রবিবার, ১০ অগাস্ট ২০২৫, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন

দেশের ব্যাংক খাত খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে: গভর্নর

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর | ছবি;; ইন্টারনেট

নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, গত এক বছরে দেশের ব্যাংকিং খাত খাদের কিনারা থেকে ফিরে এসেছে। তিনি বলেন, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলেই এই খাতটি ধ্বংসের মুখ থেকে ফিরতে পেরেছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

রোববার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।

গভর্নর বলেন, গত বছরের আগস্টে সরকার দায়িত্ব নেয়ার সময় ব্যাংক খাত একেবারে খাদের কিনারায় ছিল।

তিনি বলেন, “আমাদের দু’টি প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল ম্যাক্রোইকোনমি স্থিতিশীল করা এবং আর্থিক খাত সংস্কার। এক বছরে পূর্ণ সংস্কার সম্ভব নয়, তবে আমরা প্রতিটি খাতে সংস্কার শুরু করেছি।”

ঋণ সংযোগ (লাইন অব ক্রেডিট) বজায় রাখতে দায়িত্ব নেয়ার পরপরই তিনি আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন বলে জানান।

গভর্নর বলেন, ‘আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি- আমরা আমাদের সব পাওনা পরিশোধ করব এবং আমরা তা করেছি। আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো হয়নি।’

গত এক বছরে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং রফতানি আয়ই ঋণ পরিশোধে বড় সহায়তা করেছে বলে মনে করেন তিনি। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন আহসান এইচ মনসুর।

তিনি বলেন, গত বছরের ১৪ আগস্ট থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক রিজার্ভ থেকে এক ডলারও বিক্রি করেনি, বরং বাজারে চাপ সত্ত্বেও প্রতি ডলার ১২২ টাকায় কিনেছে। ফলে বর্তমানে মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে এবং ভবিষ্যতে তা পাঁচ শতাংশের নিচে নামবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

গভর্নর আরো বলেন, ‘এখন দেশের ব্যালান্স অব পেমেন্টস উদ্বৃত্তে আছে, তবে বিনিয়োগ আকর্ষণে এখনো পিছিয়ে রয়েছে অর্থনীতি।’

‘নির্বাচনের আগে বড় বিনিয়োগ আসবে না, তবে আমরা নির্বাচন-পরবর্তী সময়ের জন্য ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি।’

কেন ব্যাংক কমিশন গঠন করা হয়নি- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘কমিশন করলে সিদ্ধান্ত নিতে ছয় থেকে নয় মাস সময় লাগত। তাই আমরা ব্যাংক খাত সংস্কার, বাংলাদেশ ব্যাংকের কার্যক্রম এবং বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধারে তিনটি টাস্কফোর্স গঠন করেছি।’

বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ উদ্ধার সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে এর জন্য ৮ থেকে ১০টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় প্রয়োজন বলে জানান তিনি।

গভর্নর জানান, বৃহৎ পরিসরে আইনি সংস্কার চলছে। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন, মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন সংস্কার (যাতে সম্পদ পুনরুদ্ধারের ধারা যুক্ত করা হচ্ছে) এবং বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার সংশোধনের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জবাবদিহিতা ও স্বাধীনতা বাড়ানো। এছাড়া দীর্ঘদিনের ঋণ খেলাপি মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ডিপোজিট ইনস্যুরেন্স আইন ও ঋণ আদালত আইন সংশোধন করা হবে।

অনিয়মের কারণে কোনো ব্যাংকের তারল্য সঙ্কট দেখা দিলে ব্যাংলাদেশ ব্যাংক যেন সেটি অধিগ্রহণ করতে পারে, এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক রেজল্যুশন অর্ডিন্যান্সেও সংশোধন আনার পরিকল্পনার কথাও জানান তিনি।

সবাইকে সতর্ক করে গর্ভনর বলেন, ‘আর কোনো ছাড় নয়। কোনো ব্যাংক যদি সঠিকভাবে চলতে না পারে, বাংলাদেশ ব্যাংক তা নিজের হাতে নেবে।’

সব ব্যাংক পর্যবেক্ষণের জন্য ‘৩৬০ ডিগ্রি মনিটরিং’ নামে একটি সংস্থা গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি।

এছাড়া বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্যাশলেস ব্যবস্থায় রূপান্তরের ওপর জোর দেন গর্ভনর। এজন্য কিউআর কোড ব্যবহারে উৎসাহ, ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের প্রসার, ক্ষুদ্র ঋণ (ন্যানো লোন), স্কুল পর্যায়ে ব্যাংকিং শিক্ষা, শিক্ষার্থীদের জন্য ২০০ টাকার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, আবাসন খাতে সংস্কার, রাজস্ব বিভাগ পুনর্গঠন এবং স্মার্টফোনের দাম কমিয়ে ডিজিটাল ব্যাংকিং বিস্তারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

সূত্র : ইউএনবি

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com