মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০২:০৭ অপরাহ্ন

ছয়টি প্রতিষ্ঠান বেশি দামে চাল বিক্রি করছে: খাদ্যমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক:: বাজার থেকে চাল কিনে তা প্যাকেটিং করে বেশি দামে বিক্রি ঠেকাতে সার্কুলার জারির চিন্তা-ভাবনা করছে সরকার। ছয়টি প্রতিষ্ঠান এই ধরনের কাজ করছে বলে জানিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার।

বুধবার (১ জুন) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান। তবে সেই ছয়টি প্রতিষ্ঠানের পরিচয় উল্লেখ করেননি মন্ত্রী।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ছয়টি প্রতিষ্ঠান ব্যাগিং করে একই চাল যেটা ৬০ থেকে ৬৫ টাকা পড়ছে, সেটা প্যাকেটজাত করে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় বিক্রি করছে। একই সঙ্গে আগাম টাকা মিলারদের দিয়ে আসছে, এমনকি প্যাকেটও দিয়ে আসছে নওগাঁ, দিনাজপুর, বগুড়া ইত্যাদি স্থানে। আমরা সেগুলোও বন্ধ করেছি।’

এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশের পর বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধভাবে মজুত ঠেকাতে রাজধানীসহ সারাদেশে অভিযান চালাচ্ছে বিশেষ টিম ও প্রশাসন। আজ বুধবার কারওয়ান বাজার, মিরপুরসহ বিভিন্ন বাজারে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।

সাধন চন্দ্র বলেন, ‘মোটা চাল ও ধানের দাম কিন্তু খুব একটা বাড়েনি। যেটা আটাশ, ঊনত্রিশ, শম্পাকাটারি, জিরাকাটারি যেটাকে নাজিরশাইল বা মিনিকেট বলে বিক্রি করে এটার দাম বেড়েছে। একটি বিষয় কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই যে বিপুল পরিমাণ চাল যখন এরা (কোম্পানিগুলো) তুলে নিচ্ছে, প্যাকেট করতে লাগে তিন টাকা, বিক্রি করছে ১০ টাকা ১৫ টাকা বেশি দামে। এর জন্য তারা বেশি দামে কিনে আনতেও সমস্যা নেই। এ কারণে যারা এদের কাছে চাল বিক্রি করছে তারা বাজারে ধানটাও প্রতিযোগিতা করে কিনছে। এরপরও কৃষক বলে তাদের লস হচ্ছে।’

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যারা প্যাকেট করে চাল বিক্রি করবে তারা দেশের বাজার থেকে কিনতে পারবে না বলে সার্কুলার জারি করা যায় কিনা পরিকল্পনা চলছে। তারা ৬৭ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে আমদানি করে প্যাকেট করবে। এটা আলোচনা চলছে। কালও আমাদের মিটিং হয়েছে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের সচিব নেই। তিনি ৮ জুন কাজে যোগ দেবেন। আমরা এটার সামারি রেডি করছি প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানোর জন্য। কৃষি সচিব, খাদ্য সচিব, বাণিজ্য সচিব ও শিল্প সচিব- এই চারজন মিলে একটি মিটিং করবে ভোক্তা অধিকারকে নিয়ে, উপায় বের করার জন্য।’

সার্কুলার জারির চিন্তা-ভাবনা এখনও ফাইনাল হয়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, তাদের যদি নিজস্ব মিল থাকে তারা সেখানে প্যাকেট করতে পারবে। কিন্তু বাজার থেকে চাল সংগ্রহ করে প্যাকেট করতে দেবো না। আমাদের মেসেজটা, যেখানে তারা প্যাকেট করে সেখানে দেওয়া হয়েছে। এরা ছাড়া তো কেউ প্যাকেট করে না। খুচরা কিনে তারা প্যাকেট করতে পারবে না। মিল মালিকরা নিজস্ব প্রডাকশন বিক্রি করতে পারবে।’

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘নিজস্ব মিল থাকলেও সে তার লাইসেন্সে যে পরিমান মজুদের বিধান আছে এর বাইরে মজুদ করতে পারবে না। মিলের যে পাক্ষিক ছাঁটাই ক্ষমতা, তার তিনগুণ মজুদ করতে পারবে। এর বাইরে থাকলে সেটা অবৈধ মজুদ।’

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র বলেন, ‘প্রত্যেক চালের বাজারে, আড়তে এবং মিলে এমনকি গ্রামাঞ্চলেও কৃষক ছাড়া কেউ যদি ধান কিনে মজুদ রাখে সেখানেও অভিযান চালানো হচ্ছে। এটা ধারাবাহিকভাবে চলবে। পাশাপাশি বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, মিল মালিক এবং চাল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মিটিং করছি। সেখানেও বলা হচ্ছে এবং মন্ত্রণালয় থেকে আমরা চিঠিও দিয়েছি। সেই হিসেবে কাজ চলছে। অনেকে বলার চেষ্টা করছেন বৃষ্টিতে ও বন্যায় ক্ষতি হয়েছে। মূলত কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, এটা বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে কৃষি কর্মকর্তা, খাদ্য কর্মকর্তা এবং ডিসিসহ এটার প্রকৃত চিত্র নির্ণয় করে কৃষি মন্ত্রণালয় ও আমাদের পাঠানোর জন্য।’

এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি এটাও বলেছি এই মজুতদারদের মধ্যে দল-নির্দল কোনো কিছুই দেখার বিষয় নেই। কারণ মজুতদাররাই একটি ভিন্ন দল। আমি তো নির্দেশ দিয়েছি ১৯৭৪ এর স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্টে মামলা করতে। সেখানে আমাদের ডিসি সাহেবরা একটু ভয় পান। আমি বলেছি এই অ্যাক্টেই মামলা করেন।’ মন্ত্রী বলেন, ‘তথ্য নিয়ে যদি দেখি, তাহলে আমদানি করবো। যদি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে দেখি এদের উচিত শিক্ষা দিতে ট্যাক্স কমিয়ে বর্ডার খুলতে হয়, তাই করবো। তাহলে শিক্ষা পাবে।’

সিন্ডিকেট সরকারের চেয়ে ক্ষমতাবান নয় জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এজন্যই আমরা গতকাল (মঙ্গলবার) থেকে অভিযান শুরু করেছি। এটাও ঠিক নির্বাচনের আগমুহূর্তে কেউ কেউ তো আছেন যে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে চায়। আমরা সচেতন আছি। আমরা অভিযান শুরু করেছি দেখা যাক। আশা করি এদের কন্ট্রোল করতে পারবো।’

সরকার করপোরেট ফাঁদে পড়েছে কিনা জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘না কোনো ফাঁদে পড়েনি। ফাঁদে ফেলতে চেষ্টা করছিল, আমরা রিকভার করছি।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com