মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৪৫ পূর্বাহ্ন
এস.এম. সাঈদুর রহমান সোহেল, খুলনা ব্যুরো::
নড়াইলের কালিয়া উপজেলা থেকে বড় সাইজের চারটি গরু নিয়ে এসেছেন খামারি বদিয়ার শিকদার। কিন্তু দু’ দিনেও একটি গরু বিক্রি করতে পারেননি তিনি। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ক্রেতারা আসছেন, দেখছেন, দাম জিজ্ঞাসা করছেন, চলে যাচ্ছেন। কিন্তু কিনছেন না। মূলত: ঘোরাঘুরি ক্রেতারা বাজার সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা নিচ্ছেন। এমই চিত্র নগরীর জোড়াগেটস্থ খুলনা বিভাগের সর্ব বৃহৎ কুরবানির পশুর হাটের। তবে, বিক্রেতারা বলছেন, হাটে এখনও মুল ক্রেতারা আসা শুরু করেনি, যারা এসেছেন- সখের বসে, বাজার সম্পর্কে ধারণা নিচ্ছেন। মূলত: ঈদৈর ২/১দিন আগেই বিক্রি শুরু হবে।
অপরদিকে ক্রেতারা বলছেন, খামারি ও ব্যাপারীরা প্রাথমিক ভাবে এখন অযৌক্তিক দাম হাকাচ্ছেন। যার সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। মূলত: বিক্রেতারাও ক্রেতাদের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করছেন। ফলে এখনও খুলনার এ হাট জমেনি। খুলনা সিটি কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় রোববার থেকে জোড়াগেটের এ পশুর হাটের উদ্বোধন করা হয়। খুলনার বিভিন্ন উপজেলা ও নড়াইলসহ পাশ্ববর্তী বিভিন্ন জেলা থেকে খামারি ও ব্যাপারীরা এ হাটে গরু-ছাগল নিয়ে আসছেন।
গরুর খামারি বদিয়ার শিকদার বলেন, তিনি চারটি গরু নিয়ে হাটে এসেছেন। এবার তাদের সবচেয়ে বড় ষাড়ের নাম রেখেছেন “আল্লাহর দান”। এর দাম চাইছেন আট লাখ টাকা। এর মাংস হবে প্রায় ২০ মণ। বয়স চার বছর। অপর ষাড়ের দাম চাইছেন পাঁচ লাখ টাকা। মাংস হবে প্রায় ১৪ মণ। অন্য দু’টি ষাড়ের দাম চাইছেন সাড়ে ৩ লাখ টাকা করে। মাংস পাওয়া যাবে প্রায় ১২ মণ করে। এ বড় ষাঁড়কে ঘিরে হাটে আগতদের ভিড় দেখা যায়। নড়াইলের অপর ক্রেতা আবুল খায়ের বলেন, তিনি নিজের খামারে পালিত ৩টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে বড় গরুটির ওজন সাড়ে ৭ মণ হবে। দাম চাচ্ছেন ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা। তবে একটিও বিক্রি হয়নি। ক্রেতারা এসে দেখে দাম শুনে চলে যাচ্ছেন।
কালিয়া ইসলামপুরের অপর বিক্রেতা আফতাব মোল্লা বলেন, তার ৫ মণ ওজনের গরুর দাম ১ লাখ ৫ হাজার টাকা চচ্ছেন। দামও বলছেন ক্রেতারা। তবে, তা সন্তোষজনক নয়। এ কারণে বাজারের অবস্থা খুব একটা ভালো বলে তার মনে হচ্ছে না। বিক্রেতা আব্দুল বারিক শিকদার তার ১১০ কেজি ওজনের ছোট গরুর দাম হাকিয়েছেন ৭০ হাজার টাকা। তবে, ৫৫ হাজার টাকা দাম বলছেন ক্রেতারা। কিন্তু হাটে ক্রেতার সংখ্যা কম হওয়ায় তিনি এখনও বিক্রি করেননি। আরও অপেক্ষা করছেন। কালিয়ার অপর খামারি মোহাব্বত শেখ বলেন, তিনি ১৭টি গরু নিয়ে এসেছেন। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় গরুটির ওজন সাড়ে ৬ মণ হবে। দাম চাচ্ছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। তবে, ক্রেতারা এসে দেখে চলে যাচ্ছেন। দামও কম বলছে ক্রেতারা। ফলে লোকসান হবে বলে আশংকা করছেন এ খামারি। বাজার দেখতে এবং দাম সম্পর্কে ধারণা নিতে পশু হাটে এসেছেন নগরীর খালিশপুরের বাসিন্দা নাজমুল হুদা বলেন, ব্যাপারীরা অনেক দাম হাকাচ্ছে। গরু হিসেবে যার দাম অনেক বেশি। ফলে এখনও কেনার মত হয়নি, গরুও কম। তাই এখনই কিনছেন না, ধারণা নিচ্ছেন।
অপর ক্রেতা মেহমুদ আলম বলেন, হাটে দাম সম্পর্কে ধারণা নিতেই হাটে এসেছেন। প্রাথমিক পর্যায়ে দাম কিছুটা বেশি মনে হচ্ছে। এ কারণে এখনই কিনছেন না। আরও ২/১ দিন দেখেই কিনবেন বলে জানান।
এদিকে, কুরবানির পশুর এ হাটে ক্রেতা-বিক্রেতাদের পাশাপাশি সাধারণ দর্শনার্থীরাও আসছেন। তারাও বাজার ঘুরে গরু দেখছেন। তবে, এখন ক্রেতা-বিক্রেতার চাইতে কেসিসি’র বাজার পরিচালনা কমিটি এবং আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকই বেশি।
দর্শনার্থী এমএ আজিম বলেন, পশুর হাটে প্রচুর গরুর আমদানি এবং ক্রেতা-বিক্রেতাদের পদচারণায় ভরে না উঠা পর্যন্ত কেনা-বেচাও খুব একটা জমবে না। ঈদের ২/১ দিন আগেই মূলত: শহরের এ হাট জমে উঠবে। কারণ: এখন নেতারা শুধু দেখে ধারণা নিতেই হাটে আসছেন। এছাড়া শহরে গরু রাখার জায়গারও সমস্যা রয়েছে অধিকাংশ বাড়িতে। ফলে শহরের বেশির ভাগ ক্রেতাই ঈদের ২/১ দিন আগে পশু ক্রয় করবেন।
হাট পরিচালনা কমিটির আহবায়ক ও কেসিসির ২১ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ও মোঃ শামসুজ্জামান মিয়া স্বপন বলেন, জোড়াগেট কোরবাণীর হাটে পশু আসতে পথে কোথাও যাতে ব্যাপারীরা বাধার মুখে না পড়ে সে ব্যাপারে সর্তক নজর রাখা হবে। করোনা সংক্রমণ রোধে সঠিকভাবে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলা হবে।
খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, কুরবানির হাটে করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি এবং সরকারি নিদের্শনা মেনে পশু ক্রয় ও বিক্রয় করতে হবে। হাটে প্রবেশ পথে জীবাণুনাশক ছয়টি টানেল স্থাপন করা হয়েছে এবং প্রবেশের সময় মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামুলক করা হয়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা পশুর হাটে প্রবেশ করতে পারবেন না।
এবারে পশুর হাটে সার্বক্ষণিক সিসি ক্যামেরা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চিত করাসহ জাল নোট শনাক্তকরণ, কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে হাসিল আদায়সহ সকল আধুনিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া সার্বক্ষণিক পশু ও হাটে আগতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ ও র্যাবের সমন্বয়ে ২৪ ঘন্টা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।