রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৩৯ পূর্বাহ্ন

জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়ে সমতা ফেরালো বাংলাদেশ

স্পোর্টস রিপোর্টার, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ রবিবার ৩১ জুলাই একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে স্বাগতিক জিম্বাবুইয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে নুরুল হাসান সোহানের দল। ফলে ৩ ম্যাচের সিরিজে এখন ১-১ সমতা। দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে জিম্বাবুয়েকে ৭ উইকেটে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচে টসে হেরে ফিল্ডিং ও দ্বিতীয় ম্যাচেও টস হার এবং ফিল্ডিং বাংলাদেশ। তবে অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান এবার আর পেসার দিয়ে আক্রমণ শুরু করলেন না। নিয়ে আসলেন স্পিনার। তাও নিয়মিত স্পিনার মাহদি হাসানকে নয়, মোসাদ্দেকের হাতে তুলে দিলেন বল।

টানা দ্বিতীয় দিনই দ্বিতীয় ম্যাচ। এবার দুটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামলো নুরুল হাসান সোহানের বাংলাদেশ দল। যথারীতি ৩ পেসার। তাসকিন আহমেদকে বাদ দিয়ে নামানো হলো হাসান মাহমুদকে। নাসুম আহমেদকে বাদ দিয়ে নেয়া হলো স্পিনার শেখ মাহদি হাসানকে।

মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ক্যারিয়ার সেরা ৫ উইকেট।

মঙ্গলবার ২ আগস্ট সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ হারারেতেই। মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতের ভয়াল অফস্পিনে ৩১ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়ে জিম্বাবুইয়ে। তবে সিকান্দার রাজার টানা দ্বিতীয় অর্ধশতকে শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানের লড়াকু পুঁজি পায় তারা। জবাব দিতে নেমে লিটন দাসের টি২০ ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ টি২০ ফিফটিতে ১৫ বল হাতে রেখেই ৩ উইকেটে ১৩৬ রান তুলে জয় ছিনিয়ে নেয় বাংলাদেশ।

ম্যাচের শুরুতেই নড়েচড়ে বসার জোগাড়, প্রথম ওভারে বল হাতে মোসাদ্দেক হোসেন! তবে সেটি কেবল চমকের শুরু। মোসাদ্দেক বিস্ময় উপহার দিলেন বোলিং দিয়েই। ম্যাচের বয়স ৭ ওভার হওয়ার আগেই তার নামের পাশে উইকেট ৫টি! বাংলাদেশের জয়ও যেন লেখা হয়ে গেল সেখানেই। শুরুতেই খাদে পড়ে যাওয়া জিম্বাবুয়ে পরে আর চেষ্টা করেও পারল না লড়াইয়ে ফিরতে।

ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে আগের ১১৪ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে কখনোই এক ম্যাচে ২ উইকেটের বেশি নিতে পারেননি মোসাদ্দেক। এই সংস্করণে ১৯ আন্তর্জাতিক ম্যাচে তার মোট উইকেট ছিল স্রেফ ৭টি। সেই তিনিই এবার নতুন বলে চার ওভারের টানা স্পেলে ২০ রানে নেন ৫ উইকেট।

মোসাদ্দেকের ঝলকের পর সিকান্দার রাজার লড়াইয়ে জি¤॥^াবুয়ে যেতে পারে ১৩৫ পর্যন্ত। লিটন দাসের ঝড়ো ফিফটির পর বাংলাদেশ সেই রান পেরিয়ে যায় ১৫ বল বাকি রেখে। মোসাদ্দেকের স্পিনে জিম্বাবুয়ের আঁধারে ডোবার শুরু ম্যাচের প্রথম বল থেকেই। বেশ বাইরের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন রেজিস চাকাভা। প্রথম ওভারের শেষ বলেই আরেকটি বড় ধাক্কা। আগের দিন ফিফটি করা ওয়েসলি মাধেভেরেও আউট অনেক বাইরের বলে আলগা শট খেলে।

টি-টোয়েন্টিতে দেশের হয়ে প্রথমবার বোলিং ওপেন করে প্রথম ওভারেই দুই উইকেট মোসাদ্দেকের। বাংলাদেশের আর কেউ প্রথম ওভারে নিতে পারেননি জোড়া উইকেট। এমন দুর্দান্ত কোনো বোলিং অবশ্য তিনি করেননি। রাতারাতি মুত্তিয়া মুরালিধরন, সাকলায়েন মুশতাক হয়ে ওঠেননি। তবে ক্রিকেটে যে রকম হয়, দিনটিই ছিল মোসাদ্দেকের। তার স্পিন জালে ধরা পড়তে থাকে একের পর এক বড় শিকার।

রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় সিøপে ধরা পড়েন ক্রেইগ আরভিন। ফিরতি ক্যাচ দেন শন উইলিয়ামস। মিল্টন শু¤॥^ার সুইপে হাসান মাহমুদের দুর্দান্ত ক্যাচে পূর্ণ হয় মোসাদ্দেকের পাঁচ।

তার তৃতীয় ওভারের প্রথম বল সিকান্দার রাজার ব্যাটের কানায় লেগে ফাঁকা সিøপ দিয়ে হয় চার। এক বল পর স্ট্রাইক পেয়ে বেরিয়ে গিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টা করেন উইলিয়ামস। তাকে এগোতে দেখে বল টেনে দেন মোসাদ্দেক। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পারেননি টাইমিং করতে, ফিরতি ক্যাচ নেন বোলার।

তার তৃতীয় ওভারের প্রথম বল সিকান্দার রাজার ব্যাটের কানায় লেগে ফাঁকা সিøপ দিয়ে হয় চার। এক বল পর স্ট্রাইক পেয়ে বেরিয়ে গিয়ে ছক্কায় ওড়ানোর চেষ্টা করেন উইলিয়ামস। তাকে এগোতে দেখে বল টেনে দেন মোসাদ্দেক। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান পারেননি টাইমিং করতে, ফিরতি ক্যাচ নেন বোলার। আবারও জিম্বাবুয়ের ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বল সিকান্দার রাজা। এই দুজনের জুটিতে শতরান পেরিয়ে যায় জিম্বাবুয়ে। দুজনে যোগ করেন ৬৫ বলে ৮০ রান।

বার্ল ৩১ বলে ৩ চারে ৩২ রান করার পর ২ বছর ৪ মাস বিরতি নিয়ে ফেরা ডানহাতি পেসার হাসান মাহমুদের বলে বোল্ড হয়ে গেলে জুটি ভাঙ্গে। পরের ওভারেই (১৮.২) সিকান্দারকে তুলে নেন বাঁহাতি পেসার মুস্তাফিজুর রহমান। সিকান্দার ৫৩ বলে ৪ চার ও ২ ছয়ে ৬২ রান করেন। ৫৭তম টি২০ খেলতে নেমে ১ হাজার রান পূর্ণ করেন তিনি। ৯৭৮ রান নিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন। শেষ পর্যন্ত ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৫ রানের পুঁজি পায় জিম্বাবুইয়ে।
৭ বলে দুই চারে ৮ রান করেন উইলিয়ামস। আগের ম্যাচে ঝড় তোলা সিকান্দার রাজা এবার অষ্টম বলে খুলতে পারেন রানের খাতা।

বোলিং ওপেন করে এই প্রথম ৫ উইকেট নিতে পারলেন বাংলাদেশের কেউ। তার ২০ রানে ৫ উইকেটের চেয়ে ভালো বোলিং আছে কেবল ইলিয়াস সানির (৫/১৩)। অষ্টাদশ ওভারে বার্লকে (৩১ বলে ৩২) বোল্ড করে জুটি ভাঙেন হাসান মাহমুদই।

রাজা ফিফটিতে পা রাখেন ৪৪ বলে। তবে এ দিন আর শেষ সময়ে তাকে ঝড় তুলতে দেয়নি বাংলাদেশ। মুস্তাফিজের সেøায়ারে বল আকাশে তুলে মুনিম শাহরিয়ারের হাতে ধরা পড়েন তিনি ৫৩ বলে ৬২ রান করে।

শেষ ওভারে শরিফুলের বলে লুক জঙ্গুয়ের ছক্কায় জিম্বাবুয়ে যেতে পারে ১৩৫ পর্যন্ত।

তবে ওই স্কোর নিয়ে লড়াই করা কঠিন। প্রথম ম্যাচের মতো অতটা না হলেও উইকেট ছিল মোটামুটি ব্যাটিং সহায়কই। জিম্বাবুয়ের নাটকীয় কিছু করার আশা অনেকটা শেষ করে দেন লিটন। ঝড়ো ফিফটিতে বাংলাদেশকে রান তাড়ায় এগিয়ে নেন লিটন দাস। ঘরোয়া ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিং করে জাতীয় দলে আসা ওপেনার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এখনও পুরোপুরি ব্যর্থ। ৫ টি-টোয়েন্টি খেলে তার মোট রান ৩৪।

ঘরোয়া ক্রিকেটে রান করে জাতীয় দলে ফেরা এনামুল হকও ব্যর্থ আরও একটি সুযোগ কাজে লাগাতে। তার ১৬ রান আসে ১৫ বলে।

তারপরও রান তাড়ায় বাংলাদেশকে নড়বড়ে মনে হয়নি, কারণ লিটন দাসের ব্যাটে ছিল স্ট্রোকের ছটা। মুগ্ধতা জাগানিয়া সব শটে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন তিনি স্রেফ ৩০ বলেই। এরপর আফিফ হোসেন ধ্রুবর সঙ্গে নাজমুল হোসেন শান্ত বাকি পথটা নির্বিঘেœই পাড়ি দিয়েছেন। দলীয় ৮১ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর চতুর্থ উইকেটে তারা অবিচ্ছিন্ন থেকে ৫৫ রান যোগ করেন মাত্র ৪৮ বলে। আফিফ ২৮ বলে ১ চার, ১ ছয়ে ৩০ ও শান্ত ২১ বলে ১ চারে ১৯ রানে অপরাজিত থাকেন। ১৭.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ১৩৬ রান তোলে বাংলাদেশ। ১টি করে উইকেট নেন এনগ্রাভা, উইলিয়ামস ও সিকান্দার। ৭ উইকেটের বড় জয়ে ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতায় ফিরেছে বাংলাদেশ।

২৮ বলে ৩০ রানে অপরাজিত থাকেন আফিফ, ২১ বলে ১৯ রানে শান্ত। মোসাদ্দেককে ব্যাটিংয়ে নামতে হয়নি। বোলিং দিয়েই তো তিনি নায়ক হয়ে গেছেন ম্যাচের চিত্রনাট্যে!

সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥
জিম্বাবুয়ে ॥ ২০ ওভারে ১৩৫/৮ (চাকাভা ০, আরভিন ১, মাধেভেরে ৪, রাজা ৬২, উইলিয়ামস ৮, শু¤॥^া ৩, বার্ল ৩২, জঙ্গুয়ে ১১*, মাসাকাদজা ৬, এনগারাভা ০*; মোসাদ্দেক ৪-০-২০-৫, মেহেদি ৩-০-১০-০, মুস্তাফিজ ৪-০-৩০-১, শরিফুল ৪-০-৩৭-০, হাসান ৪-০-২৬-১, আফিফ ১-০-১২-০)

বাংলাদেশ ॥ ১৭.৩ ওভারে ১৩৬/৩ (লিটন ৫৬, মুনিম ৭, এনামুল ১৬, আফিফ ৩০*, শান্ত ১৯*; মাসাকাদজা ৩-০-২২-০, এনগারাভা ৩-০-২৩-১, চিভাঙ্গা ১.৩-০-১৯-০, উইলিয়ামস ২-০-১৩-১, বার্ল ১-০-১২-০, রাজা ৩-০-১৮-১, মাধেভেরে ৩-০-১৮-০, জঙ্গুয়ে ১-০-৭-০)
ফল ॥ বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ ॥ ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা
ম্যান অব দা ম্যাচ ॥ মোসাদ্দেক হোসেন

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com