রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৮:২২ অপরাহ্ন

চিন্তা লুকানো যায়; চরিত্র নয়!

রাজু আহমেদ : মানুষ চাইলেই চালাক হতে পারে কিন্তু ভান করে সহজ-সরল সাজতে পারে না। সময়ের আবর্তনে কপটতা ধরা পরে, মুখোশ উন্মোচিত হয়েই যায়। মানুষ খুব কম সময়েই নিজের স্বভাবচরিত্র আড়ালে রাখতে পারে। চলতে চলতে, কথা বলতে বলতে এমন আচরণ কুকুর-বিড়াল, পথচারী-ভিক্ষুকের সাথে করে ফেলে যেটা তার আসল পরিচয় তুলে ধরে! মানুষ চেষ্টা করলে চিন্তা লুকিয়ে রাখতে পারে; চরিত্র নয়!

অভিনয় করতে করতে আসল রূপ উন্মোচিত হয়েই যায়। মানুষ তার সহজাত প্রবৃত্তি লুকিয়ে রাখার শত চেষ্টা করেও একসময় ভেতরের রূপ, মনের চরিত্র কিংবা আড়ালে রাখা স্বভাব বাহিরে বের হয়েই আসে! ধরা পড়ে যায়! সে না চাইতেও সহস্র ফাঁদে সে নিজেকে চেনাতে বাধ্য হয়। চিনিয়ে যায়!

সহজ-সরলতার মত সুন্দর আর কিছুতেই নাই। মনের মধ্যে কপটতা রেখে মানুষ সততার অভিনয় করতে পারে কিন্তু সে স্বভাব স্থায়িত্ব পায় না। ঠকাতে ঠকাতে ঠগ নিজেই ঠকতে বাধ্য হয়। প্রকৃতির একটা ব্যালেন্স নীতি আছে। সে নীতিতে কেউ সারাজীবন ঠকে না এবং কেউ সারাজীবন অন্যকে ঠকাতেও পারে না। ঠকালে ঠকতে হবে আর জেতালে জিতেই যাবে।

কখনো কখনো ভুল মানুষের ছলনায় নিজেকে বিপদগ্রস্ত করতে পারি, কখনো মানুষ চিনতে না পেরে ভুল তরীতে যাত্রা করতে পারি, ভুল মানুষের জন্য চোখের জলে ভিজতে পারি কিন্তু একদিন সব শোধবোধ হয়! যে সারাজীবন ঠকেছে সে এমনভাবে জিতে নেয় যা দেখে নিজেও অবাক হয়! চারপাশ বিস্মিত হয়ে তাকায়। তখন এক অন্যরকম নিজেকে আবিষ্কার করে। আরও বহুদিন বাঁচতে ইচ্ছা হয়। সবকিছু ভালো লাগতে শুরু করে।

অন্যকে টেক্কা দিয়ে যেকোনভাবে এগিয়ে যাব বলে আমরা রোজ রোজ পিছিয়ে যাই। সততা গল্পে স্থান পায় আর অসততায় পেট ভরাই! সঞ্চয় করি ক্রোধ! যাতে বিনিয়োগ করে অপরাপর লোক! লোভের ভাগ দেবো না বলে, সব নিজের হবে বলে রাগ-ক্ষোভে পর করি নিজেদের আপনা লোক! সম্পর্ক গুটিয়ে দিয়ে শূন্যতায় করি কারাভোগ।

আমরা যদি ভাবি ঠকিয়ে জিতে যাব, কাউকে ঘুরিয়ে ফিরে যাব, কেড়ে নিয়ে যাব তবে কোথাও না কোথাও আটকে যাবই। কেউ না কেউ থামিয়ে দেবে। কারো কাছে না কারো কাছে হেরে যাব। একদিন সব ফেলে ফিরে যেতে হবে। সুতরাং মিছে অহম কিংবা ক্ষতের দহনে ক্ষতিগ্রস্ত না হই এমন সরলতা আমাদের পোশাক হোক।

আভিজাত্যে পোশাকে কেউ স্থায়ী ধনী হতে পারে না! বড়জোর এতে লোক দেখিয়ে চোখ তাতিয়ে দেয়ার রসদ থাকতে পারে কিন্তু একটা সময় সব খুলতে হয় এবং নিজের স্বরূপে ফিরতে হয়। যেটুকুতে কৃত্রিমতা নাই, যেখানে লোকিকতা নাই কিংবা যার মধ্যে দাম্ভিকতা থাকে না সেই সরলতায় আশপাশকে মুগ্ধ করতে হয়। তবেই তো সম্মান বাড়ে।

মনের মধ্যের ভাবনা-চিন্তা পরিস্কার রেখে তবে বাহ্যিকতা সাজাতে হয়। কাউকে ঠকানোর ষড়যন্ত্রের মধ্যে নিজের হারের ফাঁদগুলো সব সাজানোই থাকে। কখনো কখনো সাধারণ চোখ সেটা নাও দেখতে পারে! একটা ভুল, কারো মুখোশধারী স্বভাব জীবন থেকে জীবনের দূরত্ব বাড়িয়ে দেয়। মানবিকতা হারিয়ে দেয়। সব খুশি মিটিয়ে দেয়। নিশ্চয়ই সম্পর্কের এইরূপ কারোর জন্যই কাঙ্ক্ষিত নয়। অথচ অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল যাকে বলি সেটা তো কৃতকর্মের খেসারত!

রাজু আহমেদ। কলাম লেখক।
raju69alive@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution