সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৭:০০ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ বুধবার ২৫ মে মিরপুর স্টেডিয়ামে বৃষ্টির জন্য তৃতীয় দিনটিতে খেলা হয়েছে মোট ৫১ ওভার। দিন শেষে তাদের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ২৮২ রান। বাংলাদেশের ৩৬৫ রানের চেয়ে এখন আর ৮৩ রানে পিছিয়ে শ্রীলঙ্কা। প্রথম ম্যাচের মতো আবারও উইকেটে থিতু হয়ে গেছেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। ঢাকায় সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের চেয়ে ৮৩ রানে পিছিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। এ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস ৫৮ ও দিনেশ চান্ডিমাল অপরাজিত আছেন ১০ রানে।
শেষ বিকেলে দারুণ বল করলেন বাংলাদেশের বোলাররা। টার্ন, বাউন্স, সুইং; পাওয়া গেল সবই। বেশ কয়েক বার জাগল উইকেট পাওয়ার দারুণ সম্ভাবনা। কিন্তু পাওয়া গেল না একটির বেশি উইকেটের দেখা। আফসোস নিয়েই দিনশেষ করতে হলো বাংলাদেশকে।
দ্বিতীয় দিনে ২ উইকেটে ১৪৩ রান নিয়ে খেলা শেষ করেছিল শ্রীলঙ্কা। দিনের শেষ ভাগে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে পাঠানো হয় রাজিথাকে। সেই দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করে দিনের বাকি অংশে উইকেট বাঁচিয়ে রাখেন এ লেজের সারির ব্যাটার। দিনের শুরুতেই কাসুন রাজিথাকে ফেরান এবাদত হোসেন। তার অফ স্টাম্পে পড়া লেন্থ বল আঘাত হানে রাজিথার স্টাম্পে। ১২ বলে ০ রান করে সাজঘরে ফেরত যান তিনি। তার বিদায়ের পর বাংলাদেশকে বেশিক্ষণ অপেক্ষায় থাকতে হয়নি।
বুধবার ২৫ মে চতুর্থ দিন ৮৩ রানে পিছিয়ে শুরু করলেও তাদের পরিকল্পনা যতটা সম্ভব লিড নেয়ার। সবেমাত্র ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংস চলমান, তবে নাটকীয়তার শুরু হবে আজই। প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়ে থাকা দলের হাতেই থাকবে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগের যে ১৯ টেস্টে ফলাফল হয়েছে তার মধ্যে প্রথম ইনিংস শেষে এগিয়ে থাকা দল ১৬ বার জিতেছে।
আগামীকাল এগিয়ে থাকার লড়াই হবে । তৃতীয় দিনেই সেটা হতে পারত, ২২২ রানে পিছিয়ে থেকে শুরু করে পৌনে এক ঘণ্টার মধ্যেই ২ উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়ে লঙ্কানরা। এরপর সতর্ক ব্যাটিংয়ে প্রতিরোধ গড়েন এ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা। কিন্তু ব্যাট-বলের এই ঠোকাঠুকিতে স্ফুলিঙ্গ ওঠার আগেই তাতে জল ঢেলেছে প্রকৃতি। তাই সারাদিনে মাত্র ৫১ ওভার খেলা হয়েছে। এজন্য এগিয়ে থাকার ফয়সালাটা হয়নি বুধবার। আজ হবে, তাই বাংলাদেশের পেস বোলিং কোচ এ্যালান ডোনাল্ড আজকের সকালটাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ দাবি করেছেন।
আগের দিন শেষ বিকেলে কুশল মেন্ডিসকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলে বাংলাদেশকে স্বস্তিতে রেখে দিনশেষ করেছিলেন তিনি। আজও সকালটা রাঙালেন সাকিবই। রাজিথাকে ফেরালেও অস্বস্তি হয়ে ক্রিজে ছিলেন করুণারতেœ।
দুই ম্যাচ সিরিজের শেষটিতে পঞ্চম দিনের শেষ সেশনে ৬ উইকেট হারিয়ে শ্রীলঙ্কা ২৬০ রান তুলে নেওয়ার পর ড্র মেনে নেন দুই দলের অধিনায়ক। তাকে প্রথমে দুই বলে ‘সেট আপ’ করে নেন সাকিব। এরপরই করেন নিজের স্বপ্নের বলটি। রাউন্ড দ্য উইকেটে এসে করুনারতেœকে ড্রাইভ খেলতে আমন্ত্রণ জানান সাকিব। করুনারতেœ সেটি খেললেও ব্যাট ও প্যাডের মাঝখানে ফাঁকা জায়গা থেকে যায়।
অফ স্টাম্পের বাইরে পড়া বল টার্ন করে ওই জায়গা দিয়ে গিয়েই স্টাম্পে আঘাত হানে। ১৫৫ বলে ৮০ রান করে সাজঘরে ফেরত যান করুনারতেœ। কিন্তু এরপর বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই বাকিটা সময় পার করেন ধনঞ্জয়া ও ম্যাথিউস। লাঞ্চ বিরতির সময়ই আসে বৃষ্টি।
ওই বৃষ্টি শেষ হওয়ার পর খেলা শুরু হতেই দারুণ বোলিং করেন সাকিব-এবাদত ও তাইজুল ইসলাম। খালেদ আহমেদ অবশ্য ঠিক লাইন-লেন্থ খুঁজে পাচ্ছেন না ম্যাচজুড়েই। দুর্দান্ত বোলিং করা সাকিব পেয়েছেন উইকেটও। ওই বলটিও ছিল দারুণ।
ডান-হাতি ধনঞ্জয়ার জন্য মাটিতে পড়ে টার্ন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল, ছিল অতিরিক্ত বাউন্সও। তার ব্যাটের কানায় লেগে উইকেটরক্ষক লিটন দাসের হাতে চলে যায় বল। যদিও শুরুতে আউট দেননি আম্পায়াররা।
রিভিউ নেওয়ার ব্যাপারে খুব একটা নিশ্চিত ছিলেন না সাকিব। কিন্তু মুমিনুল রিভিউ নিয়ে সফল হন। পুরো বিকেলজুড়েই দুর্দান্ত বোলিং করেছেন বাংলাদেশের বোলাররা। এবাদতের বলে সুইং ছিল, বাউন্সেও পরাস্ত করেছিলেন ব্যাটারদের; কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। সাকিব দারুণ কিছু টার্ন আদায় করে নিয়েছেন। দুর্দান্ত বোলিং করা সাকিব এদিন ১৭ ওভারে ৬ মেডেনসহ ৪০ রান দিয়ে ২ উইকেট তুলে নেন। সবমিলিয়ে এই ইনিংসে ২৬ ওভারে ৯ মেডেনে মাত্র ৫৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের সেরা বোলার তিনি।
এ বিষয়ে ডোনাল্ড বলেছেন, ‘সে দারুণ নিয়ন্ত্রণে বলের গতি বদলাতে পারে। সেটা আবারও দেখিয়েছে সে। আশা করছি সে আগামীকাল ৫ উইকেট নিয়ে বের হবে।’ আর সাকিব-এবাদত যদি সেটা সকালেই দ্রুত করতে পারেন সেক্ষেত্রে এগিয়ে থাকার একটা সুযোগ থাকবে বাংলাদেশ দলের।
খালেদ আহমেদ ও সাকিবের ওভারে নিয়মিত বিরতিতেই বাউন্ডারি হাঁকিয়ে নিজেদের ফিফটি তুলে নেন দুজন। সাকিবের করা ৮৮তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ফিফটি পূরণ করেন ম্যাথিউজ। যা শ্রীলঙ্কার পক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে তার ৫০তম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ দুই দলের জন্য।
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস- ৩৬৫
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৪৬ ওভারে ১৪৩/২ (ওশাদা ৫৭, করুনারতেœ ৭০*, মেন্ডিস ১১, রাজিথা ০*; খালেদ ৯-১-২৭-০, ইবাদত ৯-০-৩১-১, সাকিব ৯-৩-১৯-১, মোসাদ্দেক ২-০-১৪-০, তাইজুল ১৭-১-৪৯-০)