শুক্রবার, ০১ অগাস্ট ২০২৫, ০৪:৫৯ পূর্বাহ্ন
একুশের কণ্ঠ ডেস্ক:: রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও আদাবর থানা এলাকার আইনশৃঙ্খলা ও অপরাধ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ‘ক্র্যাক ডাউন’ শুরু করতে যাচ্ছে পুলিশ। ছিনতাই-ডাকাতিকালে কোনো অপরাধী ধরা পড়লেই তাকে ডিটেনশন (আটকাদেশ) দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করেছেন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। এ ছাড়া অপরাধপ্রবণ এলাকায় ব্লক রেইড, চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশির পাশাপাশি পুলিশের দৃশ্যমান তৎপরতা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় তৎপর অপরাধী গ্রুপগুলোর হালনাগাদ তালিকা তৈরি করতে তেজগাঁও বিভাগকে গতকাল বুধবার বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
মোহাম্মদপুর-আদাবরে একের পর এক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং অপরাধীদের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার ওই এলাকার ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েকশ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবক মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছেন। তারা ঘরে-বাইরে নিরাপত্তা দাবি করেছেন প্রশাসনের কাছে। কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে কার্যকর আইন প্রয়োগের দাবি জানিয়েছেন।
মানববন্ধনের আয়োজক আলফা স্টার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মো. কামরুল হাসান বলেন, মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কী অবস্থা, এ ব্যাপারে প্রশাসনকে বার্তা দিতে মঙ্গলবার আমরা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করি। এই এলাকার কিশোর গ্যাং ও ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ বসবাসরত এলাকাবাসী আতঙ্কিত। আমরা বার্তা দিয়েছি, এখন প্রশাসন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে এগিয়ে আসবে বলে আমরা আশা করি। সকালে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভয় নিয়ে স্কুলে যেতে হয়।
ঢাকার পুলিশ কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধীদের লাগাম টানতে বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। আশা করি শিগগির পরিস্থিতির উন্নতি হবে। আমাদের কঠোর কিছু পদক্ষেপ আপনারা দেখতে পাবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশের অপরাধ তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ছয় মাসে মোহাম্মদপুর থানায় ডাকাতি ও ডাকাতির চেষ্টায় মামলা হয়েছে ২৩টি। আর গত তিন মাসে ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে ৪৫টি। একই সময়ে (জানুয়ারি-জুন) চাঁদাবাজির মামলা হয়েছে ১৯টি। মামলার এই পরিসংখ্যানের চেয়েও ছিনতাই, ডাকাতি বেশি হয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে। কোনো কোনো ভুক্তভোগী ঝামেলা এড়াতে পুলিশের কাছে ছিনতাইয়ের রিপোর্টই করেননি। চাঁদ উদ্যান, ঢাকা উদ্যান, বছিলা, জেনেভা ক্যাম্প, শেখেরটেক, নবোদয় হাউজিং ও রায়েরবাজার বধ্যভূমি ও টাউন হল এলাকা সবচেয়ে বেশি অপরাধপ্রবণ। প্রায়শই এসব এলাকায় চাপাতি দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটছে। আর সেই ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হচ্ছে। যখন-তখন, যাকে-তাকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার ঘটনাও ঘটাচ্ছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব ঘটনা মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।
গত ২৫ জুন নবোদয় হাউজিং এলাকায় সংঘটিত একটি ছিনতাইয়ের ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, চাপাতি হাতে তিন কিশোর একটি রিকশার গতিরোধ করে। পরে কুপিয়ে আহত করার ভয় দেখিয়ে রিকশাযাত্রীর কাছে থাকা সব সামগ্রী নিয়ে যায়।
এদিকে গত সাত মাসে চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনায় ৩৭৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে মোহাম্মদপুর-আদাবর থানা এলাকা থেকে। তারপরও অপরাধ পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে না। বাগে আসছে না আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। এর কারণ হিসেবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেপ্তারের কিছুদিন পরই অপরাধীরা জামিন নিয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসছে। তারা আবার অপরাধে যুক্ত হচ্ছে। ছিনতাই, ডাকাতি, চুরির পাশাপাশি মোহাম্মদপুর-আদাবর এলাকায় খুনাখুনিও লেগে আছে। গত ২৬ জুলাই মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজারে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের মূল ফটক এলাকায় দিনদুপুরে ফজলে রাব্বী সুমন নামে এক যুবককে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। মোবাইল ফোন ছিনতাইয়ে বাধা দিলে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার ১০ দিন আগজুলাই এক ঘণ্টার ব্যবধানে মোহাম্মদপুর ও আদাবরে দুজনকে হত্যা করা হয়।