রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ০৭:২১ অপরাহ্ন

ইসলামে নির্দিষ্ট খাতে যাকাত আদায়ের অপরিহার্যতা!

রাজু আহমেদ।।

।।এক।।
যাকাত আদায়ের জন্য আল্লাহ নির্ধারিত আটটি খাত আছে। পবিত্র কুরআনের সূরা আত-তাওবার ৬০ নাম্বার আয়াতে যাকাত বণ্টনে আটটি খাত আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করেছেন। এই খাতগুলো সরাসরি কুরআন দ্বারা নির্দিষ্ট এবং যেহেতু তা আল্লাহর নির্দেশ, তাই এর বাইরে যাকাত বণ্টন করলে তা ইসলামী শরিয়তসম্মত হয় না।

ফকির (যার কিছুই নেই), মিসকীন (যার নেসাব পরিমাণ সম্পদ নেই) , যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী (যার অন্য জীবিকা নেই) , নওমুসলিমদের (আর্থিক সংকটে থাকলে), ক্রীতদাস (মুক্তির উদ্দেশ্যে), ধনী সম্পদশালী ব্যক্তি যার সম্পদের তুলনায় ঋণ বেশি (স্বদেশে ধনী হলেও বিদেশে) আল্লাহর পথে জেহাদে রত ব্যক্তি, মুসাফির (যিনি ভ্রমণকালে অভাবে পতিত) হাদিসমতে, এগুলো ফরয সাদকাহের খাত, এবং নফল সাদকাহ এই আট খাতেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এর পরিসর আরো প্রশস্ত।

।।দুই।।
বিদ্যানন্দকে যাকাত দিলে যাকাত আদায় হইবে কী হইবে না সে বিতর্কে শুরুতেই যাচ্ছি না। তবে….

ঘুষের টাকা, সুদের টাকা, জোচ্চুরি-বাটপারি করে কামানো টাকা, বোন-ফুপুর অধিকার বঞ্চিত করে সে সম্পদের টাকা, গরীবকে পিষে আদায়কৃত টাকা, দু’টাকার পণ্য ১৩ টাকায় বিক্রি করে সঞ্চিত টাকা, শ্বশুর বাড়ি থেকে আদায়কৃত যৌতুকের টাকা, স্ত্রীকে মোহরানা বঞ্চিত করে জিতে নেওয়া টাকা কিংবা যে সকল পেশা ও লেনদেন ইসলাম সমর্থন করে না সেখান থেকে কামাইকৃত টাকা কোথায় দান করলে যাকাত আদায় হবে?-সেইটা জানতে খুব ইচ্ছা হয়।

ক্লাসে ঠিকঠাক না পড়িয়ে প্রাইভেটে বাধ্য করা কিংবা অফিসের ফাইল আটকিয়ে দু’পয়সা কামাই করা নতুবা রাজনৈতিক পরিচয়ে গরীব জনগণের অধিকার চুষে খাওয়া-এ দেশে যাকাত আদায় যাদের ওপর আবশ্যিক হয় সেই তাদের ৮০-৮৫% মহারথীর লাঘব-বোয়াল তো এই শ্রেণীর। তাদের আদায়কৃত যাকাত কোথায় সমর্পণ করলে এবং কীভাবে দিলে সেটা রীতি মাফিক হয়-এখানে এই ফতোয়া দেয় কারা?

এদেশের এমন কোন পীস্সাব নাই, যাদের ওপর বিপুল পরিমান অর্থ যাকাত আদায়যোগ্য হয় না। তাঁরা কোন মুরিদকে, কোরআন নির্ধারিত ৮ খাতের কোন কোন খাতে যাকাত আদায় করেন? ইসলামে দানকে গোপন রাখার নির্দেশনা রয়েছে কিন্তু যাকাত আদায় করতে হবে উৎসব করে। তেমন আয়োজন কোথায় হয়? কই, সেরকম উৎসব তো চোখে পড়ে না!

যারা যাকাত আদায় হিসেবে যাকাতের কাপড় দেন, তাদেরকে কী বোঝানো হয়েছে যে, যাকাত আদায়ের পদ্ধতি হিসেবে এর চেয়ে অধিক পূণ্যের পদ্ধতি রয়েছে।

সৎ কামাই থেকে যাকাত আদায় করতে হবে। অসৎ পয়সায় যাকাত আদায়কারীকে সে ইবাদাত পরকালীন মুক্তি দিতে পারবে না। রবের ঘোষণা অনুযায়ী সম্পদের পবিত্রতা ও সম্মৃদ্ধিও সাধন হবে না। তবুও যেহেতু গরীবদের সাময়িক উপকার হচ্ছে সেহেতু পুরোপুরি অনুৎসাহিত না করে তাদেরকে ইসলাম-ইমান ও নৈতিকতা বোঝাতে হবে। আর আলেমদরকেই জনতাকে শোধরানোর ভূমিকা নিতে হবে। অর্থাৎ যারা সঠিকভাবে জানেন তাদেরকেই অন্যান্যদেরকে জানাতে হবে। তবে যিনি আহ্বান করবেন, প্রারম্ভেই তাকে মুত্তাকী হতে হবে। কেননা সে ওয়াজে মানুষের অন্তরে কোন উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে পারে না, যার আমল কথকের মধ্যে থাকে না।

।।তিন।।
কোরাআনে বর্ণিত যাকাত আদায়ের খাতসমূহের বাইরে কোন আলেম যদি নিজস্ব ফতোয়া দিয়ে তার নিজস্ব বানানো খাতে যাকাত চায় তবে সেখানে যাকাত দিলে তা আদায় হবে না। নিজস্ব কোন তহবিলে যাকাতের অর্থ চাইলে এবং সেটা যদি কোরআন বর্ণিত খাতের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় তবে পূর্ণতা আসবে না। সেখানে দান হতে পারে কিন্তু যাকাত হবে না। ফরয সদকাহের খাতে যাকাত আদায় করা অবশ্য পালনীয়। নফলের দিকে যেতে চাইলে সেটা ফরয ডিঙিয়ে বা অস্বীকার করে যাওয়া যাবে না। উচিত নয়।

বিদ্যানন্দকে যাকাত দেওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। মানবিকতা দেখাতে চাইলে ওখানে দান করুন কিংবা ডোনেট করুন। যাকাত আল্লাহ নির্ধারিত খাতেই দিতে হবে। এটা শরঈ ইবাদত।

রাজু আহমেদ। প্রাবন্ধিক।
raju69alive@gmail.com

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Titans It Solution