বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
কটিয়াদী (কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ আবহমান গ্রাম বাংলার বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে মেলা। বছরে নির্দিষ্ট একটি তারিখে হয় মেলা। এটির অপেক্ষায় সারাবছর মুখিয়ে থাকেন গ্রামের মানুষ। মেলায় আনন্দ উৎসবে মেতে উঠে সবাই। বাড়িতে বাড়িতে তৈরি হয় বিভিন্ন রকমের পিঠা। আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত দেওয়া হয়। বিশেষ করে এলাকার জামাইদের দাওয়াত থাকে। মেলার মাছ দিয়ে জামাইদের বরণ করে নেওয়া হয়। এমনি আকর্ষণীয় এক মেলার নাম কুড়িখাই মেলা।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদীতে চলছে জেলার সবচেয়ে বড় শত বছরের ঐতিহ্যের কুড়িখাই মেলা। গত ৭ ফেব্রুয়ারি সোমবার থেকে মেলাটি শুরু হয়েছে। মেলা চলবে ১০ দিন ব্যাপী। কটিয়াদী উপজেলা সদর থেকে ৩ কিলোমিটার ভিতরে পল্লী গ্রাম কুড়িগাই এ মেলাটি হচ্ছে। মেলাকে কেন্দ্র করে আশপাশের ৫০টি গ্রামে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করছে। প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে মেলার স্টল বসেছে।
এ মেলার মূল আকর্ষণ জামাই-বউ মাছের মেলা। প্রথা আছে, এ মেলা থেকে ৪০ গ্রামের জামাইরা মাছ কিনে আনেন। এলাকার রীতি অনুযায়ী জামাইরা এ মেলা চলার সময় শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে আসেন। মেলা থেকে সবচেয়ে ভালো ও বড় আকারের মাছটি কিনে তবেই তারা যাবেন শ্বশুরবাড়িতে। তাই দেশের নানা এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা মাছের পসরা নিয়ে বসেছেন মেলা প্রাঙ্গণে। কে সবচেয়ে বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাবেন, এ নিয়ে জামাইদের মধ্যে চলে নীরব প্রতিযোগিতা।
মেলায় বিভিন্ন রকমের বড় মাছ উঠেছে। তার মধ্যে একটি বড় শাপলা মাছ উঠেছে। দাম ৫৬ হাজার টাকা। একটি বোয়াল মাছের দাম উঠেছে ৪৬ হাজার টাকা। রুই মাছ ৪০ হাজার টাকা। এছাড়াও অনেক জাতের মাছের বিপুল সমাহার দেখা গেছে।
মেলাতে মাছ কিনতে ঢাকা থেকে এসেছেন এলাকার জামাই জগলুল হাকিম (৬৫)। তিনি বলেন, ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একটি বোয়াল মাছ কিনলাম। মাছের দাম একটু বেশি মনে হচ্ছে মেলাতে।
মেলায় ঢল নামছে, হাজার হাজার মানুষের। মেলায় মিষ্টি, খেলনা, মিঠাই-মণ্ডা, ফিরনি-বাতাসা, বিন্নি খই ছাড়াও সার্কাস, পুতুলনাচ ও নাগর দোলাসহ বিনোদনের স্থানগুলোতে যেনো কমছেই না মানুষের জটলা। নানা শ্রেণি আর বয়সের লোকজন মেলায় আসছে। বড়দের হাত ধরে মেলায় আসছে শিশুরাও। মেলায় সবকিছু ছাপিয়ে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, মেলায় বসা মাছের বাজার।
সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায়, সববয়সী মানুষের ভীড় লেগেই আছে মেলাতে। সবচেয়ে বেশি ভীড় ছিল মাছ বাজারে। এছাড়াও নাগরদোলাতেও ছোট বড় ছেলে মেয়েদের ভীড় লেগে ছিল। মেলায় জিনিসপত্রের চড়া দাম লক্ষ্য করা গেছে। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, জায়গা পেতে কমিটিকে টাকা দিতে হয়। এর প্রভাব পড়ে জিনিসপত্রের দামের উপরে। ইচ্ছে মতো দাম বাড়িয়ে রাখছে দোকানিরা। তদারকি করার কেউ নেই। জসিম মিয়া (৩০) বেলাবো থেকে এসেছেন কসমেটিকস এর দোকান নিয়ে। তিনি জানান, ৮ হাত জায়গা পেতে তাকে দিতে হয়েছে ৩৬০০ টাকা। মেলায় হোটেল নিয়ে এসেছেন নাটোর জেলা থেকে আসলাম শেখ। তিনি জানান, ২০ হাত জায়গা পেতে তাকে দিতে হয়েছে ৮ হাজার টাকা।
মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মইনুজ্জামান অপু জানান, মেলা আয়োজন করতে আমাদের নিজস্ব কোনও মাঠ নেই। জমির মালিকদের থেকে ভাড়া নিয়ে মেলা আয়োজন করতে হয়। এছাড়াও আনুষঙ্গিক খরচ রয়েছে। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে এ টাকা নেওয়া হয়। তবে অতিরিক্ত টাকা নেওয়া হয় না ৷ খুশি মনে যা দেয় তাই নেওয়া হয়।