সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৫:৫৫ পূর্বাহ্ন

চেয়ারম্যানের রায়ে স্ত্রী-সন্তানের সামনে ব্যবসায়ীকে নির্যাতনের অভিযোগ

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীর বিরুদ্ধে তার নিজ বাড়িতেই মধ্যরাতে শ্যালিসের নামে স্ত্রী-সন্তানের সামনেই ব্যবসায়ীকে লোহার রড দিয়ে বেধড়ক নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।

গত মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) সন্ধ্যায় নির্যাতিত ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বাদি হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানকে প্রধান অভিযুক্ত করে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। নির্যাতিত ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান কালীগঞ্জ উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের দক্ষিন গোপাল রায় গ্রামের আনিছার রহমানের ছেলে।

লিখিত অভিযোগে প্রকাশ, আদিতমারী উপজেলার পলাশী ইউনিয়নের মহিষাশ্বহর গ্রামের মৃত জামাল উদ্দিনের মেয়ে ইছমোতারা বেগমের সাথে ৫ বছর আগে বিবাহ হয় বিকাশ ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমানের। বিয়ের পরে তাদের সংসারে আদম আলী(৩) নামে এক ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। গত ৩ জুলাই বাবার বাড়ি বেড়াতে যায় স্ত্রী ইছমোতারা। বেড়াতে গিয়ে ফিরে না আসায় মোবাইলে স্বামী-স্ত্রী মাঝে বিবাদ লাগে। এ ঘটনায় স্ত্রী ইছমোতারা বেগম পলাশী ইউপি চেয়ারম্যানকে গত শনিবার (১০ জুলাই) মৌখিক ভাবে বিচার প্রার্থী হন। ওই দিন রাতেই তার সন্তান অসুস্থতার কথা বলে ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমানকে নিজ বাড়িতে ডেকে নেন ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী। এরপর নিজ বাড়িতে মধ্যরাতে শ্যালিস বৈঠকে বসেন তিনি। বৈঠকে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে মোখলেছুরকে মারপিট ও স্ত্রীর নামে ব্যাংকে দেড় লাখ টাকার ডিপিএস করতে হবে বলে শ্যালিসে রায় ঘোষনা করেন চেয়ারম্যান।

রায় ঘোষনার পরে চেয়ারম্যানের নির্দেশে বৈঠকে স্ত্রী ও সন্তানের সামনে পাকা মেঝেতে ফেলে লোহার রড দিয়ে মোখলেছুরকে অমানুষিক নির্যাতন করেন তার মামা শ্বশুর প্রবাসী আব্দুস সাত্তার। বাবার আত্মচিৎকারে ৩ বছরের ছেলে আদম আলীর কান্নায় পুরো এলাকা প্রকম্পিত হলেও বৈঠকের রায় থেকে পিছপা হননি চেয়ারম্যানসহ কথিত মাতব্বররা।

এরপর মোখলেছুরের বাবাকে মোবাইলে ডেকে নেন চেয়ারম্যান। সেখানে জোরপুর্বক সাদা কাগজে মোখলেছুর ও তার বাবার স্বাক্ষর নিয়ে তাদের ব্যবহৃত মোটর সাইকেলটি আটক করেন। ডিপিএস জমা হলে তার রশিদ দেখিয়ে মোটর সাইকেলসহ স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার নির্দেশনা দেন। এ নিয়ে কাউকে কোন অভিযোগ দিলে মেরে ফেলার হুমকীও দেন চেয়ারম্যান শওকত আলী। আহত ব্যবসায়ী মোখলেছুরকে চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে আদিতমারী হাসপাতালে ভর্তি করেন তার স্বজনরা। সেখানে তিন দিন চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলীকে প্রধান অভিযুক্ত করে ৪ জনের বিরুদ্ধে আদিতমারী থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান।

আহত ব্যবসায়ী মোখলেছুর রহমান বলেন, পাকা মেঝেতে ফেলে লোহার রড দিয়ে এলোপাতারি মারপিট করে। এতে আমার পা ও কাঁধের হাড় ফেটে যায়। তাদের হাতে পায়ে ধরেও রক্ষা হয়নি। উল্টো সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়েছে চেয়ারম্যান। শরীরে রক্ত ঝড়ছে চিকিৎসক ডাকতে অনুরোধ করেছি, সেটাও তারা শুনেনি। আমাকে এক গ্লাস পানিও তারা খেতে দেয়নি। আমি মৃত্যুর নিকট থেকে ফিরে এসেছি। এ নির্যাতনের সুষ্ঠ বিচার দাবি করেন তিনি।

অভিযুক্ত মামা শ্বশুর প্রবাসী আব্দুস সাত্তার বলেন, স্ত্রীর নামে দেড় লাখ টাকার ডিপিএস করলে মোটর সাইকেল ফেরত দেয়া হবে। তবে রাতের আঁধারে মোখলেছুরকে বৈঠকে কে বা কাহারা মারপিট করেছে আমি দেখিনি।

অভিযুক্ত পলাশী ইউপি চেয়ারম্যান শওকত আলী বলেন, স্ত্রীকে নির্যাতন করায় তার শ্বশুর বাড়ির লোকজন প্রতিশোধ স্বরুপ মোখলেছুরকে একটু মারপিট করেছে। বিবাহ বিচ্ছেদ ঠেকাতে স্ত্রীর নামে ডিপিএস করতে বলা হয়েছে। ডিপিএস করলেই স্ত্রীসহ মোটর সাইকেলটি তারা নিতে পারবে। চেয়ারম্যান চাইলে মধ্যরাত নয়, যেকোন সময় নিজ বাড়িতে শ্যালিস বৈঠক করে সমস্যার সমাধান করতে পারেন। এ রায়ে কোন অপরাধ হয়নি বলেও বীরদর্পে স্বীকার করেন তিনি।

আদিতমারী থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, এ ব্যাপারে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com