সোমবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃঃ
লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় কেন্দ্র সচিবের দায়িত্বে অবহেলার কারণে চলতি বছরে এসএসসি পরীক্ষায় ফলাফল নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন ১৬ শিক্ষার্থী। উপজেলার কালীগঞ্জের তুষভান্ডার আর এম এম পি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ১৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৯ জন তুষভান্ডার নছর উদ্দিন বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়য়ের ও ৭ জন চাপারহাটসহ বিভিন্ন বিদ্যালয়ের।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের অভিযোগ, ১ ফেব্রুয়ারী বাংলা ১ম পত্রের পরীক্ষা শুরু হলে ওই ১৬ জন শিক্ষার্থীকে ২০১৬ সালের (অনিয়মিত) সিলেবাস অনুযায়ী প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়। তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কক্ষ পরিদর্শককে বিষয়টি অবহিত করলে তারা কেন্দ্র সচিবকে বিষয়টি অবহিত করেন। কিন্তু কেন্দ্র সচিব বিষয়টি আমলে না নিয়ে শিক্ষার্থীদের ধমক দিয়ে সরবরাহকৃত প্রশপত্রে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেন। একই ভাবে বাংলা ২য় পত্রের পরীক্ষাও ২০১৬ সালের (অনিয়মিত) সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়। কিন্তু ৪ ফেব্রুয়ারী শারিরীক শিক্ষা, স্বাস্থ্য বিজ্ঞান ও খেলাধুলা এবং ৫ ফেব্রুয়ারী ইংরেজী ১ম পত্রের পরীক্ষা ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়। ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা খারাপ হওয়ার পাশাপাশি ফলাফল নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
একজন শিক্ষক জানান, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডর সার্কুলার অনুযায়ী যারা ২০১৬ সালে এসএসসি পরীক্ষায় ফরমপূরণ করেননি তারা। ২০১৮ সালের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণে ইচ্ছুক হলে ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে হবে। সে অনুয়ায়ী ওই সব শিক্ষার্থী পড়ালেখা করে আসছে। কিন্তু তুষভান্ডার আর এম এম পি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের কেন্দ্র সচিব নলিনী কান্ত রায় বোর্ডের নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ওই সব শিক্ষার্থীদের দুইটি পরীক্ষা ২০১৬ সালের সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়।
মিনারা বেগম, জয়শ্রী রায়, স্বপ্না রাণী, ঝরনা, শাম্মীসহ একাধিক পরীক্ষার্থী জানান, আমরা নিয়মিত পরীক্ষার্থী হিসেবে পরীক্ষা দেয়ার কথা থাকলেও বাংলা ১ম ও ২য় পত্রের পরীক্ষা কেন্দ্র সচিব ধমক দিয়ে ২০১৬ সালের সিলেবাস অনুযায়ী সরবরাহকৃত প্রশপত্রে পরীক্ষা দিতে বাধ্য করেন। পরে আমরা বিষয়টি আমাদের প্রধান শিক্ষককে জানালে পরবর্তী দুইটি পরীক্ষা ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী নেয়া হয়। ২০১৬ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পরীক্ষা নেয়ার ফলে আমাদের পরীক্ষা খারাপ হয়।
তুষভান্ডার নছর উদ্দিন সরকারী বালিকা উচ্চ বিদালয়ের প্রধান শিক্ষক বহুলুল ইসলাম জানায়, আমার ০৯ জন শিক্ষার্থী ২০১৭ সালের সিলেবাস অনুযায়ী পড়ালেখা করে আসছে। এখন ২০১৬ সালের সিলেবাসের প্রশ্নে পরীক্ষা দেয়ায় তাদেও পরীক্ষার ফলাফল ভাল হবে না। এতে বিদ্যালয়ের পাশের হার কমে যাবে অপরদিকে ওই শিক্ষার্থীদের শিক্ষা জীবন থেকে একটি বছর ঝড়ে পড়বে। তিনি আরো বলেন, এর দায় সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিব এড়াতে পারেন না।
এ ব্যাপারে তুষভান্ডার আর এম এম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব নলিনী কান্ত বায় বলেন, আমি পরীক্ষার প্রশ্ন পত্র নেয়ার জন্য থানায় যাই না। আমার প্রতিনিধি যান। ওই দিনের পরীক্ষার দায়িত্বরত কর্তৃপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট শিক্ষার্থীরাই দায়ি। এ বিয়য়ে কেন্দ্র সচিবকে প্রশ্ন আনার ব্যাপারে তার সংশ্লিষ্ট থাকা প্রয়োজন কিনা প্রশ্ন করলে তিনি অসুস্থ তাই প্রতিনিধি দিয়ে প্রশ্নপত্র থানা থেকে আনার ব্যবস্থা করেন। এ জন্য তিনি ৪ জন পরিদ্রষ্ঠাকে দায়িত্ব অবহেলার কারনে অব্যাহতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য যে, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ, পরিপত্র যার স্মারক নং- ৩৭.০০.০০০০.০৭১.০৮.০১২.১৬.১২৫, তরিখ-৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৮ খ্রিঃ মোতাবেক (খ)ধারায় স্পষ্ট উল্লেখ আছে যে, কেন্দ্রের দায়িত্ব প্রাপ্ত ম্যাজিষ্ট্রেট/সরকারি কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকতা ও কেন্দ্র সচিবের উপস্থিতিতে পরিবহন ও খোলানো যাবে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে সচিব নিজেই প্রশ্নপত্র গ্রহন করেন না। এটা স্পষ্ট পরিপত্রের পরিপন্থি।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রন কমিটির সভাপতি মোঃ রবিউল হাসান জানান, সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র সচিবকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশের জবাব পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানিয়েছেন এ ঘটনায় শিক্ষার্থীদের যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য বিষয়টি শিক্ষা বোর্ডকে জানানো হয়েছে।