শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫৮ পূর্বাহ্ন

বাঘার পদ্মার চরাঞ্চলে কৃষকের ‘মিষ্টি হাসি মিষ্টি কুমড়ার চাষে ।

আব্দুল হানিফ মিঞা, বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি::
ঢলঢল পাতা ছড়িয়ে বিস্তীর্ণ এলকাজুড়ে বিছিয়ে গেছে লতা। পাতার মাঝে ছোট-বড় নানা আকারের কুমড়ার সারি। সবুজ পাতার ভেতর থেকে উঁকি দিচ্ছে লালচে রঙের আভা। তার কোনো কোনোটি পেকে উঠেছে। ধু ধু বালুচরে মিষ্টি কুমড়া চরের মানুষের মুখে ফিরিয়ে এনেছে মিষ্টি হাসি। সবুজের এই প্লাবন রাজশাহীর বাঘা উপজেলার চকরাজাপুর ইউনিয়নের পদ্মার চরে।
এই চরের দশটি গ্রামে তিন হাজার ৪ শ ৪১ টি পরিবারের বাস। যাদের অধিকাংশই হতদরিদ্র অবস্থা। যৎসামান্য চাষাবাদ ও মাছ ধরা তাদের জীবিকা। পদ্মার নদ মূল ইউনিয়ন থেকে এই চরকে আলাদা করে রেখেছে। ৮ বছর আগে বালু পড়ে আরও একটি বিশাল চর জেগে ওঠে। কিন্তু আবাদের উপযোগী হয়নি। চরে বাস করা প্রায় পরিবার এই বালুচরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ করে সফল হয়েছে। এই মিষ্টি কুমড়া হাসি ফুটিয়েছে তাদের মুখে।
চরের পতিত শুকনো বালুচরে মিষ্টি কুমড়ার চাষ সম্পর্কে জানতে চাইলে দিয়াড়কাদিপুর গ্রামের চায়না বেগম জানান, অতিদরিদ্র নারি হিসেবে ২০১১ সালে নদী ও জীবন প্রকল্পে অন্তর্ভূক্ত হন। এরপর জবা মহিলা দলীয় আলোচনায় নিয়মিত অংশ গ্রহন করতে থাকেন। সেই দলের প্রকল্পের সহযোগিতায় বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষন নেন। এর মধ্যে বাড়ির আশেপাশে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ,‘বাজারজাত করণ,গরু-ছাগল পালন ও ঔষধী গাছের চাষ উল্লেখযোগ্য। এমতাবস্থায় নদী ও জীবন-২ প্রকল্প থেকে বিভিন্ন ধরনের সবজি বীজ প্রদান করে। নিজেকে বদলে দেওয়ার প্রতিজ্ঞায় প্রশিক্ষণ কাজে লাগিয়ে সবজি চাষ করে লাভবান হন। তিনি জানান, কোনো দিন ভাবতে পারেননি, যে বালুর মধ্যে ঘাসও গজায় না, সেখানে কুমড়া হবে! এর আগে পদ্মার বালু পড়ি বিশাল চর জাগি ওঠে।
চরের আরেক নারি রহিমা বেগম বলেন, গত মাসের শেষে কুমড়া তোলা শুরু হয়। একেকটি কুমড়ার ওজন ১০/১২ থেকে নিচে ৫/৭ কেজি পর্যন্ত। কোনটির ওজন ১৫ কেজি পর্যন্ত হয়েছে। এত বড় কুমড়া দেখে শুধু আমরাই নয়,চরের মানুষও খুশি হইছে। কারণ হিসেবে জানা গেল, বিক্রি ছাড়াও নিজে খেয়েছে, আত্মীয়কে দিকে পেরেছে। এছাড়াও বানের (বন্যার) সময়ে খাওয়ার জন্য থুয়ে দিয়েছে। তাঁর মতে, ‘নদীর দুই পাশে যত চর পড়ে আছে, কুমড়া লাগাইলে এখানকার মানুষের অভাব থাকবে না।’
বেসরকারি সংস্থা সমতা নারি কল্যান সংস্থা(এসএনকেএস) এর নির্বাহি পরিচালক নজরুল ইসলাম জানান, প্রথমে যখন উপজেলার গড়গড়ি,পাকুড়িয়া ও মনিগ্রাম ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ১৪৮২টি হত দরিদ্র পরিবারের জীবন মান উন্নয়নে কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড এর নদী ও জীবন-২ প্রকল্প বাস্তবায়নে কাজ শুরু করি, তখন কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি বালুচরে কুমড়া চাষ হবে। তখন দল গঠন করে ৯’শ সদস্যকে বিভিন্ন সবজি চাষাবাদের পদ্ধতি বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বালিতে দুই থেকে তিন ফুট গর্ত করার পর ভালো মাটির স্তর দেখা যায়। দিনে দিনে তাঁরা হাজারো গর্ত করেন। গোবরসহ অন্যান্য জৈব সার দিয়ে গর্তগুলো ভরাট করে বীজ বপনের উপযোগী করে তাতে বীজ বপন করেন। এতে তারা উৎসাহিত হয়। এরপর পদ্মার চরে মিষ্টি কুমড়ার চাষে লেগে পড়েন। চারাগুলোই দিনে দিনে বেড়ে উঠে বালুচরকে সবুজ করে তোলে। এক সময় কুমড়াগাছের ডগায় হলুদ ফুল আসতে শুরু করে। কিষান-কিষানি পুরুষ ফুল ছিঁড়ে নিজ হাতে পরাগায়ণ করিয়েছেন। সেচ ও কম্পোস্ট সার দিয়েছেন নিয়মিত। দিনে দিনে বেড়ে উঠেছে অজ¯্র মিষ্টি কুমড়া।
কৃষি অফিসার সাবিনা বেগম জানান, রাজশাহী ও অন্যজেলাসহ স্থানীয় বাজারের মিষ্টি কুমড়ার চাহিদাও পূরণ হচ্ছে চরাঞ্চলে উৎপাদিত মিষ্টি কুমড়া দিয়ে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com