে। বন্ধুগণ আজকের এই সংগ্রাম বাঁচা মরার সংগ্রাম, এই এলাকার মানুষের সংগ্রাম। এই সংগ্রামকে আমরা কখনো বন্ধ হতে দিব না।

যদি বন্ধুত্ব করতে চান, আমাদের সঙ্গে দাদাগিরি আর মাস্তানমুখী আচারণ বন্ধ করেন, ভারতকে ফখরুল

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অন্তর্বতীকালীন সরকার। কথায় কথায় আপনারা বলেন নিরপেক্ষ। নিরপেক্ষ কিন্তু এই জায়গায় থাকলে চলবে না। এই জায়গায় আপনাকে মুখ খুলতে হবে। ভারতকে বলতে হবে-যে আমার পানির ন্যায্য হিস্যা আমি চাই। আর আপনি যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাড়াতাড়ি নির্বাচনটা দিন। জনগণের সরকারে হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেন।

তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের প্রধান বিএনপি’র কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক উপমন্ত্রী আসাদুল হাবীব দুলু’র সভাপতিত্বে উদ্বোধনী দিনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন, বিএনপি’র ভাইস চেয়ারম্যান সামসুজ্জামান দুদু। অন্যান্যের মধ্যে একই মঞ্চে আন্দোলনে সংহতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন, জাতীয় পার্টির (কাজি জাফর) চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির সাধারন সম্পাদক সাইফুল হক, বিএনপি’র চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কন্ঠশিল্পী বেবি নাজনী, বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেক ও নদীপাড়ের ভুক্তভোগী নুর বকস।

সমাবেশের বিভিন্ন পয়েন্টে পৃথক পৃথকভাবে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি স্থায়ী কমিটি সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু এবং গণসংহতি আন্দোলন প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি।

তিস্তা নদীর দুই পাড়ের ৫টি জেলার ১১টি পয়েন্টে ৪৮ ঘন্টার অবস্থান কর্মসুচি পালন করা হচ্ছে। লালমনিরহাট, রংপুর, নীলফামারী, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রাম জেলার ১১টি পয়েন্টে করা হয়েছে মঞ্চ ও থাকার ব্যবস্থা। তিস্তাপাড়ের মানুষ তাদের দাবি আদায় করতে টানা ৪৮ ঘন্টা অবস্থান কর্মসুচি পালন করছেন। শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ সকলেই দলে দলে অবস্থান কর্মসুচিতে যোগ দিয়ে জাগো বাহে তিস্তা বাঁচাই স্লোগানে মুখোর হয়ে উঠে তিস্তা নদীর ১২৫ কিলোমিটারের দুই তীর। দুপুর গাড়ি বিকেল নামলে প্রতিটি পয়েন্টে কানায় কানায় ভড়ে উঠে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com