মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:২৫ অপরাহ্ন

বিদেশ যাওয়ার টাকা না পেয়ে নির্যাতন: নবাবগঞ্জে গৃহবধূর আত্মহত্যা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঢাকার নবাবগঞ্জে স্বামীর বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে না পারায় তিথি রায়(২২) নামে এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। পরিবারের অভিযোগ, টাকার জন্য স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁকে নিয়মিত মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করতেন। নিহতের একটি ১০ মাসের কন্যাসন্তান রয়েছে৷

এ ঘটনায় নিহতের বাবা অখিল রায় বাদী হয়ে স্বামী, শ্বশুর ও শাশুড়িসহ চারজনকে আসামি করে নবাবগঞ্জ থানায় আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন।

শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলার যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিষকুল গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। পুলিশ ওইদিনই লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছেন।

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর আগে উপজেলার কৈলাইল ইউনিয়নের ভাঙ্গাবিটা গ্রামের অখিল রায়ের মেয়ে তিথি রায়ের সঙ্গে যন্ত্রাইল ইউনিয়নের হরিষকুল গ্রামের যাবদ বাড়ৈয়ের ছেলে সুশান্ত বাড়ৈয়ের (৩০) বিয়ে হয়। তাদের সংসারে সিজা বাড়ৈ নামে ১০ মাসের একটি কন্যাসন্তান রয়েছে।

নিহতের বাবা অখিল রায় এজাহারে উল্লেখ করেন, “বিয়ের পর আমার জামাই সুশান্ত দুবাই প্রবাসী ছিল। কিছুদিন আগে সে দেশে ফিরে আসে। এরপর থেকে সে পুনরায় বিদেশ যাওয়ার জন্য আমার মেয়ে (তিথি)পরিবারের কাছে মোটা অংকের টাকা দাবি করতে থাকে।

তিনি অভিযোগে আরও বলেন, “আমরা আর্থিকভাবে সচ্ছল না হওয়ায় সেই টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করি। এরপর থেকেই সুশান্ত ও তার পরিবারের সদস্যরা আমার মেয়ে তিথির ওপর অমানসিক মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করেন। নির্যাতনের কারণে তিথি বেশ কয়েকবার আমাদের বাড়ি চলেও গিয়েছিল। কিন্তু প্রতিবারই আমরা সংসারের কথা চিন্তা করে তাকে বুঝিয়ে আবার স্বামীর বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম।”

এজাহারে বলা হয়, ঘটনার দিন, গত ১৪ নভেম্বর সকালেও বিদেশ যাওয়ার টাকা নিয়ে তিথির সঙ্গে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের নতুন করে বিবাদ শুরু হয়। একপর্যায়ে আসামিরা তিথিকে অকথ্য গালিগালাজ করেন এবং মানসিক চাপ সৃষ্টি করেন। এতে তিথি মানসিকভাবে সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েন।

পরে ওইদিন দুপুর দেড়টার দিকে অখিল রায় খবর পান, তাঁর মেয়ে তিথি স্বামীর বাড়িতে গলায় ফাঁস দিয়েছেন। তিথিকে উদ্ধার করে দ্রুত নবাবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মামলায় অভিযুক্ত আসামিরা হলেন- নিহতের স্বামী সুশান্ত বাড়ৈ (৩০), শ্বশুর যাবদ বাড়ৈ (৬৫), শাশুড়ি ভালোবাসা বাড়ৈ (৫৫) এবং আগলা ইউনিয়নের টিকরপুর গ্রামের রবিন বিশ্বাসের স্ত্রী রজন্তী বিশ্বাস (২৮)।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা, নবাবগঞ্জ থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক মাসুদ হোসেন মুঠোফোনে জানান, নিহতের বাবার লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে দণ্ডবিধির ৩০৬/৩৪ ধারায় (আত্মহত্যার প্ররোচনা) একটি মামলা রুজু করা হয়েছে (মামলা নং- ১৭/২৮৮)। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেফতারে আইনি প্রক্রিয়া ও অভিযান চলমান রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com