বুধবার, ২০ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৪৫ পূর্বাহ্ন
বান্দরবান জেলা প্রতিনিধি:: বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের বলিপাড়া এলাকাটি অতি দুর্গম ও লামা উপজেলা সীমানা লাগোয়া একটি গ্রাম। বর্তমানে রমজুপাড়া, বলিপাড়াসহ দেবতা ঝিরি, বাদাম্যা ঝিরি, টংকাবতী এলাকার প্রাণ প্রকৃতি হুমকির মধ্যে পড়েছে। সবুজ বনায়ন ও ছড়া ঝিরির প্রাকৃতিক পাথর লুটপাটের কারণে ভোগৌলিক আকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে দুর্গম এ জনপদের। এই কারণে অনতিবিলম্বে গাছ ও পাথর পাচার বন্ধে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
জানা গেছে, প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম আসলেই প্রকৃতির উপর বনদস্যুদের এই নির্মমতা শুরু হয়। এভাবেই টংকাবতী থেকে শুরু করে বলিপাড়া পর্যন্ত এলাকার গাছ ও প্রাকৃতিক সৃষ্ট পাথর ধ্বংস করছে প্রভাবশালী বনদস্যু চক্র। বর্তমানে পাড়া কিংবা প্রাকৃতিক বনের অস্বীত্ব নেই বললেই চলে। ইতিমধ্যেই বহু গাছ ও পাথর লুট করে নিয়ে গেছে বনদস্যুর দল। পাড়ার বাসিন্দাদের অভিযোগ বেশ কয়েক বছর ধরে জেলা প্রশাসন ও বনবিভাগের অনুমতি পত্র (জোত পারমিট) ছাড়া হাতি দিয়ে গাছ টানাসহ অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। পরবর্তী ট্রাকযোগে পার্শ্ববর্তী চট্টগ্রাম জেলার পদুয়া-লোহাগাড়া হয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার হচ্ছে গাছ ও পাথর।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বান্দরবান সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়নের ৩০৯ নং দক্ষিণ হাঙ্গর, ৩১১ হরিণঝিরি, ৩১২ নম্বর পানছড়ি মৌজার বিভিন্ন স্থান থেকে দিনরাত সমানতালে প্রাকৃতিক বন কেটে নিয়ে যাচ্ছে সদর উপজেলার টংকাবতী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ আইন বিষয়ক সম্পাদক আবদুর রহিম কোম্পানীর সিন্ডিকেট। তাঁর দাবি, এসব গাছ কোনও বনায়নের নয়। টাকার বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানার জমির গাছ কাটছে তাঁর লোকজন। তবে কোনো অনুমতিপত্র দেখাতে পারেননি তিনি। এছাড়া পাথর তোলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, প্রতি বছর নির্দিষ্ট একটি সময়ে কাঠ পরিবহণের জন্য পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরি করা হয়। আর পুরো শুষ্ক মৌসুম জুড়ে ট্রাকে ভরে গাছগুলো রঙিমুখ-নাফারটিলা-চরম্বা সড়ক হয়ে লোহাগাড়ায় পাচার হয়। এভাবে গাছ ও পাথর পাচারের মাধ্যমে আবদুর রহিম কোম্পানী আধিপাত্য কায়েম করেছেন। এতে পানির উৎসগুলো মারাত্মক দূষিত হয়ে পড়েছে। বলিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা রেংরাও ম্রো বলেন- ৬-৭দিন ধরে কিছু শ্রমিক গাছ কাটে আর পাথর উত্তোলন করছে। হাঙ্গরখাল, দেবতাঝিরি, পুমপুরঝিরি, পানঝিরিসহ অন্তত আটটি খাল ঝিরি থেকে পাথর তোলা হচ্ছে। দিনে গাছ পাচার আর রাতে ট্রাক যোগে পাথর পাচার করা হয়।
বলিপাড়ার কার্বারী দনরুই ম্রো বলেন- এই পাড়ায় ২৭টি ম্রো পরিবার রয়েছে, পাড়ায় ৮টি পরিবারের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘর নির্মাণ করতে গাড়ি দিয়ে গতবছর ইট নিয়ে আসার কথা বলে আব্দুর রহিম কোম্পানি নামে এক ব্যক্তি রাস্তা তৈরী করেছিলেন। এখন সেই রাস্তা দিয়ে গাছ ও পাথর নিচ্ছেন তাঁর লোকজন। টংকাবতী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাংয়ং ম্রো বলেন- আগের বছর রঞ্জুপাড়া থেকে বলিপাড়া পর্যন্ত বুলডোজার দিয়ে পাহাড় কেটে রাস্তা তৈরী করা হয়েছে। এখন সেই রাস্তা দিয়ে অবৈধ গাছ ও পাথর পাচার হচ্ছে বলে এলাকার লোকজন অভিযোগ করেছেন।
কাঠ পাচারের বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বনবিভাগের টংকাবতী রেঞ্জ কর্মকর্তা মঈনুদ্দিন বলেন, কাঠ পাচারের খবর পেয়ে আমরা অভিযানে নেমেছি। বন ধ্বংসে যে-ই জড়িত থাকুক, অবৈধ কাঠ পাচারের সত্যতা পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বান্দরবান বিভাগীয় বন কর্মকর্তা হক মাহবুব মোর্শেদ বলেন, টংকাবর্তী এলাকায় গাছ কাটার অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। এই নিয়ে বন বিভাগ অভিযানও চালিয়েছে।
সংশ্লিষ্টদের মতে, দেশের এক বিশাল বনভূমির ভান্ডার পার্বত্যঞ্চল। সংরক্ষিত বন লুটের অভিযোগ অনেক পুরনো হলেও বর্তমানে পাড়াবন, প্রাকৃতিভাবে বেড়ে উঠা বনও ছাড়ছে না বনদস্যুর দল। অন্যদিকে বন বিভাগের নানা অজুহাতের কারণে বনদস্যুরা বার বার পার পেয়ে যান।