রবিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:১৬ অপরাহ্ন

মই দিয়ে রবিউলদের শর্টকাটে ধনী হওয়া অপরাধ হবে?

রাজু আহমেদ : উত্তরাধিকার সূত্রে যা পাবো সেটাই আমার সম্পদ, যা হয়তো পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সংরক্ষণ করতে পারবো-যেহেতু কর্ম আছে! চাকুরি করে যা পাই তাতে ডাল-ভাত খেয়ে টিকে থাকাই দায়! বিলাসিতার স্বপ্ন অধরা থাকলেও দুঃখ নাই। বেকার জীবনে যতোখানি সামাজিক ছিলাম এখন তার অর্ধেক সামাজিকতাও নাই! কেউ নিমন্ত্রণ করলে আঁতকে উঠি! খাম আতঙ্ক এক দুঃস্বপ্নের নাম! মোটকথা, আয়-ব্যয়ে সমন্বয় করে কুলিয়ে উঠতে পারি না-আরকি! বাপ-দাদার থেকে কোটি খানেক টাকা পেলে কোনভাবেই চাকুরি করতাম না! সরকারি চাকুরি তো নয়-ই! সামর্থ্য নাই বলেই কাজ করতে এসেছি! বেতনে বেকারত্ব ঘোচায় বটে কিন্তু দারিদ্র্য দূর করে না! শিক্ষকতায় তো একেবারেই নয়! বিশ্বাস করা লাগবে না-আপনাকে বিশ্বাস করানোয় আমার ঠেকা পড়েনি! জীবন অনেককিছুই শেখায়-শেখাচ্ছে!

আপনি চাকুরি করেন? চাকুরির শুরুরদিকে বা মধ্য সময় কাটাচ্ছেন? আপনার বয়সী কেউ যদি সরকারি চাকুরিতে খুব উন্নতি করে অর্থাৎ অর্থের চাকচিক্যে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, এখানে জমি দেখে, ওখানে প্লটের খবর লয়, অভিজাতদের তল্লাটে ফ্লাট কিনতে যায়, সন্তানকে দামী স্কুলে পাঠায় কিংবা বিদেশেও দু’কড়ির সম্পদ জুটিয়েছে এবং সর্বত্র দাতাগিরি করে তবে বুঝবেন ঘাপলা আছে! আছেই! বাজারের সাথে কুলিয়ে উঠে এখন অনেক কিছুই করা যায় না যদি আয়ে বা’হাত সক্রিয় না হয়! চেয়ারের উচ্চতায় চরম ক্ষমতা থাকতে পারে কিন্তু পারিশ্রমিকের পোটলা যদি উপচে যায় তবে ঘৃণা করতে শুরু করেন! মনে মনে বয়কট করেন! সে আর সৎ পথে, নীতির রথে নাই! সে লাইনে নাই! আইনের ফাঁকফোকরে ফাইনে ফাইনে চলছে! বিবেকের জবাবদিহিতা তাকে আর আটকাতে পারছে না।

ঘুষের টাকা, সুদের টাকা, জোচ্চুরি-বাটপারি করে কামানো টাকা, বোন-ফুপুর অধিকার বঞ্চিত করে সে সম্পদের টাকা, গরীবকে পিষে আদায়কৃত টাকা, দু’টাকার পণ্য ১৩ টাকায় বিক্রি করে সঞ্চিত টাকা, শ্বশুর বাড়ি থেকে আদায়কৃত যৌতুকের টাকা, স্ত্রীকে মোহরানা বঞ্চিত করে জিতে নেওয়া টাকা জমিয়ে কার জন্য রেখে যাচ্ছেন? সন্তানের জন্য? কুলাঙ্গার হিসেবে পরিচয় পাবে! নেশাখোর-মাতালে বদলে যাবে! আপনার পরের প্রথম প্রজন্ম যদি সঠিক পথে থাকেও তার পরের প্রজন্ম বখে যাবেই। সেই বীজ আপনি বুনে গেলেন! ভাগের ভাগ কবরে পৌঁছে যাবে! নিশ্বাসের-দীর্ঘশ্বাসের এবং অভিশাপের ক্ষমতা আছে! গোপন ক্ষমতা! বরং সন্তানকে ও নিজেকে নীতিবান করে গড়ে তুলুন। রাষ্ট্রের চেয়ে পরিবার সন্তানকে নীতি-নৈতিকতার কার্যকরী ছবক দিতে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে।

ক্লাসে ঠিকঠাক না পড়িয়ে প্রাইভেটে বাধ্য করা কিংবা অফিসের ফাইল আটকিয়ে দু’পয়সা কামাই করা নতুবা রাজনৈতিক পরিচয়ে গরীব জনগণের অধিকার চুষে খাওয়া-এসব বাদ দিন! ক্ষমতা একদিন ক্ষয়ে যাবে। সময় বয়ে যাবে! হারামের পয়সায় কোরমা-পোলাও খেলেন আর আপনার মতই আরেকজন হালাল টাকায় ডালভাত খেলো-রাত্রি কারো থেমে থাকবে? আপনার মেদ জমবে, মানসিক অস্থিরতা বাড়বে! আর যে সৎপথে আছে তার মানসিক শক্তি বাড়বে, আত্মপ্রত্যয় সৃষ্টি হবে এবং সুসন্তানের কল্যাণে জীবনে শান্তি সম্মৃদ্ধি আনবে! হালালের সাথে হারাম মিশ্রিত করার খেসারত দিতেই হবে!

সৎ মানুষের প্রচন্ড অভাব, সততার অনুপস্থিতির খেসারত সর্বত্র! জনে জনে, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে পড়েছে অসততা-দুর্নীতি। মুখে নীতিকথা বলছে অথচ কাজে-চিন্তায় দুর্নীতির আঁকড়া! লেবাস ধরেছে সাধুর, সঙ্গী করেছে ভন্ডামী! সমাজের সর্বত্র যে যাকে যেভাবে পারছে সেখানেই ধরাশায়ী করছে! ভালোর প্রতিযোগিতা কম, মন্দের মাখামাখিতে সুসময় ডুবছে। দুর্নীতিবাজদের তাড়া করতে করতে রাষ্ট্র ক্লান্ত। ভালো মানুষের আদর-কদর কম আর দুর্নাম বেশি! সিস্টেম তাদের দমিয়ে দিতে চেষ্টা করছে! মানসিকতা এবং মানবিকতার উন্নয়ন-অগ্রযাত্রা বড্ড অস্থায়ী অস্তিত্ব নিয়ে ধুঁকছে! যে যেভাবে পারছে হাতাচ্ছে! এমন বাস্তবতায় মই দিয়ে রবিউলদের শর্টকাটে ধনী হওয়ার চেষ্টা অপরাধ হবে? চারদিকে যা হচ্ছে?-আপনি-আমি কী করছি?

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com