মঙ্গলবার, ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৩:০৪ পূর্বাহ্ন
সাদের হোসেন বুলু নিজস্ব প্রতিনিধি : ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকায় অবস্থিত রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে অধ্যয়নরত ছাত্র মোঃ তাওহীদ ইসলাম (১০) গত ১০ ফেব্রয়ারী রাতে অপহরন করা হয়। পরে মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী। কিন্তু মুক্তিপণ পাওয়ার পরেও তাওহীদকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে (৩৭) কে রাজধানীর শ্যামপুর এলাকা থেকে র্যাব-১০ এর একটি দল আসামীকে গ্রেফতার করেন।
র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সংস্থাটির আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
র্যাব সূত্র জানায়, মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। নিহতের পরিবার ও মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতেন। কিছুদিন আগে বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাধে পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক গড়ে ওঠে। তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী হওয়ায় মুক্তিপণের আশায় বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করেন তিনি।
গত শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) দিনগত রাতে ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার রসুলপুর জামি’আ ইসলামিয়া মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগের শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম নিখোঁজ হয়। খোঁজাখুজির এক পর্যায় ওইদিন রাতে একজন ব্যক্তি বাসায় পড়ে থাকা মোবাইল ফোনে জানায়, তিনি তাওহীদকে অপহরণ করেছেন এবং মুক্তিপণ হিসেবে তিন লাখ টাকা দাবিও করেন। ফোনটি অপহরণকারীই রেখে যান। পরবর্তীতে তাওহীদের মা বাদী হয়ে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি অপহরণ মামলা করেন।
নিহতের মা তার ছেলেকে উদ্ধারে র্যাবের কাছে অভিযোগ করেন। র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ১২ ফেব্রুয়ারি মাদরাসা ছাত্রকে অপহরণ করে হত্যার পর সেপটিক ট্যাংকে মরদেহ গুমের পরও মুক্তিপণের টাকা আদায়ের মূল পরিকল্পনাকারী ও হত্যাকারী মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করে র্যাব। এসময় উদ্ধার করা হয় মুক্তিপণের দুই লাখ ৯০ হাজার টাকা।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারকৃত মকবুল পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। নিহত হওয়া তাওহীদের পরিবার ও খুনি মকবুল একই এলাকায় বসবাস করতো । কিছুদিন পূর্বে মকবুল তাওহীদদের বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেছে। তাই এলাকায় বসবাস এবং বাসায় রাজমিস্ত্রির কাজ করার সুবাদে ভুক্তভোগীর পরিবারের সাথে তার সুসম্পর্ক ছিল। নিহত তাওহীদের বাবা একজন প্রবাসী। মৃত তাওহীদ কেরাণীগঞ্জের আব্দুল্লাহপুর এলাকার একটি মাদরাসা ও এতিমখানায় নাজেরা বিভাগে পড়াশোনা করতো। যার ফলে সে সকালে মাদরাসার উদ্দেশ্যে বাসা হতে বের হতো এবং বাসায় ফিরতে প্রায়ই সন্ধ্যা হয়ে যেত।কমান্ডার মঈন বলেন, গ্রেফতার মকবুলের ধারণা ছিল যে, ভুক্তভোগীর বাবা প্রবাসী তাই তাকে অপহরণ করলে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করা যাবে। এ কারনে মকবুল অল্পসময়ে বেশি অর্থ লাভের আশায় প্রায় ছয় মাস ধরে অপহরণের পরিকল্পনা করে আসছিল। মকবুল ভিকটিম তাওহীদ মাদরাসা থেকে বাড়ি ফেরার পথে বাড়ির রাস্তার পাশে ওৎ পেতে থাকে।
এ সময় ভিকটিম মাদরাসা থেকে আনুমানিক রাত ৮টার দিকে ঘটনাস্থলে পৌঁছামাত্র আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা মকবুল ভিকটিমের মুখ চেপে ধরে উক্ত এলাকার নিকটস্থ একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে কলাগাছের সঙ্গে তার হাত, পা ও মুখ বেঁধে রাখেন। পরবর্তীতে মকবুল আগে থেকে কিনে রাখা মোবাইলফোন কৌশলে তাওহীদের বাসায় ফেলে রাখে। মকবুল বাসায় রেখে আসা মোবাইলফোনে কল দিয়ে অপহরণের বিষয়টি জানিয়ে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে।
এ সময় মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা নিলে তাওহীদকে হত্যা করার হুমকি দেয়। কলাগাছে বেঁধে রাখা অবস্থায় মুখের বাঁধন খুলে যায় এই সময় মকবুলকে ভিকটিম চিনে ফেলে ও ডাক-চিৎকার করলে মকবুল ক্ষিপ্ত হয়ে তাওহীদের মুখ ও গলা মাফলার দিয়ে পেঁচিয়ে ধরে শ্বাসরোধ করে নৃশংসভাবে হত্যা করে। লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে ওই এলাকার সেপটিক ট্যাংকের ভিতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। র্যাব জানায়, হত্যার পরও সে মুক্তিপণের টাকা চায়। নিহত তাওহীদের মামা মকবুলের কথা মতো ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের ফুটওভার ব্রিজের উপরে ৪ নম্বর পিলারের গোড়ায় তিন লাখ টাকা রেখে আসেন। পরবর্তীতে মকবুল মুক্তিপণের টাকা নিয়ে পোস্তগোলা এলাকায় একটি আবাসিক হোটেলে অবস্থান করেন। হোটেলে অবস্থাকালীন সময় র্যাব তাকে গ্রেফতার করে।