বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৩:৩৩ অপরাহ্ন

যত চ্যালেঞ্জিংই হোক না কেন, সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

ড. মুহাম্মদ ইউনূস (ফাইল ছবি)

একুশের কণ্ঠ অনলাইন:: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, জাতীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হলে দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ দরকার। দক্ষ ও কর্মক্ষম মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে না পারলে ব্যক্তিগত জীবন থেকে জাতীয় উন্নয়ন কোনোটাই যথাযথভাবে করা যাবে না। যে কোনও পরিস্থিতিতেই হোক না কেন এবং যত চ্যালেঞ্জিংই হোক না কেন, আমাদের সুস্থ-সবল প্রজন্ম গড়ে তুলতে হবে।

বুধবার (২০ আগস্ট) সকালে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সহযোগিতা বৃদ্ধির নিমিত্ত ‘যৌথ ঘোষণাপত্র’ স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে সরকারি, বেসরকারি, সুশীল সমাজ, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা– সমাজের সব শ্রেণি-পেশার মানুষ, সবার সক্রিয় অংশগ্রহণ প্রয়োজন। কেবল পারস্পারিক অংশীদারত্বের মাধ্যমেই এটা সম্ভব।

পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই অসংক্রামক রোগ দিন দিন বিস্তৃত হচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিপুল জনগোষ্ঠীর ছোট এলাকায় বসবাসের প্রেক্ষাপটে এ পরিস্থিতি আরও সংকটময়। তাই এটি জাতীয় স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক। যেটা শুধু স্বাস্থ্য খাত নয়; আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতি, সামাজিক নিরাপত্তা এবং টেকসই উন্নয়নের সঙ্গেও নিবিড়ভাবে জড়িত।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০২২ সালের প্রতিবেদন অনুসারে, বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর শতকরা ৭১ ভাগ ঘটে থাকে অসংক্রামক রোগের কারণে। এর মধ্যে শতকরা ৫১ ভাগ মানুষের মৃত্যু হয় ৭০ বছর বয়সের নিচে; যাকে আমরা অকাল মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করে থাকি। আমাদের ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় ঊনসত্তর শতাংশ, যার বেশির ভাগ অসংক্রামক রোগের জন্য ব্যয় হয়।

অসংক্রামক রোগ হলে মানুষ উচ্চ চিকিৎসা ব্যয়ের মুখোমুখি হতে বাধ্য হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, কোনও ব্যক্তির ক্যানসার হলে তার পরিবারকে আর্থিক ক্ষমতার সর্বোচ্চ প্রয়োগ করতে হয় এবং প্রায় ক্ষেত্রেই সহায়হীন-সম্বলহীন হয়ে পড়ে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে অতি উচ্চ মূল্যে চিকিৎসা নেওয়ারও প্রয়োজন হয়। আমাদের বিপুল অংকের টাকা চলে যায় বিদেশে এসব রোগের চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, অসংক্রামক রোগের চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা যেমন উন্নত হওয়া জরুরি, তেমনই রোগগুলো যেন কম হয় অথবা না হয়, সে জন্য উপযুক্ত জনসচেতনতা এবং প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের একার পক্ষে এটা সম্ভব নয়। এ জন্য সব মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা দরকার। খাদ্য, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, স্থানীয় সরকার, গণপূর্ত এমন প্রত্যেকটি খাতের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রত্যেক খাত থেকে দরকার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা ও নিবিড় উদ্যোগ। তাই এ সব মন্ত্রণালয় চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের করণীয় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবুও আমি যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নে কয়েকটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরত্ব আরোপ করতে চাই।

প্রথমত জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামকগুলোর বিষয়ে আমাদের যথেষ্ট সচেতনতা আছে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায় না। অনেকেই সচেতন থাকলেও জীবনযাপনে হয়ত সেভাবে প্রতিফলন নেই। ফলে নানামাত্রিক শারীরিক ও মানসিক সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে এবং দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন অগ্রগতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। যেমন- তরুণদের মধ্যে অনেকে একইসঙ্গে পুষ্টিহীনতায় ভুগছে, আবার অতিরিক্ত ওজন নিয়ে শারীরিক ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতিতেও রয়েছে। তামাকের বিরুদ্ধে তরুণ সমাজকে আজ সচেতন করা না গেলে, আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। এর পাশাপাশি, স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ জরুরি ভিত্তিতে মানুষকে সচেতন করতে হবে। জাতীয় নীতিগুলো এমনভাবে প্রণয়ন করতে হবে যেন সেগুলো স্বাস্থ্যবান্ধব হয়, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে সহায়ক হয়; শিশু, কিশোর ও নারী স্বাস্থ্য যেন বিশেষ অগ্রাধিকার পায়, নাগরিক সমাজ ও যুব শক্তি যেন সচেতনতা কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে পারে।

দ্বিতীয়ত যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নে সরকারের পাশাপাশি দরকার বেসরকারি উদ্যোগ। দরকার আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক কারিগরি সহযোগিতা। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেল প্রয়োগ করে এ সংক্রান্ত উদ্যোগ নেওয়া হলে যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়ন সহজ হবে। আশা করছি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ এ বিষয়ে উদ্যোগ নেবে। স্বাক্ষরকারী মন্ত্রণালয়গুলো সহযোগিতা করবে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রয়োজনীয় সাপোর্ট দেবে।

তৃতীয়ত যে কোনও কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়নে নিবিড় মনিটরিং ও মূল্যায়ন আবশ্যক। আবার এগুলো করতে দরকার উপযুক্ত ও দক্ষ জনবল, আর্থিক বরাদ্দ। এ দিকটা বিবেচনায় রাখতে সংশ্লিষ্ট সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। আপনারা যৌথ ঘোষণা বাস্তবায়নের কাজটি বিশেষ অগ্রাধিকারে রাখবেন, প্রয়োজনীয় বরাদ্দ ও জনবল নিশ্চিত করবেন যেন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় বিশেষ কোনও সীমাবদ্ধতা বা চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি না হয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com