বৃহস্পতিবার, ২১ অগাস্ট ২০২৫, ১০:০২ পূর্বাহ্ন
জিন্নাতুল ইসলাম জিন্না, লালমনিরহাট প্রতিনিধি:: লালমনিরহাটে এক ছাত্রীকে এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা মওকুফ করার কথা বলে কু-প্রস্তাব দেয়ার অভিযোগ উঠেছে রবিউল আলম নামের এক অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। কু-প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় ওই ছাত্রীকে পরীক্ষা দিতে দিবেন না বলেও অভিযোগ উঠেছে ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ছাত্রীর বাবা ওই অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
রবিউল ইসলাম লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে দায়িত্বরত আছেন। গত ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগের দোসর অধ্যক্ষ সারওয়ার আলম পালিয়ে যাওযার পর তিনি ভারপ্রাপ্ত অধক্ষের দায়িত্ব পালন করছেন।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে জানা যায়, ভুক্তভোগী ছাত্রী পারভীন আক্তার একজন গরীব ও অসহায় পরিবারের সন্তান। সে মহিষখোচা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের চলতি ২০২৫ সালে অনুষ্ঠিত এইচএসসির একজন পরীক্ষার্থী। তার বাবা তিস্তা নদী ভাঙ্গন কবলিত একজন অসহায় দিনমুজুর। তিনি দিনমুজুরের কাজ করে সংসার চালায়। এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপ করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। যা পারভীনের বাবার পক্ষে এতো টাকা দেয়া অসম্ভব। তাই পারভীন তার এইচএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপে টাকা কম নেয়ার জন্য অধ্যক্ষ বরাবরে একটি আবেদন করেন। আবেদনের প্রেক্ষিতে অধ্যক্ষ রবিউল আলম তাকে ফোনে যোগাযোগ করতে বলেন। প্রেক্ষিতে গত ৯ মার্চ ছাত্রী পারভীন আক্তার ইফতারের পর তার পরিবারের উপস্থিতিতে অধ্যক্ষ রবিউল আলমকে ফোন দেন। এসময় ফোন রিসিপ করে অধ্যক্ষ রবিউল আলম তাকে রাতে একা তার চেম্বারে আসতে বলেন। এসময় ছাত্রী তার স্যারকে বলেন, স্যার আমি একজন মেয়ে। আর মেয়ে হয়ে কিভাবে রাতে আপনার সাথে দেখা করবো.? তখন অধ্যক্ষ রবিউল তাকে বলেন, আমি তো রোজা থাকি না তাই রাতে আসতে না পারলে কলেজে তিনি যখন একা থাকবেন তখন আসলেই হবে।
“অধ্যক্ষ বললেন ছাত্রীকে” আমি রোজা থাকি না, তুমি চলে আসো
এ সময় অপর পক্ষ থেকে অধ্যক্ষ রবিউল ইসলাম আরও বলেন, আমি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান। আমার কথা না শুনলে তোমার হয়তো এবার পরীক্ষা দেয়া হবে না। তাই আমি যা বলি সেটাই করো। আর বিষয়টা যেন কেউ জানতে না পারে। অধ্যক্ষ এ কথা বলার সাথে সাথে পারভীন ফোন কেটে দেন এবং বিষয়টি তার বন্ধু-বান্ধব ও কলেজের অন্যান্য শিক্ষকদের বিষয়টি অবগত করেন।
রাতে পারভীনের বাবা কাজ শেষে বাড়িতে আসলে বিষয়টি তার বাবা আব্দুর রহমানকে অবগত করেন। পরে ছাত্রীর বাবা এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গকে বিষয়টি জানালে তারা জেলা প্রশাসক বরাবরে অভিযোগ দেয়ার কথা বলেন। পরে ১৩ মার্চ ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থীর বাবা লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে অভিযুক্ত অধ্যক্ষ রবিউল আলমের ফোন নম্বরে (০১৭৩৫-১৮১২৩৪) একাধিকবার ফোন করে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।
এ ব্যাপারে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক এইচএম রকিব হায়দার জানান, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। যেহেতু এটি আইনশৃঙ্খলার বিষয় তাই অভিযোগটি পুলিশ সুপার বরাবরে পাঠানো হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনেই বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবেন।
আদিমতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকবর আলী বলেন, এ বিষয়ে থানায় কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।