বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৬:৩৪ পূর্বাহ্ন
মো. আবু তালহা তারীফ ।।
চারদিকে গরমের উত্তাপ। দিশেহারা খেটেখাওয়া সর্বসাধারণ। পশু পাখিও হাফিয়ে উঠেছে তীব্র এই গরমে। সূর্যের তাপে বাংলার কৃষক, রিক্সা চালক, শ্রমিক, অফিস,আদালতসহ সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সারাদিন পরিবারের জন্য অর্থ উপার্জনে করতে গিয়ে অস্থিরতা অনুভব করছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর দেশে হিট অ্যালার্ট জারি করেছে। বৃষ্টির জন্য হাহাকার। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘তিনিই আল্লাহ, যিনি বাতাস পাঠান, এরপর তা মেঘমালাকে সঞ্চালিত করে। এরপর তিনি মেঘমালাকে যেভাবে ইচ্ছা আকাশে ছড়িয়ে দেন এবং স্তরে স্তরে রাখেন। এরপর তুমি দেখতে পাও যে, তা থেকে বৃষ্টি নেমে আসে। তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের ইচ্ছা তা বৃষ্টি পৌঁছান; তখন তারা আনন্দিত হয়।’ (সুরা রুম: ৩৮)
তীব্র এই গরমে একটু স্বস্তি পাওয়া আশায় দেশে বৃষ্টির জন্য মসজিদে নামাজ শেষে বিশেষ দোয়া হচ্ছে। বৃষ্টির জন্য খোলা আকাশে জামায়াতের ব্যবস্থা করে নামাজ আদায় করেছেন দেশের ধর্মপ্রাণ মুসুল্লিরা। ইসলামের পরিভাষায় বৃষ্টির জন্য বিশেষ এই নামাজকে সালাতুল ইস্তিস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনার নামাজ বলা হয়।
আল হিদায়া ১ম খন্ডের মাধ্যমে জানতে পারি,আজান ও ইকামতবিহীন সালাতুল ইস্তিস্কা দুই রাকাত। সালাতুল ইস্তিস্কায় ইমাম নিযুক্ত করে ইমাম সাহেব উচ্চস্বরে কিরাত পাঠ করবে। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমার পর সাতবার তাকবির এবং দ্বিতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে পাঁচবার তাকবির দিতে হবে। প্রতি তাকবিরের সময় হাত ওঠাবে এবং তাকবিরগুলোর মধ্যে সামান্য বিরতি নিয়ে মহান আল্লাহর প্রশংসা ও প্রিয় নবীর প্রতি দরুদ শরিফ পাঠ করবে। সালাম ফিরানোর পর ইমাম সাহেব খুতবা প্রদান করবেন।
অবশ্যই খুতবায় বেশি বেশি কোরআনে উল্লেখিত মহান আল্লাহর একাত্ববাদের, ইস্তিগফার ও মাগফিরাতের আয়াতসমূহ পাঠ করা অতিউত্তম। কান্নাজরিত কন্ঠে আদব ও মিনতীর সঙ্গে কোরআন ও হাদিসে উল্লেখিত দোয়াসমূহ পাঠ করবেন। ইমাম ও মুসুল্লি সবাই কিবলামুখী হয়ে পোশাক উল্টিয়ে পরবেন, ডান দিকের অংশ বাঁ দিকে এবং বাঁ দিকের অংশ ডান দিকে দেবেন, উভয় হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকবেন। হাদিসে শরীফে এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে জায়েদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘ রাসুল (সা.) নামাজের মাঠের দিকে বের হয়ে গেলেন, অতঃপর( ইস্তিস্কা) আল্লাহর কাছে পানি তলব করলেন। তিনি কিবলামুখী হলেন। তাঁর চাদর উল্টিয়ে পরলেন এবং দুই রাকাত নামাজ আদায় করলেন।’ (বুখারি ও মুসলিম)।
সালাতুল ইস্তিস্কা বা বৃষ্টি প্রার্থনা নামাজে নিম্ম বর্নিত দোয়াটি পাঠ করা যেতে পারে । কেননা বৃষ্টির জন্য দোয়াটি রাসুল (সা:) পাঠ করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, লোকজন রাসুল (সা:) এর নিকট অনাবৃষ্টির কষ্টের কথা বললেন। তখন তিনি ঈদগাহে সাহাবায়ে কেরামকে নিয়ে এই দোয়া পাঠ করেন। অতপর মহান আল্লাহর হুকুমে বৃষ্টি বর্ষণ হতে শুরু করে। বৃষ্টি থেকে পরিত্রাণ পেতে মানুষের ছোটাছুটি দেখে নবীজি হেসে ফেলেন। দোয়াটি হল- ‘আলহামদু লিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। আর-রাহমানির রাহিম। মালিকি ইয়াউমিদ্দিন। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইয়াফয়ালু মা ইউরিদ। আল্লাহুম্মা আনতাল্লাহু লা ইলাহা ইল্লা আনতাল গানিয়্যু ওয়া নাহলুল ফুকারাউ। আনজিল আলাইনাল গাইছা ওয়াজআল মা আনজালতা লানা কুওয়্যাতান ওয়া বালাগান ইলা হিন।’ অর্থাৎ,‘সব প্রশংসা পৃথিবীর প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য। তিনি পরম করুণাময়, দয়ালু ও শেষ বিচারের মালিক। আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই, তিনি যা ইচ্ছা করেন। হে আল্লাহ, তুমিই একমাত্র মাবুদ, তুমি ছাড়া কোনো উপাস্য নেই। তুমি ধনী, আমরা গরিব। আমাদের ওপর বৃষ্টি বর্ষণ করো এবং আমাদের জন্য যা অবতীর্ণ করো, তা আমাদের জন্য শক্তিময় ও কল্যাণ দান করো।’ (আবু দাউদ: ১১৭৩)।
লেখক: গবেষক, আল ফুরকান রিসার্চ সেন্টার, ঢাকা।