বৃহস্পতিবার, ৩১ Jul ২০২৫, ০২:১৯ পূর্বাহ্ন

ভালুকায় উচ্ছেদকৃত ২৬ চা দোকানিকে বিনামূল্যে নান্দনিক টি-স্টল বিতরণ

ভালুকায় উচ্ছেদকৃত ২৬ চা দোকানিকে বিনামূল্যে নান্দনিক টি-স্টল বিতরণ

আবুল বাশার শেখ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:: পরিচ্ছন্ন ও যানজট মুক্ত ভালুকা গড়ার কাজ বাস্তবায়ন এবং জনসাধারণের চলাচলে শৃঙ্খলা ফেরানো প্রকল্প বাস্তবায়নে গত মার্চ থেকে চলতি মাসের ৮ তারিখ পর্যন্ত মহাসড়কের দুপাশের অবৈধ চা দোকানগুলোকে উচ্ছেদ করা হয়। উচ্ছেদের শিকার ওইসব চা দোকানিদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ২৬ জন দোকানির মাঝে বিনামূলে বাহারী নামের ও নান্দনিক টি-স্টল বিতরণ করেছেন উপজেলা ও পৌর প্রশাসন।

অনামিকা, ক্যামেলিয়া, প্রীতিলতা, নীলাম্বরী, সুহাসিনী, মেঘমালা, বনলতা, নীহারিকা, তিথিডোর, চারুদ্বীপ, গুঞ্জরণ, উড়োচিঠি, ছায়াবীথি, নিকেতন ইত্যাদি বাহারী নামের ও দৃষ্টিনন্দন ডিজাইনে তৈরী ছোট্ট ওই দোকানগুলোকে উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিদের মাঝে বিতরনের লক্ষ্যে মঙ্গলবার সকাল থেকেই উপজেলা পরিষদ চত্বরে সারিবন্ধ ভাবে সাজিয়ে রাখা ছিল। এ উপলক্ষ্যে দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে সংক্ষিপ্ত আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে উপজেলা ও পৌর প্রশাসন উচ্ছেদে ক্ষতিগ্রস্ত ২৬ জন চা দোকানির হাতে এসব টি-স্টল হস্তান্তর করেন।

এ সময় অন্যান্যের মাঝে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইকবাল হোসাইন, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তা জায়েদা ফেরদৌসী, উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা সাইদুর রহমান প্রমুখ।

টি-স্টল হস্তান্তর অনুষ্ঠানে দোকানিদের উদ্দেশ্যে ইউএনও হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, উচ্ছেদের পর দোকানিরা বেকার হয়ে পড়েন। মানবিক দিক বিবেচনায় তাঁদের পুনর্বাসনের জন্য বিনামূল্যে দোকানগুলো দেওয়া হয়েছে। তাঁরা যেন এসব দোকান পরিচ্ছন্ন রাখেন, সাজিয়ে-গুছিয়ে পরিচালনা করেন, সে বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাত্র ৫০০ টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি দিয়ে স্টলগুলো পেয়েছেন সংশ্লিষ্ট দোকানিরা। নান্দনিক কাঠামোর এসব টি-স্টলে যেন শৃঙ্খলা ও পরিচ্ছন্নতা বজায় থাকে, সে বিষয়ে দোকানিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়।

দোকান পাওয়া কায়েস মুন্সি বলেন, নিজের দোকানটি ভাঙায় পরিবার পরিজনদের বরন-পোষন নিয়ে খুবই বিপাকে পড়েছিলাম। ইউএনও স্যার আমাদের সবাইকে দোকানে একটি ডাস্টবিন, দুটি ফুলের টব ও পরিষ্কার রাখার শর্তে আজ নতুন একটি দোকান পেয়েছি। দোকানটি দেখতে খুবই সুন্দর ও লোহার তৈরী। দোকানটা পেয়ে কি যে ভালো লাগছে, এটা বুঝাতে পারবো না। অপর দোকানী আবুল হাছেন জানান, আমাদের দোকান উচ্ছেদের পর আমরা সবাই মিলে ইউএনও স্যারের কাছে আসলে, তিনি বলেছিলেন, কোথায় কাকে বসানো যায় বা দোকান প্রস্তুত করতে কমপক্ষে এক দেড় মাস সময় লাগবে। আপনারা আমাকে এ সময়টুকু দিন, আমি আপনাদের প্রত্যেককেই বিনামূল্যে পূর্ণবাসনের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ। তখন ওইসব কথা আমরা বিশ্বাস করিনি। আগে কত মানুষ, কত কথা বলেছেন। কেউ তা করেননি। একমাত্র এই স্যারেই আমাদের দুঃখ বুঝতে পারছেন।

স্টল পাওয়া এক দোকানদার বলেন, উচ্ছেদের পর আমরা দিশেহারা ছিলাম। আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। আজকে এই দোকান পেয়ে মনে হচ্ছে, আবার বাঁচার সুযোগ পেলাম।

স্থানীয়রা বলছেন, এই উদ্যোগ শুধু মানবিক নয়, বরং শহরের সৌন্দর্য রক্ষা ও যানজট নিরসনের দিক থেকেও একটি প্রশংসনীয় উদাহরণ। তবে শর্ত সাপেক্ষে দোকান বরাদ্দের মাধ্যমে উপজেলা প্রশাসন ব্যবসায়ীদের এও জানিয়ে দিয়েছে-কোনোভাবেই যেন এসব দোকান থেকে আবার ফুটপাত দখল না হয়।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, এই ২৮টি স্টল ছাড়াও ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য একটি ফলের বাজার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে একসঙ্গে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ফল বিক্রির সুযোগ পেয়েছেন। ভবিষ্যতে আরও বৃহত্তর উদ্যোগ হিসেবে একটি হকার্স মার্কেট নির্মাণের পরিকল্পনাও গ্রহণ করা হয়েছে, যাতে যারা এখনো পুনর্বাসনের বাইরে রয়েছেন, তারাও সুযোগ পান।

ভালুকা পৌরসভার প্রশাসক ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ ইকবাল হোসাইন জানান, আমি ভালুকায় সদ্যযোগদান করেছি। আমি যোগদানের পর জানতে পারি ইউএনও স্যার এমন অনেক মানবিক উদ্যোগ গ্রহন ও বাস্তবায়ন করছেন। তবে, আজকে বিতরণকৃত টি-স্টলগুলোর রক্ষনাবেক্ষনের সম্পুর্ন দায়িত্ব আমাদের পৌরসভার।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, যানজট ও ময়লা আবর্জনামুক্ত পরিচ্ছন্ন ভালুকাবাসীর অনেক দিনের দাবী। আমরা সরকারী কোন প্রকল্প থেকে একটাকাও খরচ না করে ভালুকার কয়েকজন সুহৃদয়বান মানুষের ব্যক্তিগত উদ্যোগ ও অর্থায়নে এ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ফুটপাতে থাকা সকল অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। উচ্ছেদের পর অনেক দোকানি কর্মহীন হয়ে পড়েন। তাদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে এসব টি-স্টল বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। দোকান পরিচ্ছন্ন ও সু-সজ্জিত রাখার পাশাপাশি নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দোকান বরাদ্দের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত আরোপ করা হয়েছে। যারা দোকান পাবেন, তাদের দায়িত্ব হবে দোকানে ফুলের টব দিয়ে সুন্দরভাবে সাজিয়ে রাখা এবং দোকানের চারপাশের ১০ ফুট এলাকা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এছাড়া, প্রতিটি দোকান মালিককে দুটি ফুলের টব ও একটি ডাস্টবিন ক্রয় করতে হবে এবং পরিচ্ছন্নতার চুক্তি মেনে চলতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com