সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২২ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ ব্যাটিং দাপটে লঙ্কানদের চাপে রেখেছে ৪৬৫ রান করে

মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বুধবার ১৮ মে জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের টেস্টের চতুর্থদিনে ভাল একটা লিড নেওয়ার আশায় ছিল। কিন্তু সেটি পারেনি স্বাগতিকরা। আগের দিনের ৩ উইকেটে ৩১৮ রান নিয়ে খেলতে নেমে প্রথম ইনিংসে চতুর্থ দিন গুটিয়ে গেছে ৪৬৫ রানে। অর্থাৎ যোগ হয়েছে আরও ১৪৭ রান।

বাংলাদেশের অসাধারণ ব্যাটিং নৈপুণ্যে বড় রকমের সমস্যা তৈরি করেছেন ‘কনকাসন সাব হিসেবে নামা ডানহাতি পেসার কাসুন রাজিথা ৪ উইকেট নিয়ে। তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমের দারুণ দুটি সেঞ্চুরির পরও বাংলাদেশকে বড় লিড নিতে দিল না শ্রীলঙ্কা। তবে তাদের সেই স্বস্তিতে ধাক্কা হয়ে এলো শেষ বেলায় দুই উইকেট হারানো। তাই শেষ পর্যন্ত এগিয়ে থেকেই দিনটি শেষ করল স্বাগতিকরা।

চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন লঙ্কানরা শেষ করেছে ২ উইকেট হারিয়ে ৩৯ রান তুলে। প্রথম ইনিংসে ৬৮ রানের লিড নেওয়া বাংলাদেশ থেকে তারা পিছিয়ে ২৯ রানে। কাসুন রাজিথার বাউন্সারে ১০ নম্বর ব্যাটার শরিফুল ইসলাম মাটিতে পড়ে গেলেন। আহত হয়ে অবসরে গেলেন তিনি। তাতেই শেষ হলো বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। ৪৬৫ রানে থামলো টাইগাররা।

৪৫ বলে ২ চারে ১৮ রানে অপরাজিত থেকে বুধবার দিন শেষ করেন দিমুথ করুনারতেœ। তাইজুল ইসলামের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে নাইটওয়াচম্যান হিসেবে নামা লাসিথ এম্বুলদেনিয়া বোল্ড হলে শেষ হয় দিনের খেলা।

১৮তম ওভারের প্রথম বলে তাইজুলের টার্নে পরাস্ত হন বাঁহাতি এম্বুলদেনিয়া। পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করেন তিনি। ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বল ছোবল দেয় ২২ বলে ২ রান করা এম্বুলদেনিয়ার স্টাম্পে।

তাইজুলের হাত ধরেই প্রথম সাফল্য পায় বাংলাদেশ। ওপেনার ওশাদা ফার্নান্দোকে দুর্দান্ত ফিল্ডিংয়ে সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট করে দেন এই বাঁহাতি স্পিনার।

চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৩৯৭ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। ফলে বাংলাদেশের লিড দাঁড়িয়েছে ৬৮ রানের। পিছিয়ে থেকে চতুর্থ দিনের তৃতীয় সেশনে দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমেছে লঙ্কানরা।

এর আগে বাংলাদেশের ইনিংসকে টেনে নিয়েছেন মুশফিকুর রহিম। ভীষণ ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন তিনি। তুলে নিয়েছেন ক্যারিয়ারের ধীরতম সেঞ্চুরি। তিন অংকের ম্যাজিক ফিগার স্পর্শ করতে মুশফিকুর রহিম বাউন্ডারি হাঁকান মাত্র চারটি।

অবশেষে মুশফিকের ধৈর্যচ্যুতি ঘটে ২৮২ বল খেলে। ব্যক্তিগত ১০৫ রানে এম্বুলদেনিয়াকে সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন ডানহাতি এই ব্যাটার।

তার আগে খুব কাছে এসে সেঞ্চুরি মিস করেন লিটন দাস। মধ্যাহ্ন বিরতির পর কাসুন রাজিথার প্রথম বলেই শরীরের বাইরে খেলতে গিয়ে উইকেটরক্ষকের ক্যাচ হন তিনি। ১৮৯ বলে ১০ বাউন্ডারিতে ৮৮ রান করে সাজঘরের পথ ধরেন উইকেটরক্ষক এই ব্যাটার।

এরপর ক্রিজে আসেন আগের দিন ১৩৩ রানে আহত অবসরে যাওয়া তামিম ইকবাল। সুযোগ ছিল তারও ইনিংসটা বড় করার। কিন্তু রাজিথার পরের বলেই বোল্ড হয়ে যান তামিম। টানা দুই বলে দুই উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। সেখান থেকে ১২ ওভারের মতো কাটিয়ে ৩৬ রান যোগ করেন সাকিব-মুশফিক।

সাকিব স্বাচ্ছন্দ্যেই এগিয়ে যাচ্ছিলেন। ইনিংসের ১৪৫তম ওভারে আসিথা ফার্নান্ডোর একটি বাউন্সার আঘাত করে তার হেলমেটে। ফার্নান্ডোর পরের ওভারেই আউট হয়ে যান সাকিব।

ফার্নান্ডোর আরেকটি বাউন্সার কাঁধ সমান উচ্চতায় উঠলে ব্যাট চালিয়ে দেন সাকিব (২৫)। লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ক্যাচটি গ্লাভসবন্দী করেন লঙ্কান উইকেটরক্ষক ডিকভেলা।

এর আগে ৫ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে বেশি সময় নেননি মুশফিকুর রহিম। দিনের ১৬তম ওভারেই দেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে করে ফেলেছেন টেস্ট ক্রিকেটে ৫ হাজার রান।

৫ হাজারি ক্লাবের সামনে দাঁড়িয়ে মুশফিক আজ দিনের শুরুতে খানিক সময় নেন। অন্য প্রান্তে লিটন ছিলেন সাবলীল। দিনের দ্বিতীয় বলে তার ব্যাট থেকে আসে প্রথম চার। মুশফিককে প্রথম বাউন্ডারির জন্য সপ্তম ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। নিয়ন্ত্রিত সুইপে চার মেরে মাইলফলকের কাছাকাছি পৌঁছান তিনি।

পরে কাসুন রাজিথার করা দিনের ১৬তম ও ইনিংসের ১২৩তম ওভারে ফাইন লেগ থেকে দুই রান নিয়ে মুশফিক প্রবেশ করেন পাঁচ হাজারি ক্লাবে। যা করতে তার লাগলো ৮১ টেস্টের ১৪৯ ইনিংস। বিশ্বের ৯৯তম ব্যাটার হিসেবে মুশফিক এই ফরম্যাটে পাঁচ হাজার রান করলেন।

এর আগে দিনের শুরুটা ভালোই ছিল বাংলাদেশের। ১০৫ করে দলকে টানেন মুশফিকুর রহিম। ৮৮ রানের ইনিংস খেলেন লিটন দাস। ১১৩ রানে থামেন তামিম ইকবাল। সব মিলিয়ে ৪৬৫ রান করে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: শ্রীলঙ্কা প্রথম ইনিংস: ৩৯৭
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৭০.১ ওভারে ৪৬৫/৯ (আগের দিন ৩১৮/৩) (তামিম ১৩৩, মুশফিক ১০৫, লিটন ৮৮, সাকিব ২৬, নাঈম ৯, তাইজুল ২০, শরিফুল ৩ রিটায়ার্ড হার্ট, খালেদ ০*; বিশ্ব ৮-০-৪২-০, আসিথা ২৬-৪-৭২-৩, রমেশ ৪৫-১০-১১৯-০, এ¤॥^ুলদেনিয়া ৪৭-৯-১০৪-১, ধনঞ্জয়া ১৯-২-৪৮-১, রাজিথা ২৪.১-৬-৬০-৪, কুসল মেন্ডিস ১-০-৮-০)

শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ইনিংস: ১৭.১ ওভারে ৩৯/২ (ওশাদা ১৯, করুনারতেœ ১৮*, এম্বুলদেনিয়া ২; নাঈম ৯-৩-২১-০, খালেদ ১-০-৬-০, সাকিব ৬-৩-১২-০, তাইজুল ১.১-১-০-১)

আরেকটি উইকেট পেতে পারত বাংলাদেশ। আম্পায়ার আঙুলও তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন লাসিথ এম্বুলদেনিয়া। তাইজুল ইসলামের করা ষোড়শ ওভারের চতুর্থ বল পা বাড়িয়ে খেলেন এম্বুলদেনিয়া। কিন্তু টার্নের কারণে ব্যাটে ঠিকমতো খেলতে পারেননি। বল জমা পড়ে দ্বিতীয় সিøপের ফিল্ডারের হাতে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com