মঙ্গলবার, ২১ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:৩৫ অপরাহ্ন

জাপানে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি

নারী প্রধানমন্ত্রী সানায়ে তাকাইচি।

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ:: জাপানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো নারী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন সানায়ে তাকাইচি।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দেশটির সংসদে অনুষ্ঠিত ভোটে তাকাইচিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত করেছেন।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ও প্রধান বিরোধী দল জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি) ইশিন নামে পরিচিত একটি জোট সরকার গঠনে একমত হয়েছে। এই জোটই তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পথ প্রশস্ত করেছে।

৬৪ বছর বয়সী এই রক্ষণশীল নেত্রীকে অনেকেই জাপানের ‘আয়রন লেডি’ বলে অভিহিত করেন। প্রাক্তন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের ভক্ত তাকাইচি প্রধানমন্ত্রী পদে এর আগে দুইবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ব্যর্থ হন। এবার তৃতীয়বারের চেষ্টায় ইতিহাস গড়লেন।

তাকাইচির এই অভূতপূর্ব সাফল্যকে জাপানে নারীর ক্ষমতায়নের বড় প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে। দেশটিতে এখনো রাজনীতি ও কর্পোরেট নেতৃত্বের বেশিরভাগ পদে পুরুষদেরই আধিপত্য। জাপানের সংসদে প্রতি পাঁচটি আসনের বিপরীতে নারীদের জন্য একটিরও কম আসন রয়েছে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাতসুকি কাটায়ামাকে অর্থমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর ফলে কাটায়ামা দেশটির প্রথম নারী অর্থমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন।

কাটায়ামা এলডিপির অর্থ ও ব্যাংকিং গবেষণা কমিশনের সভাপতি হিসেবে কাজ করছেন এবং অর্থনীতিতে তার দৃঢ় পটভূমি রয়েছে। আবের নেতৃত্বে তিনি স্থানীয় অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তাকাইচির সামনে রয়েছে বেশ কিছু বড় চ্যালেঞ্জ—মন্দা অর্থনীতির পুনরুদ্ধার, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েন নিরসন, এবং দুর্নীতি ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জর্জরিত এলডিপিকে ঐক্যবদ্ধ করা।

১৯৬১ সালে নারা প্রিফেকচারে জন্ম নেওয়া তাকাইচির বাবা ছিলেন একজন অফিস কর্মী, মা ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা। রাজনৈতিক পরিবারে জন্ম না হলেও নিজের প্রচেষ্টায় তিনি জাপানের রাজনীতিতে অনন্য অবস্থান তৈরি করেন। একসময় তিনি ছিলেন দক্ষ হেভি মেটাল ড্রামার। ড্রাম বাজানোর সময় এত জোরে আঘাত করতেন যে প্রায়ই স্টিক ভেঙে ফেলতেন, তাই সবসময় অতিরিক্ত স্টিক সঙ্গে রাখতেন—এই ঘটনাই তার দৃঢ়তা ও অধ্যবসায়ের প্রতীক হিসেবে প্রায়ই উল্লেখ করা হয়।

১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান বাণিজ্য বিরোধের সময় রাজনীতিতে আগ্রহী হন তাকাইচি। ১৯৯৬ সালে তিনি প্রথমবারের মতো এলডিপির প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর থেকে ১০ বার নির্বাচিত হয়েছেন, মাত্র একবার পরাজিত হয়েছেন।

দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে তিনি এলডিপির অন্যতম রক্ষণশীল এবং স্পষ্টভাষী নেত্রী হিসেবে পরিচিতি পান। তার নেতৃত্বে জাপানের রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা তৈরি হয়েছে। নতুন নেতৃত্বের প্রত্যাশায় জাপানের শেয়ারবাজারে ইতিবাচক সাড়া দেখা গেছে। তাকাইচির সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হওয়ার খবরে নিক্কেই সূচক মঙ্গলবার রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছে।

তাকাইচির নেতৃত্বে জাপানের রাজনীতিতে নারীর অগ্রযাত্রার নতুন অধ্যায় সূচিত হচ্ছে—যা দেশটির সমাজ ও প্রশাসনে দীর্ঘদিনের পুরুষ-প্রাধান্যভিত্তিক কাঠামো ভাঙার এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com