সোমবার, ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:২০ অপরাহ্ন
বাঘা (রাজশাহী) প্রতিনিধি:
পদ্মায় গেছে বিদ্যালয় ও বাজার। আপন ঠিকানা হারিয়ে বিপাকে পড়েছে শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। এখন ঠিকানার সন্ধানে ৬’শ শিক্ষার্থী ও আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ীরা। পদ্মার ভাঙনে বিলিন হয়ে যাওয়ায়, বিশেষ করে দুশ্চিন্তায় পড়েছে স্বল্প পূজির দরিদ্র ব্যবসায়ীরা। যাদের সামান্যতম সামর্থ্য আছে, তারা জায়গা ভাড়া নিয়ে ব্যবসা চালাতে পারলেও সিংহভাগ ব্যবসায়ী কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে, এচিন্তা পেয়ে বসেছে তাদের। এতদিন বাজার এলাকায় দোকান বসিয়ে ব্যবসা করে জীবিকা নির্বাহ করছিলো এসব ব্যবসায়ীরা। নিতান্ত গরীব মানুষগুলো কর্মসংস্থানের ঠাঁই খুঁজে নিয়েছিলো বাজারে। এদের কেউ ছিলো গার্মেন্টসের জামা-গেঞ্জি ব্যবসায়ী, কেউ রুটি বিক্রেতা, কেউ ছিলো পান সিগারেট ও চা বিক্রেতা। অপরদিকে বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের জায়গা না পেয়ে এখনো ভাসমান অবস্থায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।
৩দিন আগে (শুক্রবার) পদ্মার করাল গ্রাসে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায় চকরাজাপুর উচ্চ বিদ্যালয় ও বিদ্যালয় সংলগ্ন বাজারটি। অবস্থার প্রেক্ষিতে বন্ধ রয়েছে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের লেখা পড়া। মানবেতর জীন যাপন করছে ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার (১৪-৮-১৮) সরেজমিন পরিদর্শনকালে প্রধান শিক্ষক আব্দুস সাত্তার জানান, ১৪ বছরে ৩বার ঠিকানা হারালো বিদ্যালয় ও বাজার ব্যবসায়ীরা। ২০১২ সালে ভাঙনের কবলে পড়ায় কালিদাশখালি মৌজায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল বিদ্যালয়টি। ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর আটাত্তর (৭৮) লক্ষ টাকা ব্যয়ে বিদ্যালয়ের পাঁকা ভবন নির্মাণ করেন। এর আগে ১৯৯৮ সালে ভাঙনের কবলে পড়েছিল বিদ্যালয় ও বাজার। এবারও ভাঙনের কবলে পড়ে পদ্মায় বিলিন হয়ে গেল বিদ্যালয় ও বাজার। তার বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৬’শ ১০জন। বিদ্যালয় পুনঃ প্রতিষ্ঠা করে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার জন্য জায়গা দেখছেন বলে জানান এই প্রধান শিক্ষক।
ব্যবসায়ী খিদির শিকদার জানান, বাজারে চা-মুরগির দোকান বসিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। পাশাপাশি ছেলেকে লেখাপড়া করাতেন দোকানের আয় দিয়ে। তার মতো ষ্টেসনারি ব্যবসায়ী আজিজুল বিশ^াস,টেলার্স ব্যবসায়ী তোফাজ্জলসহ আড়াইশত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী দোকানের আয় দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। এখন যাওয়ার জায়গা নেই তাদের। সামর্থ নেই দোকান ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করার। ভাঙনে বাজার বিলিন হওয়ার পর তাদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। কর্মসংস্থানের দাবি জানিয়ে তারা বলেন,সরকারের সহযোগিতা ছাড়া ব্যবসা করে সংসার চালানো সম্ভব নয়।
ইউপি চেয়ারম্যান আজিজুল আযম বলেন,চরে বসবাসকারি প্রায় মানুষই নদী ভাঙনে নিঃস্ব। প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ে জায়গা জমি হারিয়েছেন অনেকেই। ভিটে মাটি হারানো অনেকেই খুজে পায়নি আপন ঠিকানা। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হয়েছে।
বাঘা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিন রেজা বলেন, শুধু ওই এলাকা নয়,এবার ভাঙনের কবলে পড়েছে উপজেলার ১০ টি গ্রাম। বিলিন হয়ে গেছে সহা¯্রাধিক বিঘা জমিসহ গাছপালা। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকও ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডকেও জানানো হয়েছে।