সোমবার, ১৮ অগাস্ট ২০২৫, ১১:৫০ অপরাহ্ন

খোলা মাঠে পাঠদান পদ্মার গ্রাসে স্কুল

দোচালা টিনের রান্নাঘরের সামনে তিন সারিতে চলছিল তিনটি শ্রেণির পাঠদান। দোচালা টিনের রান্নাঘরের সামনে তিন সারিতে চলছিল তিনটি শ্রেণির পাঠদান।

নাসির খান, শরীয়তপুর থেকে॥
দোচালা টিনের রান্নাঘরের সামনে তিন সারিতে চলছিল তিনটি শ্রেণির পাঠদান। ৩৬ জন শিক্ষার্থীর পাঠদান করছিলেন দুজন শিক্ষক। কাঠফাটা রোদ আর ভ্যাপসা গরমের অস্বস্তি তো আছেই, এর ওপর একসঙ্গে তিন শ্রেণির পাঠদান চলায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী কেউ কারও কথা ঠিক ভাবে শুনতে পারছিল না। বুধবার ১৩ নভেম্বর দুপুরে শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে ৫২ নম্বর পাইনপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে এমন চিত্র দেখা গেল। গত ৫ অক্টোবর সকালে একই ইউনিয়নের নদীর ওপারে আহাম্মেদ মাঝিকান্দি এলাকায় অবস্থিত স্কুল ভবনটি নদীভাঙনে বিলীন হয়ে যায়। এরপর থেকেই পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচে চলছে পাঠদান। বৃষ্টি বা রোদ বাড়লে স্থানীয় একটি মাদ্রাসার রান্নাঘরের ঝাঁপের নিচে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নেয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ১৯৭০ সালে স্থাপিত হয় বিদ্যালয়টি। তখন পাইনপাড়া এলাকাটি পদ্মা নদীর দক্ষিণ তীরে ছিল। পরে কয়েক দফায় নদীভাঙনের কবলে পড়ে এলাকাটি এখন পদ্মা নদীর মাঝামাঝি স্থানে একটি চরে রূপান্তরিত হয়েছে। স্থাপনের পর থেকে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা মেঝের ঘরেই চলছিল পাঠদানের কার্যক্রম। তবে ১৯৯৫ সালে বিদ্যালয়টি প্রথমবার ভাঙনের কবলে পড়ে। দ্বিতীয় দফায় ২০০৭ সালে ভাঙনের কারণে এটির জমি ও অবকাঠামো নদীতে বিলীন হয়ে যায়। এরপর ২০১৩ সালে চরপাইনপাড়ায় ৩৩ শতাংশ জমির ওপর পাঁচটি কক্ষ নির্মাণ করে বিদ্যালয়টির শিক্ষাকার্যক্রম চালু করা হয়। সেই পাঁচ কক্ষের ভবনটি ৫ অক্টোবর নদীতে বিলীন হয়।

বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণির নিশাদুল রায়হানা ও চতুর্থ শ্রেণির সামিয়া আক্তার বলে, ‘আমাদের স্কুল ভবনটি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। তাই নদী পার হয়ে খোলা আকাশের নিচে ক্লাস করতে হচ্ছে। রোদ ও বৃষ্টি হলে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। তাই আমাদের একটি বিদ্যালয়ের ভবন দরকার।’ শিক্ষার্থীদের অভিভাবক মজিবর ও ফাহিমা বেগম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবন নদীতে বিলীন হওয়ার পর আমরা অভিভাবকরা চিন্তায় আছি। আহাম্মেদ মাঝিকান্দি এলাকার আশপাশে কোনো বিদ্যালয় না থাকায় বাধ্য হয়ে শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়ে ওই বিদ্যালয়ে পড়ছে।’ বিদ্যালয়ের দপ্তরি রিপন শেখ বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন না থাকায় দাঁড়িয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের পানি দিতে হয়। বিদ্যালয়ের যাবতীয় কাজ করতে হচ্ছে।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘খোলা আকাশের নিচে অনেক কষ্ট করে শ্রেণি কার্যক্রম পরিচালনা করছি। শিক্ষার্থীদের পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ের ভবনটি যেন দ্রুত করা হয়, এই দাবি জানাচ্ছি।’ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আবুল কালাম মিয়া (শান্ত) বলেন, ‘নদীভাঙনের কারণে বিদ্যালয়ের ভবনটি ধসে পড়ে।

এরপর থেকে বাধ্য হয়ে নদী পার হয়ে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশের নিচেই পাঠদান করতে হচ্ছে। বিদ্যালয়ে ১২৩ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশিরভাগই আসেনি ভবন বিলীন হওয়ায়।’ জাজিরা সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো. মিহাজুর রহমান বলেন, ‘বিদ্যালয়ের ভবনটি নদীতে বিলীন হওয়ায় নদী পার হয়ে পদ্মা সেতু অধিগ্রহণকৃত সরকারি জমিতে খোলা আকাশে ও স্থানীয় একটি মাদ্রাসার রান্নাঘরের ঝাঁপ উঠিয়ে পাঠদান চলছে। তবে অস্থায়ীভাবে একটি টিনশেড করার পরিকল্পনা রয়েছে। সরকারি বরাদ্দের আবেদন করা হয়েছে। বরাদ্দ পেলে বিদ্যালয়ের ভবনটি করা যাবে।’

সার্বিক বিষয়ে জাজিরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাবেরী রায় বলেন, ‘আমি জাজিরায় যোগ দিয়েছি দুই সপ্তাহ হলো। কোনো স্কুল নদীতে বিলীন হয়েছে, তা কেউ আমাকে জানাননি। খোঁজ নিয়ে দেখব বিদ্যালয়টির বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com