বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫০ পূর্বাহ্ন

ছাগল চুরির অপবাদে দুই যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

খুলনা প্রতিনিধি॥ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মাটিয়াডাঙ্গায় ছাগল চুরির অপবাদে দুই যুবককে গাছে বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

রোববার (১৫ মে) সকাল ৮টার দিকে লোহাগাড়া থানার কোটাকোল ইউনিয়নের মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামে নির্যাতনের ঘটনা ঘটে।

ওই দুই যুবক মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল রশিদ শেখের ছেলে ফরিদ শেখ (৩০) ও একই গ্রামের আব্দুল রউফ শেখের ছেলে মো. তরিকুল ইসলাম (২৩)। তারা সম্পর্কে চাচাতো ভাই।

ফরিদ ও তরিকুল বলেন, শনিবার রাতে মাটিয়াডাঙ্গা গ্রামের হাই মুন্সির একটি ছাগল হারিয়ে যায়। ওই ছাগল চুরি সন্দেহে রোববার সকাল ৮টার দিকে কোটাকোল ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আবু কালাম মুন্সির নেতৃত্বে ৪-৫ জন কৌশলে আমাদের ডেকে নিয়ে যায় নান্নু মুন্সির দোকানের সামনে। কিছু বুঝে ওঠার আগে গাছের সঙ্গে বেঁধে বাঁশের লাঠি ও মুগুর দিয়ে বেধড়ক পেটায়। দুই ঘণ্টা ধরে ৭-৮ জন দফায় দফায় শারীরিক নির্যাতন চালায়।

নির্যাতিত তরিকুল জানায়, স্থানীয় ৭-৮ জন দুই ঘণ্টা ধরে শারীরিক নির্যাতন চালানোর পর বাড়ি থেকে খবর আসে ছাগল পাওয়া গেছে। তখন তাদের ছেড়ে দেয়। অসুস্থ অবস্থায় তাদের লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ভর্তি করা হয়।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, তরিকুল ও ফরিদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের ও সিগারেট দিয়ে পোড়ানোর চিহ্ন স্পষ্ট। তাদের যথাযথ চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মনিরুল মুসল্লি বলেন, আমি এই গ্রামে আত্মীয় বাড়ি বেড়াতে এসেছি। রোববার সকালে চায়ের দোকানে আসলে দেখি দুজন লোককে ধরে আনা হয়েছে। তারপর তরিকুল ও ফরিদকে সবাই মারধর করে।

ইউপি সদস্য কালাম মুন্সি বলেন, বেশির ভাগ গণমাধ্যমে এক পক্ষের বক্তব্য শুনে গ্রামের চোরদের পক্ষে নিউজ প্রকাশিত হচ্ছে। যা খুবই দুঃখজনক। আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম, তবে আমি তাদের মারিনি। ফরিদ ও তরিকুল গ্রামে শুধু নয়, আশপাশের গ্রাম থেকে বিভিন্ন সময় চুরি করে থাকে। এই নিয়ে অনেকবার সালিসও হয়েছে। তারা মাদক সেবন করে, যা গ্রামের যুব সমাজকে নষ্টের দিক নিয়ে যাচ্ছে। তাদের মাদক সেবন অবস্থায় ধরে আনা হয়। তাদের অনেক বার বোঝানোর পরও তারা নিজেদের সংশোধন করেনি।

কোটাখোল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাচান আল মামুদ জানান, স্থানীয়দের তথ্যের ভিত্তিতে শুনেছি তারা দুজনই মাদকসেবী ও বিভিন্ন অপকর্মের সঙ্গে জড়িত। কেউ অপরাধ করে থাকলে প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে। কিন্তু এভাবে আইন নিজের হাতে নিয়ে অমানবিক নির্যাতন করার অধিকার কারও নেই।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ আবু হেনা মিলন মারধরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, আইন কেউ নিজের হাতে তুলে নিতে পারেন না। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com