বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ০৮:৪৮ অপরাহ্ন

চা শ্রমিকরা মানছে না ১৪৫ টাকা মজুরি, ফের আন্দোলন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ই-কণ্ঠ অনলাইন:: চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করার পর অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়ন। কিন্তু এ মজুরি মানছেন না চা শ্রমিকরা। তারা আবারও আন্দোলনে নেমেছেন।

ধর্মঘটের অষ্টম দিনে শনিবার (২০ আগস্ট) সরকারের সঙ্গে বৈঠকের পর ধর্মঘট প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু গতকালই সিলেটের চা শ্রমিকরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। শনিবার বিকেলেই সহস্রাধিক শ্রমিক সিলেট-বিমানবন্দর সড়কে বিক্ষোভ করেছেন। শ্রীমঙ্গলে শ্রম দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেন স্থানীয় চা শ্রমিকরা। বৈঠকের পর সিলেট মহানগরীর মালনিছড়া, হিলুয়াছড়া ও তারাপুর চা বাগানের শ্রমিকরাও এ সিদ্ধান্তকে বয়কট করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। রোববার (২১ আগস্ট) সকালেও তারা কাজে যোগ দেননি।

হবিগঞ্জ: হবিগঞ্জে চা বাগানের শ্রমিকরা দৈনিক মজুরি ৩০০ টাকার দাবিতে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছেন।

রোববার সকাল থেকে শ্রমিকরা বাগানে বাগানে সভা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ করছেন।

পূর্ণদিবস ধর্মঘটের ৯ম দিন ও দৈনিক ২ ঘণ্টা কর্মবিরতিসহ ১৩তম দিনে শ্রমিকরা বাগানে বাগানে ধর্মঘট পালন করছেন। ধর্মঘটের কারণে উত্তোলনকৃত চা পাতাগুলো ফ্যাক্টরিতে থেকে নষ্ট হয়ে গেছে। একইসঙ্গে গাছের চা পাতাগুলো বড় হওয়ায় উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে। তবে শ্রমিকরা তাদের দাবি আদায়ে অনড় রয়েছেন।

জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চান্দপুর চা বাগানের বাসিন্দা বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, দাবি আদায় করেই ঘরে ফিরবো।

এদিকে, শনিবার (২০ আগস্ট) রাতে হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহানের পক্ষ থেকে সভার আয়োজন করা হয়। এ সভায় চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হলে বাহুবল ও চুনারুঘাটের কয়েকটি চা বাগানের পঞ্চায়েত প্রধান অংশগ্রহণ করেন। অধিকাংশ নেতারা সভায় আসেননি।

সভায় জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান শ্রমিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেহেতু ১৪৫ টাকা মজুরি দিতে বলছেন, তাই আপনারা কাজে ফিরেন। প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্রীয় সফর শেষে দেশে ফিরে এসে আপনাদের সঙ্গে মজুরিসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন।
এর পরিপ্রেক্ষিতে উপস্থিত শ্রমিক নেতারা বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতৃবৃন্দের নির্দেশ ছাড়া আমরা কাজে যোগদান করতে পারবো না।

শনিবার (২০ আগস্ট) দিবাগত রাতে ফেসবুকে ভিডিও বার্তায় ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন পাল বলেন, শ্রমিকদের মজুরি ৩০০ টাকা বৃদ্ধির চলমান যে আন্দোলন, সেই আন্দোলন প্রত্যাহার করছি না। আমরা চালিয়ে যাব। স্পষ্ট করে বলতে চাই, মজুরি সংক্রান্ত চুক্তিতে আমি স্বাক্ষর করিনি। চা শ্রমিক ভাইবোন ও ছাত্র যুবকদের সঙ্গে কথা বলার পর বুঝতে পেরেছি, তারা ১৪৫ টাকার মজুরির সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নয়। তাই আমি অন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা করছি। রোববার থেকে প্রত্যেকটি চা বাগানের পুনরায় আমাদের কর্মবিরতি আন্দোলন সংগ্রাম চলবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের এই ন্যায্য দাবি সম্পর্কে অবগত। আলোচনার মাধ্যমে এর সিদ্ধান্তে আসতে বলেছেন। আমি প্রধানমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। মালিক প্রতিনিধির সঙ্গে আমরা ন্যূনতম সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি। আন্দোলন সংগ্রামে অতীতে ছিলাম, বর্তমানে আছি এবং ভবিষ্যতে থাকবো।

মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজারেও ১৪৫ টাকার মজুরি প্রত‌্যাহার করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শ্রমিকরা।

রোববার সাপ্তাহিক বন্ধের দিন থাকলেও নগদ টাকায় চায়ের কুড়ি উত্তোলন হয়ে থাকে। কিন্তু গতকাল বিকেলে চা শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ১৪৫ টাকা মজুরি প্রত্যাখান করায় আজ বাগান ফ্যাক্টরি বন্ধ রয়েছে। শ্রমিকরা চায়ের কুড়ি উত্তোলন থেকে বিরত রয়েছেন। স্থানীয় শ্রমিকরা গতকালের সিদ্ধান্ত প্রত্যাখান করে ৩০০ টাকা মজুরির দাবি করেন।

সাধারণ শ্রমিকরা বলছেন, ১৪৫ টাকা বৃদ্ধি এখন না করে আগে করলেই পারতো। এখন তাদের মানসম্মত মজুরি না দিলে তারা আন্দোলনে থাকবেন।

এ বিষয়ে ভাড়াউড়া চা বাগানের পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি নুর মোহাম্মদ জানান, সভায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে তা অনেকেই জানে না বা মৌখিক সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই।

তিনি বলেন, মানসম্মত মজুরি দিলেই কেবল আন্দোলন বন্ধ থাকবে।

মনু-ধলই ভ্যালির সভাপতি ও চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক ধনা বাউরী জানান, চাপিয়ে দেওয়া সিদ্ধান্ত তারা মানেন না। ন্যায্য মজুরি না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com