শুক্রবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৩ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক ॥
ঢাকা: ২০২৪ সালের জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর চালানো দমন-পীড়ন ছিল পরিকল্পিত ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচালিত। সেই সময়ে পুলিশ এবং সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা আন্দোলনকারীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫) আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও আন্দোলনের অন্যতম নেতা নাহিদ ইসলাম এ মন্তব্য করেন।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার ৪৭তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে তিনি এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন।
নাহিদ তার জবানবন্দিতে বলেন, ‘জুলাইয়ের সেই আন্দোলন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। আহত শিক্ষার্থীদের হাসপাতালে দেখতে গিয়েও হামলার শিকার হতে হয়েছিল।’
তিনি আরও জানান, ১৬ জুলাই আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ ছয়জন শহীদ হন। এর প্রতিবাদে পরদিন ১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত গায়েবি জানাজা ও কফিন মিছিলে হামলা চালানো হয়। একই দিনে হল থেকে শিক্ষার্থীদের জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়।
১৮ জুলাই সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’-এর ডাক দেওয়া হলে সাধারণ মানুষ, মাদরাসা ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসেন। নাহিদ অভিযোগ করেন, ঢাকার বাড্ডা, উত্তরা, মিরপুর, যাত্রাবাড়িসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালায়। সেই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগসহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরাও হামলায় অংশ নেয়। এ সময়ে বহু মানুষ শহীদ ও আহত হন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
১৭ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর আন্দোলনকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টির চেষ্টা করা হয়। নিরাপত্তা বাহিনীর পক্ষ থেকে জানানো হয়, সরকারের সঙ্গে আপস না করলে দমন-পীড়ন আরও বাড়বে। জবাবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ‘রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে সরকারের সঙ্গে কোনো সংলাপ হবে না।’
তৎকালীন সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে নাহিদ বলেন, তারা তিনবার নির্বাচনে ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে দলীয়করণ করেছিল। তিনি আরও জানান, ২০১৮ সালেই তাদের সন্দেহ হয়েছিল যে শেখ হাসিনা সরকার কোটা সংস্কার বা বাতিল করতে চায়নি, বরং সুযোগ বুঝে তা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিল। ২০২৪ সালের নির্বাচনের পর সেটিই বাস্তবায়িত হয়।
তার ভাষ্য অনুযায়ী, কোটা সংস্কার ছিল একটি রাজনৈতিক প্রশ্ন, কোনো আদালতের বিষয় নয়। তাই আন্দোলনকারীদের কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে, রাজপথেই তাদের দাবি আদায় করতে হবে। আদালতের প্রতি তাদের কোনো আস্থা ছিল না বলেও তিনি জানান।