সোমবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৭ অপরাহ্ন

ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের উদাসিনতা, লালমনিরহাটে ভেজাল ঔষধে সয়লাব

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: লালমনিরহাট জেলায় ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের উদাসিনতায় সর্বত্রই ভেজাল ঔষধে ছড়াছড়ির অভিযোগ উঠেছে। জেলা শহরের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন সেক্সুয়াল ওষুধে সয়লাব হয়ে পড়েছে। এজন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তররের লালমনিরহাট জেলার সুপার হাফিজুর রহমানকে দুষছেন সুশিল সমাজ ও সংশ্লিষ্টদের অনেকেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জেলার ৫টি উপজেলায় (লালমনিরহাট সদর, আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম) প্রায় ২ হাজার ঔষধের ফার্মেসী রয়েছে। তার মধ্যে প্রায় ১১ শত ঔষধ ফার্মেসীর ড্রাগ লাইসেন্স থাকলেও বাকী ঔষধ ফার্মেসী গুলো সবই অবৈধ ভাবে কমিশন ভিত্তিতে চলছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। জেলার আনাচে কানাচে প্রায় ঔষুধের দোকানে ও গালামাল দোকানেও পাওয়া যাচ্ছে ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের অনুমোদন বিহীন ভেজাল ও সেক্সুয়াল ঔষুধ। ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে বাহারি নামে ও সুন্দর সুন্দর লেবেল লাগিয়ে বিক্রয় করা হচ্চে যৌন উত্তেযক এই সব অবৈধ ওষুধ। ঔষধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন বিহীন ওয়ান ফ্রুট সিরাপ, জিনসা, টা” ফ্রুট সিরাপ ও ভিগোসা নামক এসব যৌন উত্তেযক ঔষুধ বাহারী নামে বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন রেজিস্টার্ড ডাঃ বলেন, অনুমোদন বিহীন এসব যৌন উত্তেজোক ঔষধ মানব দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যার প্রভাবে শরিরে নানা উপসর্গ দেখা দেয়। আর এসব যৌন উত্তেজোক ঔষধ উঠতি বয়সের যুবক, রিক্সা ও ভ্যান চালক, অসচেতন নাগরিক ক্রয় করতে দোকান গুলোতে ভির করছে। জেলা শহরের তালুক খুটামারা, বত্রিশ হাজরীর ঈদ গাহ মাট সংলগ্ন বাবু, শহীদ সাজাহান কলোনীর বাদল ও রেল বাজার এলাকার শাহ আলম এই তিনজন সিন্ডিকেট করে পুরো জেলায় গালামাল ও ঔষুধের দোকানে সরবরাহ করছে বলে একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে। শহীদ শহ জাহান কলোনীর বাদল এর সাথে পরিচয় গোপন করে ওষুধ ক্রয়ের জন্য গালামাল দোকান্দার সেজে ফোন করে ওয়ান ফ্রুট সিরাপ, টা” ফ্রুট সিরাপ, জিনসা ও ভিগোসা সিরাপ ক্রয় করতে চাইলে তিনি বলেন, আমার কাছে ওয়ান ও টা” ফ্রুট সিরাপ আছে। আপনি চাইলে আপনার দোকানে পৌছে দিতে পারি।( কল রেকর্ড সংগ্রহিত)।

বাংলাদেশ কেমিষ্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হামিদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ড্রাগ সুপার ঠিক মত অফিস করেন না। এই কারনে লালমনিরহাট জেলায় এই ধরনের ভেজাল ঔষধে ছেয়ে গেছে। এ সব কিছুই হচ্ছে শুধুমাত্র ড্রাগ সুপার আর সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদাসিনতায়। এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলার ড্রাগ সুপার হাফিজুর রহমানের সাথে কথা বলতে তার অফিসে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর চাইলে অফিসটির অফিস সহায়ক ইউনুস জেলার ড্রাগ সুপারের নম্বর না দিয়ে এ প্রতিনিধির সাথে খারাপ আচরন করেন। পরে ২২ জুন সকালে লালমনিরহাট ঔষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর গুগল সার্চ করে অফিসের সুপারের নাম্বার পাওয়া যায়। সেই নাম্বারে কল করে তার কাছে গতকালের অফিস সহায়কের খারাপ ব্যবহারের বিষয় এবং তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি ক্ষমা চান এবং বলেন, আমি ২ মাস হয় এখানে যোগদান করেছি। সপ্তাহে ৭ দিনের ৪ দিন কাজ করার সুযোগ পাই তাই ঠিকমত মনিটরিং করতে পারিনা। তবে আপনারা সহযোগিতা করলে আমি ভেজাল ঔষুধ এর রিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিব।

আর জেলায় অবৈধ ফার্মসির বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন,আমি অডিট শুরু করেছি। যাদের ড্রাড লাইসেন্স নাই তাদেরকে ১ বছর সময় দিচ্ছি। তবে মাসিক মাসোহারা সিস্টেমের কথা তিনি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, কোন ফার্মেসির মালিক বলতে পারবে না আমি কারো কাছে টাকা নিয়েছি। তবে বাংলাদেশ কেমিষ্ট এ্যান্ড ড্রাগিস্ট সমিতির লালমনিরহাট জেলা শাখার সভাপতি আব্দুল হামিদ এর অভিযোগ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এ ব্যাপারে সিভিল সার্জন নির্মলেন্দু রায় বলেন, অনুমোদন বিহীন যে কোন ঔষধ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। যারা এই ভেজাল ওষুধ বিক্রির সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে তথ্য পেলে আমরা ব্যাবস্থা নিব।

এ ব্যাপারে জেলার সচেতন মহল মনে করে এখনি এই ভেজাল ঔষধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে উঠতি বয়সের যুবকসহ জেলার সকল মানুষের বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com