শনিবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:১৪ পূর্বাহ্ন
বিশেষ প্রতিবেদক: এবছর টানা বৃষ্টির কারনে রবি মৌসুমে সময়োপযোগী ফসল চাষাবাদ করতে পারছেন না রাজধানীর পাশে ঢাকার নবাবগঞ্জের কৃষকরা। অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে এই অঞ্চলের কৃষকদের। সবমিলিয়ে এখানকার চাষাবাদ নিয়ে বেশ চিন্তিত হয়ে পড়েছে কৃষক পরিবারগুলো৷ মনে হয় তাঁদের ভাগ্য যেন অন্ধকার ঘরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তবে, আলো’র মুখ কী দেখতে পাবে এখানকার কৃষকরা?।
‘কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী অক্টোবর মাসের ১৬ তারিখ থেকে মার্চের ১৫ তারিখ পর্যন্ত রবি মৌসুম হিসেবে গণ্য করা হয়।
এরমধ্যে শীতকালীন সবজি, কলাই ও সরিষা রবি মৌসুমের অন্যতম ফসল। এই মৌসুমে প্রতিটি কৃষকের লক্ষ্য থাকে ভালো ফসল ফলিয়ে স্বাবলম্বী হওয়া৷
নবাবগঞ্জ অঞ্চলে যেসব জমিতে কৃষি ফসল চাষাবাদ করা হতো ঐসব বেশিরভাগ জমিতে এবার হাটু বা কোমর পর্যন্ত পানি জমে আছে। আবার কিছু কিছু জমিতে দেখা গেছে পানি কমতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে পানি একটু কমলেও আবার হঠাৎ হঠাৎ বৃষ্টির কারণে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরেজমিনে নবাবগঞ্জে বেশ কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ‘এই সময়টা যদিও কৃষক সবজি চাষাবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করতে ব্যস্ত থাকার কথা। কিন্ত জলাবদ্ধতার কারনে এমন চিত্র মাঠে কমসংখ্যক দেখা গেছে। জমি প্রস্তুত ও চাষাবাদ করতে না পারায় এই অঞ্চলের কৃষকরা(তারা) বেশ চিন্তিত বলে জানান প্রতিবেদককে।
অন্যদিকে সবজি চাষাবাদ কম হওয়ায় সবজির দাম বেশ বাড়তে শুরু করেছে এই অঞ্চলে। সবজি চাষ কম হওয়ায় অন্যান্য উপজেলার চেয়ে নবাবগঞ্জের বাজারগুলোতে প্রতিটি সবজির দাম বেশি বলে জানান অনেকেই।
নবাবগঞ্জের- আগলা, টিকরপুর, বাহ্রা, কৈলাইল, বারুয়াখালী, শিকারীপাড়া, জয়কৃষ্ণপুর, নয়নশ্রী ও শোল্লাসহ বেশ কিছু ইউনিয়নে ফসলি জমিগুলো এখন পানিবন্দি হয়ে আছে। পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা না থাকয় এমন ভোগান্তি হয়েছে বলে জানান কৃষকরা। এসব পানি নিস্কাশনের কোন উদ্যোগ নেই কোন সংস্থা বা সরকারি কোন দফতরের। স্থায়ীভাবে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা করলে তবেই কৃষিতে ভালো কিছু করা সম্ভব বলে জানান তারা।
দেখা গেছে ‘নবাবগঞ্জের দক্ষিণ বালুখন্ড এলাকা কয়েকটি গ্রামের মাঝে কৃষি ফসলি মাঠ। এই মাঠে বারোমাস সবজি চাষাবাদ করেন কৃষক। বিগত সময়ে এই এলাকায় বেশ ভালো সবজি চাষাবাদ হতো। চারপাশে এখন বাড়িঘর হওয়ায় এখন আর বৃষ্টির পানি বের হতে পারে না। হালকা বৃষ্টিতে পানি না জমলেও, টানা বৃষ্টিতে পানি জমে জলাবদ্ধতা হওয়ায় জমিতে এখন আর শাক-সবজি আবাদ করা সম্ভব হয় না।
স্থানীয় মবজেল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন কৃষক জানান, ‘এবার বৃষ্টি বেশি হওয়ায় বেশি সমস্যায় পড়তে হয়েছে আমাদের। দেখে মনে হয় বর্ষার পনি। কিছু কিছু জায়গায় হাটু আবার কিছু কিছু জায়গায় কোমর পর্যন্ত পানি জমেছে।
বাহ্রা ও বক্সনগর এলাকার কৃষক সফিউদ্দিন আজিজ, সিদ্দিক আলীসহ বেশ কয়েকজনের সাথে কথা হলে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আগে এই এলাকায় সেপ্টম্বর মাসের শুরুতে সবজি চাষাবাদ শুরু করতাম, এখন আর আর সময়মত চাষাবাদ করতে পারি না।
তিনি আরও বলেন, ‘ এবছর যে পরিমান বৃষ্টি হয়েছে তাঁতে পানি দ্রুত সময়ে না কমলে সবজি চাষাবাদ করা মনে হয় একেবারেই সম্ভব হবে না। পানি কোন দিন দিয়ে বের হতে না পারায় পুরো চক পানিবন্দি হয়ে গেছে। সরকারের কাছে আমরা দাবি জানাই এই অঞ্চলে কৃষিকে টিকিয়ে রাখতে পানি নিস্কাশনের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হোক।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বারুয়াখালী, জয়কৃষ্ণপুর, নয়নশ্রী ও গালিমপুর ইউনিয়ননের বেশ কয়েকজন কৃষক অভিযোগ করে বলেন, ‘মাঠে আগে মাঝেমধ্যে (ফিল্ড স্যারদের) দেখতাম কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিত। এখন তাদের তেমন দেখি না। পরিষদে গিয়েও অনেক কৃষক তাদের খুঁজে পায় না। কখন আসে কখন যায় তাও কেউ বলতে পারে না।
অভিযোগ করে আরও বলেন, ‘সরকার কৃষকদের জন্য বীজ-সার দেওয়ার পরই কর্মকর্তাদের দায়িত্ব শেষ না। বীজগুলো কিভাবে ব্যবহার করবে এবং চাষাবাদের পর ভালো ফলন পেতে করণীয় সম্পর্কে ইউনিয়ন পরিষদে এসে আরও বেশি পরামর্শ দিতে হবে৷ তবেই কৃষকরা আরও বেশি উপকৃত হবে।
নবাবগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আসমা জাহান বলেন, ‘ অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ ও খালগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে নবাবগঞ্জে দিনদিন জলাবদ্ধতা বাড়ছে। ফলে, এবারের টানা বৃষ্টির কারনে সময়মত কৃষক রবি মৌসুমের অনেক ফসল সময়মত চাষাবাদ করতে পারছে না। তবে, অল্পকিছুদিনের মধ্যে পানি শুকানোর পর সবজি ও সরিষাসহ অন্যান্য ফসল চাষাবাদ করতে পারবে।
তিনি আরও বলেন, ‘ উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা সবসময় কৃষকের পাশে থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। রবি মৌসুমকে ঘিরে দায়িত্বপালন নিয়ে আরও কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে এবং নিজ নিজ বøকে থেকে দায়িত্বপালন করতে বলা হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ঢাকা জেলার উপ-পরিচালক(ডিডি) সৈয়দ তানভীর আহমেদ মুঠোফোনে জানান, ‘ এবছর টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার কারনে সময়মত কৃষকরা সবজি চাষাবাদ করতে পারেনি। এতে কিছুটা লোকসান হবে কৃষকের। তবে, নবাবগঞ্জে সেসব উচু জমি রয়েছে সেসব স্থানে(জমিতে) সবজিসহ অন্যান্য ফসল আবাদে কোন সমস্যা হবে না বলে ধারনা করছি।
পানি নিস্কাশন নিয়ে কথা হলে ডিডি বলেন, ‘ সবার উচিত পরিকল্পনা গ্রহন করে বাড়িঘর নির্মাণ করা। বাড়িঘর নির্মাণের পর ফসলি জমির(মাঠ) পনি বের হতে পারবে কী না সেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। তবেই আগামীতে নবাবগঞ্জ অঞ্চলের কৃষকরা কৃষিতে আরও ভালো কিছু অর্জন করতে পারবে।