শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৪ অপরাহ্ন

মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন শেখ হাসিনা: দ্য টেলিগ্রাফ

ছবি: সংগৃহীত

অনলাইন ডেস্ক:: বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় দোষী প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। এমন তথ্য প্রকাশ করেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকের খালা শেখ হাসিনা বর্তমানে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন রয়েছেন। অভিযোগ অনুযায়ী, ৭৮ বছর বয়সী এই রাজনৈতিক নেতা রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার ফলে প্রায় ১,৪০০ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।

প্রসিকিউশন দাবি করেছে, প্রদর্শিত প্রমাণ অনুযায়ী, তিনি সরাসরি হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ দিয়েছেন এবং মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্য।

অভিযোগে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনা বিক্ষোভকারীদের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন এবং আহতদের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করার নীতি গ্রহণ করেন। তিনি অবশ্য সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তরের তথ্যমতে, তার শাসনের শেষ পর্যায়ে ২০২৪ সালের জুলাইয়ে শুরু হওয়া কোটা সংস্কার আন্দোলন দেশের ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানের সূত্রপাত করেছিল। আন্দোলনকারীরা পরে তার পদত্যাগের দাবি তোলে।

গত ৫ আগস্ট জনতার চাপের মুখে শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করেন। একই দিনে ঢাকায় চলা বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে অন্তত ৫২ জন নিহত হন, যা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনায় গণ্য করা হয়। তার শাসনামলে ভোট কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম ও নির্বিচারে গ্রেফতারের মতো মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগও উঠেছে।

প্রসিকিউটর ময়নুল করিম জানান, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ফোন রেকর্ড, ভিডিওচিত্র ও প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যসহ নানা প্রমাণ আছে যা তাকে সরাসরি হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে যুক্ত করে। তিনি বলেন, আমরা প্রমাণ করতে পারব যে তিনি মৃত্যুদণ্ডের যোগ্য অপরাধ করেছেন। এই মামলায় ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে তারা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

অন্যদিকে সাবেক পুলিশপ্রধান চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন গ্রেফতারের পর আদালতে স্বীকার করেছেন যে, শেখ হাসিনার নির্দেশেই তিনি বিক্ষোভকারীদের ওপর হেলিকপ্টার ও ড্রোন হামলার আদেশ দিয়েছিলেন।

প্রধান প্রসিকিউটর তাজুল ইসলাম আদালতে বলেন, শেখ হাসিনা ১,৪০০ জন মৃত্যুর দায়ে দণ্ডিত হওয়া উচিত। মানবিক কারণে একটি মৃত্যুদণ্ড যথেষ্ট।

আগামীকাল রোববার (১৯ অক্টোবর) থেকে প্রতিরক্ষা আইনজীবীরা আদালতে তাদের যুক্তি উপস্থাপন শুরু করবেন। চূড়ান্ত রায় নভেম্বরের মাঝামাঝি ঘোষণার সম্ভাবনা রয়েছে।

অভিযোগ প্রমাণিত হলে শেখ হাসিনার সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও নিলামে বিক্রি করে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হতে পারে।

শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দাবি করেছেন, বিক্ষোভকারীদের সহিংসতার জবাব দিতেই পুলিশ বাধ্য হয়ে গুলি চালিয়েছে।

বর্তমানে শেখ হাসিনা আদালত অবমাননার মামলায় ছয় মাসের সাজাপ্রাপ্ত এবং তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির আরেকটি মামলাও চলমান।

একই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ভাতিজি এবং ব্রিটিশ এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও যুক্তরাজ্যে বিচারাধীন। অভিযোগ, তিনি রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে বাংলাদেশে পরিবারের জন্য জমি বরাদ্দে সুবিধা নিয়েছেন। তবে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

বাংলাদেশে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমানে বিএনপি জনসমর্থনে এগিয়ে আছে, তবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com