মঙ্গলবার, ১৯ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৩ অপরাহ্ন

মাইকেল মধুসূদনের জন্মভিটা সাগরদাঁড়ির দত্তবাড়ি

বিশেষ প্রতিনিধিঃ যশোরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্য মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের জন্মভিটা। বাড়িটি যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ি গ্রামে অবস্থিত। যশোর শহর থেকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ির দূরত্ব প্রায় ৪৫ কিলোমিটার।

মাইকেল মধুসূদন ১৮২৪ খ্রিষ্টাব্দের ২৫ জানুয়ারি সাগরদাঁড়ি গ্রামের এই দত্তবাড়িতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ১৮৩০ সালে এই বাড়ি ছেড়ে কলকাতার খিদিরপুর চলে যান। ১৮৬২ সালে কলকাতায় থাকার সময় তার মায়ের অসুস্থতার খবর পেয়ে স্ত্রী-পুত্র, কন্যাকে নিয়ে নদীপথে আবার আসেন সাগরদাঁড়িতে। যখন তিনি সপরিবারে এখানে এসেছিলেন তখন ধর্ম পরিবর্তনের কারণে জ্ঞাতিরা তাকে এই বাড়িতে উঠতে দেয়নি। এজন্য তিনি কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী এক কাঠবাদাম গাছের তলায় তাঁবু খাটিয়ে ১৪ দিন অবস্থান করেছিলেন। পরে বিফল মনোরথে সেখান থেকেই কলকাতায় চলে যান। এরপর কোনোদিন তিনি আর এ বাড়িতে ফিরে আসেননি।

বর্তমানে কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়িটিকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সাহায্যে কবির স্মৃতি নিদর্শন এবং আলোকচিত্র নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে জাদুঘর। প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের সংস্কার করা এই দোতলা বাড়িটিতে রয়েছে মোট ছয়টি কক্ষ। এর মধ্যে উপরে তিনটি এবং নিচে তিনটি কক্ষ রয়েছে। এর নিচ তলায় রয়েছে কবি পরিবারের একটি মন্দির আর মধুসূদন জাদুঘর। মধুসূদন জাদুঘরে আছে কবির ব্যবহার করা খাট, চেয়ার ও আলমারি। এর পাশে রয়েছে একটি ছোট পাঠাগার। ভবনের উত্তরদিকে আছে ছাদহীন-দেওয়ালঘেরা অসাধারণ নির্মাণশৈলীর একটি কক্ষ। এ কক্ষেরই কোনার দিকে রয়েছে তুলসী গাছ। বাড়ির প্রবেশ পথের সামনে রয়েছে ১৯৮৪ সালে শিল্পী বিমানেশ চন্দ্র বিশ্বাসের নির্মিত কবি মধুসূদন দত্তের একটি ভাস্কর্য।

আধুনিক বাংলা কবিতার জনক ও যুগস্রষ্টা এই কবি বাংলা সাহিত্যে সনেট, চতুর্দশপদী কবিতা এবং মহাকাব্য সৃষ্টি করেছেন। বিশ্বসাহিত্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন বাংলা কবিতাকে। তার অমর সৃষ্টি মেঘনাদবধ কাব্য। এছাড়াও দ্য ক্যাপটিভ লেডি, শর্মিষ্ঠা, কৃষ্ণকুমারী, পদ্মাবতী, বুড়ো শালিকের ঘাড়ে রোঁ, একেই কি বলে সভ্যতা, চতুর্দশপদী কবিতাবলি ইত্যাদি তার অমর রচনাবলি।

জমিদার ঘরে জন্মগ্রহণ করেও শুধুমাত্র সাহিত্যকে ভালোবেসে সমাজ সংসার থেকে পেয়েছেন বঞ্চনা আর যন্ত্রণা। ১৮৭৩ সালের ২৯ জুন কলকাতায় মারা যান মহাকবি মাইকেল মধুসূদন। এরপর কবির ভাইয়ের মেয়ে কবি মানকুমারি বসু ১৮৯০ সালে তার প্রথম স্মরণসভার আয়োজন করেন সাগরদাঁড়িতে। সেই থেকে শুরু হয় মধুমেলার।

সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জেলা প্রশাসন প্রতি বছর আয়োজন করে সপ্তাহব্যাপী মধুমেলার। মেলাকে ঘিরে উৎসব আমেজের সৃষ্টি হয় কেশবপুরসহ আশপাশের এলাকায়। মেলায় বিনোদনের নানা আয়োজন ছাড়াও প্রতিদিন মঞ্চে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বিভিন্ন এলাকার মানুষ মধুমেলা উপভোগের জন্য আসেন।

ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশপথে যশোরে যাওয়া যায়। ঢাকার গাবতলী, কল্যাণপুর, কলাবাগানসহ প্রধান বাসস্ট্যান্ড থেকে এসি, নন-এসি বাস ছেড়ে যায়। সপ্তাহে ৬ দিন ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে জংশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন আন্তঃনগর সুন্দরবন, চিত্রা ও বেনাপোল এক্সপ্রেস যশোরে যাতায়াত করে। এছাড়া ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমান, ইউএস বাংলা, নভো এয়ারের বিমান প্রতিদিনই যশোরে চলাচল করে। যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে কেশবপুর রুটে বাস ছেড়ে যায়। বাসের যাত্রীপ্রতি ভাড়া ৫০ টাকা। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে বাসে চেপে সোজা কেশবপুর প্রায় দেড় ঘণ্টার পথ। সেখান থেকে একটু সামনে গিয়ে ডান দিকে গ্রামীণ পথ বেয়ে পিচঢালা রাস্তা চলে গেছে সাগরদাঁড়ি, কবি মাইকেল মাইকেল মধুসূদন দত্তের পৈত্রিক ভিটায়। ভ্যান, নসিমন (স্যালোমেশিন চালিত স্থানীয় যান) বা ইজিবাইকে আধঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় দত্তবাড়িতে। এছাড়া যশোর শহর থেকে মাইক্রোবাস বা প্রাইভেট কার ভাড়া নিয়েও ঘুরে আসা যায় সাগরদাঁড়ির ঐতিহ্যবাহী দত্তবাড়িতে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com