শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:০৩ অপরাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ:: আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবারও বড় ধরনের বিমান হামলা চালিয়েছে পাকিস্তান। আফগান সংবাদমাধ্যম খামা প্রেস জানিয়েছে, বিনা উসকানিতে চালানো এই হামলায় ৩ আফগান ক্রিকেটারসহ অন্তত ৪০ জন নিহত ও ১৭০ আহত হয়েছেন। হামলার পর ক্ষোভে ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করেছে আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড।
শুক্রবার (১৭ অক্টোবর) রাতের দিকে আফগানিস্তানের পাকতিকা প্রদেশের একাধিক স্থানে বিমান হামলার ঘটনা ঘটে। কয়েক ঘণ্টা আগেই দুই দেশ অনির্দিষ্টকালের যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছিল। কিন্তু সেই সমঝোতা ভেঙেই হামলা চালায় পাকিস্তানি বাহিনী। আফগানিস্তানের কান্দাহার প্রদেশের স্পিন বোলদাক শহরেও ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে পাকিস্তানের বিমান বাহিনী। স্পিন বোলদাক শহরটির অবস্থান আফগানিস্তান-পাকিস্তান সীমান্তের কাছে।
স্পিন বোলদাকের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা করিমুল্লাহ জুবাইর আগা-এর বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে আফগান সংবাদমাধ্যম তোলো নিউজ জানিয়েছে, নিহত এবং আহতদের সবাই বেসামরিক এবং একটি বড় অংশই নারী ও শিশু।
পাকিস্তানের এ হামলার পর আফগান সেনারাও পাল্টা গোলাবর্ষণ শুরু করেছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় সূত্র। এতে সীমান্ত এলাকায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, দুই দেশের সেনাদের মধ্যে ফের সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।
এ ঘটনায় আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ড এক বিবৃতিতে জানায়, পাকতিকা প্রদেশে বিমান হামলায় নিহত তিনজন স্থানীয় ক্রিকেটার প্রাদেশিক রাজধানী শারানায় একটি প্রীতি ম্যাচ খেলে বাড়ি ফেরার পথে প্রাণ হারান।
এসিবির বিবৃতিতে বলা হয়, তাদের মৃত্যু আফগান ক্রীড়া সমাজের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা আসন্ন ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি সিরিজ থেকে নিজেদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
আগামী ১৭ থেকে ২৯ নভেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোরে আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মধ্যে সিরিজটি হওয়ার কথা ছিল। এবারই প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের মাটিতে খেলতে যাচ্ছিল আফগান দল। কিন্তু সীমান্ত সংঘর্ষের কারণে সেই পরিকল্পনা ভেস্তে গেল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এটি দুই দেশের মধ্যে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষগুলোর একটি বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এর আগে সীমান্তে গোলাগুলিতে এক ডজনেরও বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তান ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিশ্বাসের অভাব নতুন করে সংঘাত উসকে দিয়েছে। এতে উভয় দেশের সাধারণ জনগণ সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের আগস্টে তালেবান কাবুলের ক্ষমতায় ফেরার পর পাকিস্তানের সামরিক ও বেসামরিক নেতারা তাদের ঘনিষ্ঠ মিত্র হিসেবে স্বাগত জানিয়েছিলেন। ইসলামাবাদ মনে করেছিল, তালেবান সরকার পাকিস্তানের নিরাপত্তা-ঢাল হিসেবে কাজ করবে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই সম্পর্ক ভেঙে পড়েছে।
সম্প্রতি পাকিস্তান প্রথমবারের মতো তার বিমানবাহিনী দিয়ে আফগান রাজধানী কাবুলে হামলা চালিয়েছে যা দুই দেশের সম্পর্কের ইতিহাসে এক নতুন উত্তেজনাপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা করেছে।