রবিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন

চোখের জলে ইউএনও সালমাকে বিদায় দিলেন ভালুকাবাসী

আবুল বাশার শেখ, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি:: নূরজাহান বেগমের (৬৫) মেয়ে আকলিমা আক্তার মৃত্যুর পর দিনমজুর মেয়ের জামাই অন্যত্র বিয়ে করে সংসার পাতেন। মেয়ের রেখে যাওয়া আট মাস বয়সী নাতিকে নিয়ে অথৈই পাথারে পড়েন বয়সের ভারেন্যুব্জ নূরজাহান বেগম। প্রতিবেশির পরামর্শে দেখা করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার সালমা খাতুনের সাথে। ইউএনও সালমা নিজ গর্ভে জন্ম দেওয়া সারা মারিয়ামের সাথে কোলে তুলে নেন অসহায় এতিম তাসলিমাকে। তাসলিমার খাবার বাবদ ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে ১০ হাজার টাকা প্রদান করেন ইউএনও সালমা। কিছুটা হাফ ছেড়ে বাঁচেন নূরজাহান বেগম। ঈদে নতুন জামা পাঠান এতিম তাসলিমাকে। ইউএনও সালমা বিদায় বেলায়ও ৬ হাজার টাকা দিয়ে যান এতিম তাসলিমার নানি নূরজাহান বেগমের হাতে। তাসলিমার দুধ কেনার জন্য আরও দশ হাজার টাকা উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা জাহিদা ফেরদৌসির কাছে জমা রেখে যান তিনি। তাছাড়াও যে কোন প্রয়োজনে তিনি যেখানেই থাকুন না কেন তাসলিমার পাশে থাকার আশ্বাস প্রদান করেন ইউএনও সালমা।

ত্রিশালে সড়ক দুর্ঘটনায় মায়ের মৃত্যুর আগমুহূর্তে জন্ম নেওয়া ফাতেমার পৃথিবীতে আসার বিষয়টা স্বাভাবিক ছিলনা। মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় একসঙ্গে মা-বাবা ও বোনকে হারিয়ে ছিল। সেদিন অলৌকিকভাবে বেঁচে যায় ফাতেমা। বাবা-মা না থাকায় শিশুটির ঠাঁই হয়েছে রাজধানীর আজিমপুরের সরকারি ছোটমণি শিশুনিবাসে। এতিম অসহায় ফাতেমাকে বিভিন্ন উৎসবে নতুন জামা পাঠিয়েছেন ইউএনও সালমা খাতুন। প্রত্যোক ঈদে তিনি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছেন।

এসব সহযোগীতার অর্থনৈতিক পরিমান হয়তো খুব বেশি না তবে, এসব মানবিক অগনিত উদ্যোগে ভালুকাবাসীর মন জয় করে নিয়েছিলেন সাবেক এই উপজেলা নির্বাহী অফিসার। তাইতো তাঁর বিদায় বেলায় কেঁদেছেন ভালুকাবাসী। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে অবেগঘন পোষ্ট করেছেন নেটিজনেরা। ভালুকা উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে ২০২০ সালের ০৮ সেপ্টেম্বর কাজ শুরু করেছিলেন সালমা খাতুন। চলতি বছরের ২ মে তিনি ভালুকা উপজেলা নির্বাহীঅফিসার থেকে বদলী হয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ে। ভালুকায় কর্মকালীন সময়ে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ২০২২-২৩ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেছিলেন তিনি।

ভালুকার একাধিক মানুষ বলেন, ইউএনও হিসেবে সালমা খাতুন যখন দায়িত্ব পালন করেছেন, তখন তাঁর হাসি মুখ দেখে সবাই ভরসা পেতেন, কথা বলার সাহস পেতেন। তিনি ছিলেন অত্যান্ত মানবিক ও সাহসী একজন অফিসার। রক্তচুক্ষ উপেক্ষা করে সঠিক কাজটিই তিনি করেছেন। তার মাধ্যমে ভালুকাবাসী প্রকৃত সেবা পেয়েছেন।

সালমা খাতুন বলেন, একজন ইউএনওর কাছে মানুষ কিছু প্রত্যাশা নিয়ে আসেন। আমি সবার সব কথা অত্যান্ত মনযোগ দিয়ে শুনেছি। চেষ্টা করেছি সমাধান করে দেওয়ার। সকল চাপ উপেক্ষা করে চেষ্টা করেছি সঠিক কাজটি করতে। প্রকৃত ব্যাক্তিকেই সরকারি সুবিধা প্রদান করেছি। সরকারের সার্থ রক্ষায় ছিলাম ইস্পাদৃঢ়। ভালুকাবাসী সহজেই ফোনে, মেসেঞ্জারে ও হোয়াটসঅ্যাপে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পেরেছে। আমি চেষ্টা করেছি মানুষের ভোগান্তি কমাতে। ইউএনও হিসেবে কাজের দায়িত্বের বাইরেও মানুষকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। এভাবেই মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।

ইউএনও সালমা আরও বলেন, ভালুকায় কাটানো সময়টা আমার সারা জীবন মনে থাকবে। এখানে কর্মকালীন সময়ে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার, বিভাগীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী অফিসার এবং ২০২২-২৩ সালে জাতীয় শুদ্ধাচার পুরস্কার অর্জন করেছি যেটা আমার কর্ম জীবনকে অনেক বেশি সমৃদ্ধ করেছে। জীবনের সেরা প্রাপ্তি আমার একমাত্র সন্তান সারা মারইয়ামকে আমি এই সময়টাতেই পেয়েছি। ভালুকার মাটি ও মানুষকে আমি কখনো ভুলতে পারবোনা। আমার বিদায়ে ভালুকাবাসীর চোখে যে পানি আমি দেখেছি সে ঋণ শোধ করার সাধ্য আমার নেই।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com