রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৩৮ পূর্বাহ্ন

অনাবৃষ্টিতে আলু চাষি-ভাটা মালিকদের ব্যাপক ক্ষতি

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: শীত মৌসুমের শেষ দিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের আলু চাষি ও ইটভাটা মালিকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শনিবার সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। এর ফলে লালমনিরহাট জেলার ৬ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এদিকে লালমনিরহাট গোটাজেলার ৩৬টি ভাটার কাঁচা ও শুকনো ইটগুলো পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।

ইটভাটার মালিকেরা জানান, এভাবে যদি আরও কয়েকদিন বৃষ্টি চলতে থাকে তাহলে ভাটা চালু রাখা যাবে না। অন্যদিকে আলু চাষিরা বলছেন, এমনিতে বাজারে আলুর দাম কম। এর মধ্যে মাঘ মাসে হঠাৎ বৃষ্টি আলুচাষিদের সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। জেলায় আর কয়েকদিনের মধ্যে শুরু হবে আলু তোলার ব্যস্ততা। তাই আলু চাষিরা এখন এই আলু নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। তবে আলুর ভালো দাম না পেলে কৃষকেরা এই পেশা থেকে বিমুখ হয়ে পড়বেন—এমনটাই মনে করছেন কৃষি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ি, কুলাঘাট, মোগলহাটসহ ৯টি ইউনিয়নের আলুর জমিতে পানি থইথই করছে। এবার চড়া দামে সার ও বীজ কিনে আলু চাষ করছেন আলুচাষিরা। তা ছাড়া তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে বেড়েছে জমিতে হাল চাষের খরচ। এত কিছুর পরেও বাম্পার ফলনের আশায় আলু রোপণ করেছেন কৃষকেরা। কিন্তু শীতকালে হঠাৎ অনাবৃষ্টি তাঁদের সব আশা নষ্ট করে ফেলেছে।

সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মফিজুল্ল্যাহ বলেন, ‘এবার আলু চাষে আমাদের মতো চাষিদের খরচ অনেক বেশি হয়েছে। কেননা, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এবার সার ও বীজ কিনতে হয়েছে চড়া দামে। তেলের দাম বাড়ায় অন্যান্য খরচ বেশি পড়েছে। এই মৌসুমে আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এবারে আমার প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কিন্তু যখন আলু তোলার সময় ঘনিয়ে এসেছে ঠিক সেই সময় হঠাৎ বৃষ্টির ফলে আলুর জমিতে পানি জমে থইথই করছে। এতে আলু জমিতে পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আদিতমারী উপজেলার আলুচাষি মনোয়ারুল হক বলেন, ‘এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবারে বিঘাপ্রতি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি খরচ গুনতে হয়েছে। এত কিছুর পরেও দুই টাকা লাভের আশায় আলু রোপণ করেছি। এদিকে বাজারে আলুর দামও কম। এই দামে খরচ ওঠানো সম্ভব নয়। দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা এই পেশা থেকে বিমুখ হয়ে পড়বেন বলে জানান এই কৃষক।

লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ জানান, এ বছর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে জেলার ৬হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি পুরোপুরি নিমজ্জিত এবং বাকি জমিগুলো আংশিক নিমজ্জিত আছে। জমি থেকে পানি সরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।

এদিকে আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের টেপাটারী ভাটাপাড়া এলাকার এলএমবি ও মেসার্স সান ব্রিকস ভাটায় দেখা যায়, রোদে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে। এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে গলে নষ্ট হয়ে গেছে।

এলএমবি ব্রিকসের ম্যানেজার মোঃ শেফাউল ইসলাম দুলাল বলেন, গত দুইদিনের এই বৃষ্টিতে আমাদের ১০ লাখ শুকানো ইটের ক্ষতি হয়েছে। যার মুল্য প্রা ২০-২৫ লাখ টাকা হবে।

মেসার্স সান ব্রিকসের মালিক এমদাদুল হক এন্তা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমার ভাটার ১৫-২০ লাখ টাকা ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন, আবহাওয়া যদি এমন চলতে থাকে তাহলে এ বছর আর ভাটা চালু করা সম্ভব হবে না।

লালমনিরহাট জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে জেলার ৩৬টি ভাটারই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়লার দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ, আর শ্রমিক ও মাটির দামও বেশি। এত কিছুর মধ্যেও ভাটাগুলো আমরা সচল রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় আমাদের ভাটা মালিকদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেলো। এই ক্ষতি অনেক ভাটা মালিক পুষিয়ে উঠতে পারবে না। একারনেই হয়তো তাদের ভাটা গুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com