বৃহস্পতিবার, ২৮ অগাস্ট ২০২৫, ০১:৫৩ পূর্বাহ্ন

প্রেমের টানে আমেরিকার মেয়ে বাংলাদেশে, বিয়ে করলেন ফরিদপুরের ছেলে আশরাফকে

এস এম মনিরুজ্জামান,ফরিদপুর প্রতিনিধি॥ মাস ছয়েক আগে ফেসবুকে পরিচয়। সেই পরিচয় রূপ নেয় প্রেমে। একপর্যায়ে প্রেমিকা জানতে পারেন, তাঁর প্রেমিকের মা অসুস্থ। তারপর হুট করে সুদূর যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন মার্কিন নাগরিক শ্যারন খান (৪০)। বিয়ে করেছেন ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তর শ্রেণির এক ছাত্রকে।

তরুণ বরের নাম মো. আশরাফ উদ্দিন সিংকু (২৬)। তাঁর গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের সদর উপজেলার কানাইপুর ইউনিয়নের ঝাউখোলা গ্রামে। বাবা মায়ের দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে তিনি সবার বড় সন্তান। বাবা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের গাড়ি চালক। সে হিসেবে বাবাকে থাকতে হয় ঢাকায়। তবে তাঁর পরিবার থাকে ফরিদপুর নদী গবেষণা ইনস্টিটিউটের স্টাফ কোয়াটারে। আর কনে শ্যারন যুক্তরাষ্ট্রের একটি ব্যাংকে চাকরি করেন। তাঁর পরিবারের সবাই মুসলমান।

এদিকে, ঢাকায় বিয়ের পর কনে শ্যারনকে নিয়ে ফরিদপুরের বাড়িতে চলে আসেন আশরাফ। মার্কিন নারীকে বিয়ের ঘটনায় তাঁর পরিবারসহ গোটা এলাকা এখন আনন্দে ভাসছে। শত শত লোকজন শ্যারনকে দেখতে আসে। আর এ বিষয়টা দারুণ উপভোগ করেন শ্যারন। তিনিও এলাকার সবাইকে আপন করে নেন এবং সবার খোঁজ-খবর নেন। ভাঙা ভাঙা গলায় বাংলা কথা বলেন। এ ব্যাপারে বর আশরাফ উদ্দিন সিংকু জানান, ছয় মাস আগে ফেসবুকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে কর্মরত প্রথম শ্রেণির ব্যাংকার শ্যারন খানের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। নিয়মিত কথা বলার একপর্যায়ে তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। একপর্যায়ে শ্যারন তাঁকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেন। তিনি রাজি হন। এরই মধ্যে তাঁর মা হঠাৎ অসুস্থ হন। এই বিষয়টি জানতে পারেন শ্যারন। তখন শ্যারন তাঁর মায়ের পাশে থাকার জন্য ৬ এপ্রিল বাংলাদেশে চলে আসেন। ১০ এপ্রিল তাঁরা ঢাকায় মুসলিম রীতি-নীতি মেনে বিয়ে করেন। তাঁরা দুজনই মুসলমান হওয়ায় তাঁদের বিয়ে নিয়ে কোনো জটিলতা হয়নি।

আশরাফ উদ্দিন আরো বলেন, ‘আমার ও আমার বউয়ের বয়সের কিছুটা ব্যবধান থাকলেও আমরা দুজনকে দুজন পেয়ে খুবই খুশি। আমরা সবার কাছে দোয়া চাই।’ বাংলাদেশে আসা ও বাংলাদেশের ছেলেকে বিয়ে করার অনুভূতি জানতে চাইলে শ্যারন খান বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে খুবই ভালো লাগছে। আমার স্বামী, তাঁর পরিবার ও এ দেশের মানুষসহ গোটা পরিবেশ খুবই ভালো লেগেছে। ২১ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর দ্রুত আবার এখানে ফিরে আসব।’ শ্যারন খান আরো বলেন, ‘আমি বাংলার প্রেমে পড়ে গেছি। এ দেশের মানুষের প্রেমে পড়ে গেছি।’

এদিকে আশরাফের পরিবার শ্যারন খানের মতো বউ পেয়ে খুশিতে ব্যাকুল। পাড়াপ্রতিবেশীরাও শ্যারনকে দেখে মুগ্ধ। তারা এই বিয়েকে স্বাগত জানিয়েছে বলে জানান পরিবারের সদস্যরা। আশরাফের মা নার্গিস আক্তার বলেন, ‘এমন বউ পেয়ে আমি এত খুশি, তা বলার নয়। আমার ছেলেকে যদি বাংলাদেশে কোনো মেয়ের কাছে বিয়ে দিতাম তবু এত ভালো বউ হয়তো পেতাম না।’ তিনি বলেন, ‘শ্যারন আমাকে যখন আম্মু বলে ডাক দেয় তখন খুবই ভালো লাগে।’ আশরাফদের প্রতিবেশী মাসুম বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী হিসেবে খুবই গর্বিত যে আমাদের প্রতিবেশী আশরাফ আমেরিকান এক মেয়েকে বিয়ে করে নিয়ে এসেছে। আমরা এখন তাদের দুজনের মঙ্গল কামনা করি তারা যেন সব সময় সুখে থাকে।’

আশরাফের বাবা মো. আলাউদ্দিন মাতুব্বর বলেন, ‘আমার স্ত্রীর অসুখের কথা শুনে সেই সূদুর আমেরিকা থেকে শ্যারন আমাদের কাছে ছুটে এসেছে। এতে আমরা এত খুশি হয়েছি তা বলার নয়। এরপর সে বাংলাদেশের সব কিছু দেখে আমাদের দেশের প্রেমে পড়ে গেছে।’ ‘আমরা ওদের জন্য দোয়া করি, ওরা যেন ভালো থাকে। এ ছাড়া দেশের সবার কাছে আমার ছেলে ও ছেলের বউয়ের জন্য দোয়া চাই, ওরা যেন সুখে থাকে।’

এদিকে শ্যারনকে নিয়ে আজ ফরিদপুর থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন আশরাফ। কিছুদিনের মধ্যে শ্যারন ঢাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্র চলে যাবেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com