সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ন

তিস্তার পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত, বন্যার শঙ্কা

লালমনিরহাট প্রতিনিধি।। ‎গত কয়েক দিনের ভারি বর্ষণ এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে তিস্তা নদীর পানি বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে লালমনিরহাটের নিম্নাঞ্চল ইতিমধ্যেই প্লাবিত হয়েছে। চরাঞ্চলগুলোতে বন্যার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিস্তা ব্যারাজ কর্তৃপক্ষ সতর্কতা জারি করেছে এবং ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে পানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলছে।

‎‎রোববার (৫ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২.২৫ সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (স্বাভাবিক ৫২.১৫ সেন্টিমিটার)। এর আগে দুপুর ১২টায় বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচে প্রবাহিত হলেও বিকেল ৩টায় পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার মাত্র ১ সেন্টিমিটার নিচে পৌঁছায়।

‎‎বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, ৫ অক্টোবর সকাল ৯টা থেকে ৬ অক্টোবর সকাল ৯টার মধ্যে দেশের অভ্যন্তরীণ অঞ্চল এবং উজানে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এ কারণে তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে।

‎লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানান, কয়েকদিন ধরে চলা ভারি বৃষ্টিপাত এবং উজান থেকে নেমে আসা ঢলের প্রভাবে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০ সেন্টিমিটারের উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত মানুষদের আগেভাগেই সতর্ক করে রাখা হয়েছে, যাতে তারা প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে পারে। তিনি আরও বলেন, পানি কমে গেলে স্থানীয় এলাকায় বন্যার ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পাবে। তবে এখনই সতর্ক থাকা জরুরি।

‎লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. সাইখুল আরিফিন জানান, বর্তমানে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ধান, বাদাম ও শাকসবজির চাষাবাদ চলার কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়ে ফসল নিচে তলিয়ে গেছে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি পানি তিন থেকে চার দিন স্থায়ী হয়, তবে কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়তে পারেন। তবে এক থেকে দুই দিনের মধ্যে পানি নেমে এলে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা নেই। কর্তৃপক্ষ কৃষকদের সম্ভাব্য ক্ষতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পরামর্শ ও সহায়তা প্রদানের চেষ্টা করছে।

‎স্থানীয় প্রশাসন ও ইউপি সদস্যরা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসরত মানুষদের নিরাপদ স্থানে সরানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জরুরি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং বাজারে প্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্য ও পানীয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সেই সাথে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

‎লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি নিয়মিতভাবে উঁচু হলে নিম্নাঞ্চলে দ্রুত বন্যা দেখা দেয়। ২০১৭ সালের বন্যার মতো পরিস্থিতি পুনরায় ঘটতে পারে, তাই সকলকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com