সোমবার, ২৫ অগাস্ট ২০২৫, ১২:৩১ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টার॥ বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের দলেই জায়গা হচ্ছিল না। আর সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদেই রুখে দাঁড়ালেন এবং দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিও করে ফেললেন। প্রায় শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলে জায়গা পেয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। অথচ সেই ৩৭ বছরের ব্যাটারের ব্যাটেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও মান বাঁচল অধিনায়ক সাকিবদের।
মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ছয়ে নেমে শতরান করেন ১১১ বলে ১১১ রানের এক দুর্দান্ত ঝঁকঝকে ইনিংস খেললেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। এই নিয়ে বিশ্বকাপে তৃতীয় শতরান করলেন তিনি। এক দিনের বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের শতরানের সংখ্যা ছয়। তার অর্ধেকই রিয়াদের। এ দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১১টি চার এবং ৪টি ছয় দিয়ে সাজানো ইনিংসে রিয়াদ দেখিয়ে দিয়েছেন উইকেট কোনও জুজু ছিল না।
শনিবার (২৮ অক্টোবর) নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশ মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে সাত নাম্বারে ব্যাট করতে পাঠান। দুই চারের সুবাদে ২০ রান করে ফিরে যান।
রিয়াদের মত ব্যাটার লোয়ার অর্ডারে ব্যাট করতে নামেন তা মানতে পারেননি ভারতের হার্শা ভোগলে ক্রিকেট বোদ্ধা, জয় ভট্টাচারিয়া। এবার ভারতীয়দের সঙ্গে একমত পোষণ করলেন পাকিস্তানের লেজেন্ডারি ক্রিকেটার ওয়াসিম আকরাম ও মিসবাউল হক। চলতি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের একমাত্র সেঞ্চুরিয়ান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ আছেন দুর্দান্ত ছন্দেও। পাকিস্তানের এক টিভি শোতে মিসবাহ উল হক বলেছেন, আগেও বলেছি বাংলাদেশ মাহমুদউল্লাহকে প্রতিভার অপচয় করছে। দুর্দান্ত ফর্মের কারণে কৌশল বদলে মাহমুদউল্লাহকে ব্যাটিং অর্ডারে ওপরে নিয়ে আসা উচিত সাত নম্বরে নামার আগে ম্যাচ প্রায় শেষ হয়ে যায়। এমন দারুন ফর্মে থাকলে আমার মতে তাকে আরও পরে ব্যবহার করা উচিত। বুঝতে পেরেছি আপনি তাকে ফিনিশারের ভূমিকা দিয়েছেন। কিন্তু দলের প্রয়োজন হলে কেন সেটা আপনি পরিবর্তন করবেন না? যেভাবে তিনি শর্ট খেলেছে, পিকআপ শট, এক্সট্রা কভারের ওপর ছক্কা, এক কথায় দারুন। মাহমুদউল্লাহ পরিপূর্ণ একজন ব্যাটসম্যান, আর অভিজ্ঞও।
শুধুই সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে না রিয়াদের ক্যারিয়ারে এমনটাই হয়েছে যে, তিনি যখন ব্যাটিংয়ে নামেন তখন দল হারিয়ে ফেলে বেশ কয়েকটা উইকেট। প্রোটিয়াসদের বিপক্ষে রিয়াদ যখন ক্রিজে আসেন তখন বাংলাদেশ হারিয়েছে ৪ উইকেট। ৪৬ রানে ৪ উইকেট হারানো একটা দলকে একজন ফিনিশার কিভাবেই বা ম্যাচ বের করে আনবেন। অথচ রিয়াদ চেষ্টা করেছেন তার সর্বোচ্চ দিয়েই। তবে যেখানে সেনসিবল একজন ব্যাটার দলে আছে তাকে ব্যাটিং আগে না নামিয়ে পরে নামিয়ে লাভটা কি হয়? আদৌ কোন লাভ হয় কিনা সেই প্রশ্নই থেকে যায়। আর এই জায়গাটাতেই বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে একটা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন কিং অফ সুইং ওয়াসিম আকরাম। আকরাম পাকিস্তানের সেই টিভি শো বাংলাদেশের টিম ম্যানেজমেন্টকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এমন ফিনিশার রেখে লাভ কি হবে। যখন আপনার ৪০ রানেই ৪ উইকেট থাকে না? তখন তো ফিনিশার কিছু করতে পারবে না।
এই প্রশ্নের উত্তর আছে কি টিম ম্যানজেমেন্টের কাছে? আপনি জানলে অবাক হবেন বিশ^কাপে ৪ এ নেমে বা এরপর নেমে সেঞ্চুরি করা ক্রিকেটারদের মধ্যে রিয়াদ এখন যৌথভাবে দ্বিতীয়। মিস্টার থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি এডিভিলিয়াসকে ছুঁয়েছেন সাইলেন্ট কিলার। ৪ বা এর সিক্সটি নিচে নেমে বিশ্বকাপের মঞ্চে ৩টা করে সেঞ্চুরি আছে রিয়াদ ও এবি ডি ভিলিয়ার্সের। প্রথম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কান গ্যাট মাহেলা জয়বর্ধনকে ছুতে রিয়াদের দরকার আর একটা সেঞ্চুরি মাত্র। বিশ্বকাপে যার রেকর্ড এত ভাল সে রিয়াদকে খেলতে হয় নিচের দিকে। এখন পর্যন্ত তিন ইনিংস খেলে তার রান সংখ্যা ৪১, ৪৬ ও ১১১। প্রথম ম্যাচে ব্যাট করেছেন আটে, পরের ম্যাচে সাতে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছয়ে নেমেছেন রিয়াদ। রিয়াদের ব্যাটিং অর্ডার কি প্রোমোট করবেন টিম ম্যানেজমেন্ট, নাকি রিয়াদ থাকবেন অবহেলিত, খেলবেন সেই লোয়ার অর্ডারে এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজবেন ভক্তরা।
মাহমুদউল্লাহ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে শতক চারটি, সব কটিই আইসিসির টুর্নামেন্টে। একটি ২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে। ২৪ অক্টোবর শতকসহ বাকি তিনটি বিশ্বকাপে। ২০১৫ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টানা দুই ম্যাচে শতক করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বাংলাদেশের অন্য ব্যাটারের উইকেটে থাকার কোনও চেষ্টাই করেননি। বিশ্বকাপে নিজের পছন্দের জায়গায় ব্যাট করার সুযোগ পাচ্ছেন না রিয়াদ। এক মাত্র তিনিই ধারাবাহিকভাবে রান পাচ্ছেন। ভারতের বিরুদ্ধে করেছিলেন ৩৬ বলে ৪৬ রান। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ৪১ রানে অপরাজিত ছিলেন রিয়াদ। আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ব্যাট করতে হয়নি তাঁকে। ইংল্যান্ডের ম্যাচে তাঁকে নেয়া হয়নি। মাহমুদউল্লাহ ব্যাট করছেন কোন পজিশনে? এখন পর্যন্ত ৩ ইনিংস খেলা এই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার বিশ্বকাপে ব্যাট করছেন ছয়, সাত ও আট নম্বর পজিশনে।
ধারাবাহিকতা অধিনায়ক সাকিবকেও নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর এমন দুর্দান্ত ফর্মের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ‘এ স্পোর্টস এর প্যাভিলিয়ন অনুষ্ঠানে মিসবাহ বলছেন, ‘অসাধারণ খেলেছে। ২০১৫ বিশ্বকাপেও মাহমুদউল্লাহ দুটি সেঞ্চুরি করেছিল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি পেয়েছিল। ২৪ অক্টোবর মঙ্গলবার পেসের বিপক্ষে মাহমুদউল্লাহকে বেশ গোছানো মনে হয়েছে। এটি বিশ্বকাপে তাঁর তৃতীয় সেঞ্চুরি রিয়াদের। তবে টপ অর্ডার ও মিডল অর্ডারে ধসের কারণে সেটি সম্ভব হচ্ছে না। উল্টো মাহমুদউল্লাহকে খেলতে হচ্ছে সম্মানজনক স্কোর তুলতে।
ম্যাচের পর সাকিব বলেছেন, বিশ্বকাপের পরের ম্যাচগুলিতে রিয়াদকে আরও উপরের দিকে নামাতে পারেন তাঁরা।