সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১১:২৪ পূর্বাহ্ন
স্পোর্টস রিপোর্টাস, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টেফোর ডটকম ॥ তামিম ইকবাল আশার আলো জাগিয়েছিলেন। এই চট্টগ্রাম টেস্টে চলছিল দুই বন্ধুর মধুর একটি লড়াই। কিন্তু ক্র্যাম্প করে আহত অবসর হওয়ায় সুযোগ পেয়ে যান মুশফিকুর রহিম। তা দারুণভাবেই কাজে লাগালেন এ অভিজ্ঞ ব্যাটার। বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ঢুকে গেলেন টেস্ট ক্রিকেটে পাঁচ হাজার রানের ক্লাবে।
চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন ৫৩ রানে অপরাজিত থেকে ফিরেছিলেন মুশফিক, ৫ হাজারে ঢুকতে প্রয়োজন ছিল ১৫ রান। তার আগে তামিম উঠে যান ১৩৩ রান করে, পাঁচ হাজার থেকে মাত্র ১৯ রান দূরে থেকে। সেই তামিমকে অপেক্ষায় রেখেই আজ চতুর্থ দিনের প্রথম সেশনে কাক্ষিত মাইলফলকে নাম তুললেন মুশফিক।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৬৮তম রান নেওয়ার মাধ্যমে এ মাইলফলক ছুলেন তিনি। কে আগে স্পর্শ করবেন ৫ হাজার? তামিম ইকবালের ক্র্যাম্প সুযোগ করে দেয় মুশফিকুর রহিমের সামনে। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে তিনিই হয়ে গেলেন ‘প্রথম।’
আজ দিনের ১৬ ও ইনিংসের ১২৩তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ফাইন লেগ থেকে দুই রান নেওয়ার মাধ্যমে এ ক্লাবে ঢুকেছেন মুশফিক। যা করতে তার লেগেছে ৮১ টেস্টের ১৪৯টি ইনিংস। সবমিলিয়ে তার ক্যারিয়ারে ২৫ ফিফটি ও সাত সেঞ্চুরিতে ৫ হাজার রান করলেন তিনি। বাংলাদেশের একমাত্র ব্যাটার হিসেবে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরিরও মালিক তিনি।
৫ হাজারের ১৫ রান দূরে থেকে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করেন মুশফিক। মাইলফল ছুঁতে কোনো তাড়া দেখা যায়নি তার ব্যাটিংয়ে। সময় নিয়েই এগিয়ে যান একটু একটু করে। এই ১৫ রানের দূরত্ব ঘোচাতে এ দিন বল খেলেন ৪৮টি।
যে শটে এলো রান, সেটি অবশ্য মুশফিক খেলতেই চাননি! আসিথা ফার্নান্দোর শরীর তাক করা শর্ট বলটি হাত উঁচিয়ে ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বল ছোবল দেয় গ্লাভসে। অনিচ্ছাকৃত সেই শটেই দুই রান নিয়ে ধরা দেয় তার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য।
বাংলাদেশের হয়ে ৪ হাজার রানে সবার আগে পৌঁছেছিলেন তামিম। ৫ হাজারের পথে দারুণ জমে ওঠে দুজনের দ্বৈরথ। দেশের হয়ে সবচেয়ে বেশি টেস্ট রানের রেকর্ডটি হাতবদল হয় কয়েক দফায়। এবার ৫ হাজার থেকে ১৫২ রানের দূরত্বে এই টেস্ট শুরু করেন তামিম, মুশফিকের প্রয়োজন ছিল ৬৮ রান। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে দুর্দান্ত ব্যাট করে সেঞ্চুরি পেরিয়ে এগিয়ে যান তামিম। মাইলফলকে তারই আগে পৌঁছে যাওয়া মনে হচ্ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার।
কিন্তু বিপত্তি বাধে প্রচ- গরমে তামিমের হাতে ক্র্যাম্প করায়। মঙ্গলবার চা বিরতির পর তিনি আর ব্যাটিংয়ে নামেননি। মুশফিক তখন ব্যাট করছিলেন ১৪ রানে। সেখান থেকে দিন শেষ করেন তিনি অপরাজিত ৫৩ রান নিয়ে। অবশেষে ড্রেসিং রমে থাকা তামিমকে দর্শক বানিয়েই তিনি ছুঁয়ে ফেললেন লক্ষ্য।
২০১০ সালে ক্যারিয়ারের পঞ্চম বছরে এক হাজার রান করেন মুশফিক। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এই চট্টগ্রামেই প্রথম ইনিংসে ৭৯ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৯৫ রান করে এক হাজার রান পূরণ করেন তিনি। যা করতে তার লেগে যায় ৩৯ ইনিংস। তার চেয়ে কম সময়ে হাজার রান করেছেন বাংলাদেশের আটজন ব্যাটার।
২০০৫ সালে লর্ডসে ১৮ বছর ১৭ দিন বয়সে অভিষেক হয়েছিল মুশফিকের। প্রথম হাজার রানের জন্য অনেকটা লম্বা সময় অপেক্ষা করতে হয় তাকে। হাজার ছুঁতে লাগে তার ৩৯ ইনিংস। এরপর প্রতিটি মাইলফলকে ছিলেন আশ্চর্য ধারাবাহিক। ১ হাজার থেকে ২ হাজার, ২ থেকে ৩ আর ৩ থেকে ৪, প্রতিটি হাজার ছুঁতে তার লাগে ২৮ ইনিংস। ৪ থেকে ৫ হাজার হলো ২৬ ইনিংসে।
১৪৯ ইনিংস লাগল তার ৫ হাজার হতে। তামিম এখন ১৯ রান দূরে আছেন, এটি তার ১২৬তম ইনিংস চলছে। দ্রুততম ৫ হাজার তাই তামিমেরই হবে নিশ্চিতভাবেই।
মুশফিককে নিয়ে টেস্ট ইতিহাসে ৫ হাজার রান এখন ৯৯ ব্যাটসম্যানের। তামিম হতে পারেন শততম।