শুক্রবার, ২২ অগাস্ট ২০২৫, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী প্রতিনিধিঃ রাজশাহী ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে মিলেছে ক্ষতিকর কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া। নির্মাণকাজ চলাকালীন ফেটে যাওয়া সরবরাহ লাইনের মাধ্যমে পানিতে মিশেছে এই ব্যাকটেরিয়া। সম্প্রতি পানি পরীক্ষার পর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে ওয়াসা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে নিজ উদ্যোগে এই পরীক্ষা করিয়েছে ওয়াসা। ওয়াসার পানিতে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার ‘কলোনি ফর্মিং ইউনিট’ এক হাজার মাত্রায় পাওয়া গেছে। যদিও এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি শূন্য থাকার কথা ছিল।
গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের রসায়নবিদ শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, পরীক্ষায় ওয়াসার পানিতে কলোনি ফর্মিং ইউনিট ৫ থেকে ১ হাজার পর্যন্ত পাওয়া গেছে। খাওয়ার পানিতে এটি থাকার কথাই না।
তিনি আরও বলেন, গবাদিপশু এমনকি মানুষের বর্জ্য থেকে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া জন্ম নেয়। নগরজুড়ে নিমার্ণকাজ চলছে। অনেক সময় রাস্তা খুঁড়তে গিয়ে ওয়াসার সরবরাহ পাইপ ফেটে যায়। এগুলো হয়তো পলিথিন দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়। কোনোভাবে সেই পলিথিন ছিঁড়ে গেলেই সেখান দিয়ে সুয়ারেজ লাইনের পানি ওয়াসার সরবরাহ লাইনে ঢুকে পড়ে। তখনই এসব ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া খাবার পানিতে মিশে যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এম মনজুর হোসেন বলেন, কলিফর্ম ভয়ংকর ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া মিশ্রিত পানির কারণেই মানুষের খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়ে থাকে। খাওয়ার পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার কোনো সহনীয় মাত্রা নেই। পেটের পীড়ার জন্য অন্যতম উপাদান হচ্ছে কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়া।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী নূর ইসলাম জানান, তারা বারবার ওয়াসাকে পানির পাইপ তিন ফুট নিচে বসাতে বলেছেন। এর ওপরে থাকলে রাস্তা রোলার করার সময় পাইপ ফেটে যায়। এ ব্যাপারে তারা চিঠিও দিয়েছেন। তারপরও কোথাও পাইপ ফেটে গেলে মেরামতের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র দিয়ে সহযোগিতা করা হয়।
রাজশাহী ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুবুর রহমান জানান, তারা অধিকতর নিশ্চয়তার জন্যই জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর থেকে পানি পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এর আগেও ওয়াসার পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। প্রতিকারের ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। তাছাড়া তাদের নিজস্ব পানি পরীক্ষার ব্যবস্থাও রয়েছে।
ওয়াসা রাজশাহী সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সাল থেকে নগরীতে নিরাপদ পানীয়জল সরবরাহ করেছে ওয়াসা। বর্তমানে ১২৫ মিলিয়ন লিটার চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ১০৪ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করছে সংস্থাটি। গৃহস্থালিতে ব্যবহার ছাড়াও ফুটপাতের চায়ের দোকান থেকে শুরু করে নগরীর অধিকাংশ খাবার হোটেলে এই পানিই পান করেন লোকজন।