বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৩৩ অপরাহ্ন
দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব প্রতিবেদক, একুশের কণ্ঠ:: মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যা দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর গাজী মোনাওয়ার হুসাইন তামীম। তিনি জানিয়েছেন, নির্ধারিত ৩০ দিনের মধ্যে আপিল না করা হলে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হবে।
মঙ্গলবার (১৮ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ বক্তব্য দেন।
প্রসিকিউটর তামীম জানান, ট্রাইব্যুনাল আইনের ২১ ধারার ৩ উপধারা অনুযায়ী রায় ঘোষণার পর ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা বাধ্যতামূলক। বিশেষ আইনে নির্ধারিত সময়সীমা পেরিয়ে গেলে বিলম্ব মার্জনার আবেদন করার কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, এ সময়সীমা অতিক্রম করলে আর কোনো আপিল গ্রহণযোগ্য হবে না। তখন গ্রেপ্তার হলেই দণ্ড কার্যকর করবে সরকার।
তিনি আরও বলেন, সাধারণ ফৌজদারি অপরাধে তামাদি আইনের মাধ্যমে আপিল দাখিলে দেরি মওকুফের সুযোগ থাকলেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য নয়।
প্রসিকিউটরের ভাষ্য অনুযায়ী, এখন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা কেবল মামলার অনুলিপি, সাক্ষীর জবানবন্দির অনুলিপি ইত্যাদি সংগ্রহ করতে পারবেন এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আপিল বিভাগের কাছে আবেদন দাখিল করতে পারবেন।
রায় ঘোষণার এক দিন পরও ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যানের অসুস্থতার কারণে স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রায়ের অনুলিপি পাঠানো সম্ভব হয়নি। রায়ের কপি হাতে পেলেই ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি ও ভারতের কাছে আসামি হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় দু’টি।
এছাড়া কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা মামলার রাজসাক্ষী সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকেও রায়ের কপি পাঠানোর কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে ফেরত পাঠাতে ভারতের কাছে চিঠি এখনো পাঠানো হয়নি। তবে চিঠির খসড়া প্রস্তুত হয়েছে এবং আজ বা কালই পাঠানো হতে পারে” বলে তিনি জানান। রায়ের অনুলিপি পাঠানো হবে না; বরং নোট ভারবালের মাধ্যমে ভারতের কাছে দণ্ডপ্রাপ্তদের হস্তান্তরের অনুরোধ জানানো হবে।
বাংলাদেশে রায় ঘোষণার পরও শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের অবস্থান পরিবর্তন হয়নি বলে জানিয়েছে দেশটির বেশ কয়েকজন কূটনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক কর্মকর্তা। তাদের মতে, ভারত তাকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়ার প্রশ্নে আগের অবস্থানেই আছে।
ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, নয়াদিল্লি কীভাবে শেখ হাসিনাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে? তিনি ভারতের প্রতি সবসময় বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলেন। ভারতের নৈতিক অবস্থান নেওয়া উচিত। বর্তমান বাংলাদেশের সরকারের অধীনে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে টানাপোড়েন অব্যাহত থাকতে পারে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেন, ভারত এই মামলাকে বর্তমান ক্ষমতাসীনদের রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে।
জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত বলেন, হাসিনাকে ঘিরে ভারত জটিলতায় পড়েছে, তবে বাংলাদেশে জনগণের ক্ষোভও তারা উপেক্ষা করতে পারছে না। তার মতে, ভারতের উচিত এখন ঢাকার অন্যান্য রাজনৈতিক শক্তির সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা। কারণ বাস্তবতা হলো—বাংলাদেশে শেখ হাসিনাকে আর রাজনৈতিকভাবে গ্রহণ করা হবে না।
গত সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ জুলাই–আগস্ট আন্দোলন দমনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দেন।
রায়ের পর থেকেই বাংলাদেশের কূটনীতি, অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং দুই দেশের সম্পর্ক নিয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে।