মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি:: স্বল্প সময়ে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় পতিত জমিতে সরিষা উৎপাদনের ঝুঁকে পড়েছে কুড়িগ্রামের কৃষকরা। আবহাওয়া অনুকুল থাকায় এবছর সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। এতে করে কৃষকরা লাভবানের পাশাপাশি দেশে তেলের ঘাটতি মিটানো সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুড়িগ্রামের ৯ টি উপজেলায় মাঠ জুড়ে সরিষার হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে খেতের পর খেত। আমন উৎপাদনের পর তিন মাস পরে থাকা পতিত জমিতে বারতি লাভের আসায় ব্যাপক হারে সরিষা চাষ করেছে এখানকার কৃষকরা। নদ-নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চের পলি মিশ্রিত জমি সরিষা চাষের উপযোগী। সেচ, সার ও অন্যন্য খরচ কম হওয়ায় এবার সরিষার বাম্পার হয়েছে।
কুড়িগ্রাম কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলায় ১৬ হাজার ৪শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ অর্জিত হয়েছে। আরও অর্জিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে গত বছরের চেয়ে এ বছর ৪ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ বেশি হয়েছে।
কৃষকরা জানান, জমিতে সরিষা রোপণ করা থেকে পরিপক্ব হতে সময় লাগে প্রায় দেড় থেকে দুই মাস। প্রতি বিঘা জমিতে সরিষা চাষে সবমিলিয়ে খরচ হয় ৪-৫ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন হয় ৫-৬ মণ। আমন কাটা মারাইয়ের পর ৩-৪ মাস পর্যন্ত জমি পতিত থাকে। যার কারণে এই সময়ে পতিত জমিতে অতিরিক্ত লাভের আসায় সরিষা চাষ করেন তারা। সরিষা উত্তোলন করে একই জমিতে বোরো ধান আবাদ করবেন চাষীরা।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের উত্তর নওয়াবস গ্রামের কৃষক দেলদার হোসেন বলেন, হামার এই এলাকা চর, বানোত (বন্যায়) ডুবি যায়। যা আবাদ করি বান (বন্যা) আসি ক্যায়া (নষ্ট হয়ে) যায়। আমনের আবাদে বারে বারে মাইর (লোকসান) খাই। এই জন্য এবার সরিষার আবাদ করছি অল্প দিনের মধ্যে সরিষা হয়। এবার সরিষার আবাদও ভালো হইছে। সরিষা তুলি বোরো ধান লাগামো।
একই এলাকার বাবলু নামের কৃষক বলেন, আমাদের এখানকার জমিগুলোতে ৩-৪ মাস পর্যন্ত পানি থাকে। আমন আবাদ একদমই হয় না। শুধু বোরো আবাদ ও সরিষার আবাদটাই হয়। আমি এবার ৩ বিঘা জমিতে সরিষা চাষ করছি। দেখা যাচ্ছে ফলন খুব ভালো হয়েছে। সবকিছু ঠিকটাক থাকলে লাভ হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
এবিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ বিপ্লব কুমার মোহন্ত বলেন, তেল উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের দেশের চাহিদা অনুযায়ী যেহেতু তেল উৎপাদন কম হয়। আমরা একটা লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছি। আমরা আগামী কয়েকবছরের মধ্যে তেল ফসলের ৫০ ভাগ আমাদের দেশ থেকে উৎপাদন করতে চাই। এই লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি কুড়িগ্রাম জেলায়। গত বছর ১২ হাজার ৯শ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছিল। কিন্তু এ বছর লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৬ হাজার ৩শ হেক্টর। ইতিমধ্যে ১৬ হাজার ৪শ হেক্টর অর্জিত হয়েছে। আমাদের এখানকার কৃষকরা উৎসাহীতবোধ করছেন।