বুধবার, ০১ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৫৬ পূর্বাহ্ন
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ:: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, তারা গাজার জন্য একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনায় একমত হয়েছেন।
গত রোববার হোয়াইট হাউজে বৈঠক শেষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে দুই নেতা এই ঘোষণা দেন।
বিবিসি জানিয়েছে, নতুন পরিকল্পনায় গাজায় সামরিক অভিযান অবিলম্বে বন্ধ করার প্রস্তাব করা হয়েছে, এর আওতায় হামাস ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ২০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মি এবং দুই ডজনেরও বেশি জিম্মির দেহাবশেষ হস্তান্তর করবে, যাদের মৃত বলে মনে করা হচ্ছে এবং ইসরায়েলে শত শত আটক গাজার নাগরিককে মুক্তি দেওয়া হবে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি ফিলিস্তিনি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেয়া ২০-দফা শান্তি প্রস্তাব হামাস কর্মকর্তাদের কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গাজা শাসনে হামাসের কোনো ভূমিকা থাকবে না এবং একটি চূড়ান্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দরজা খোলা থাকবে।
হোয়াইট হাউজে নেতানিয়াহুর সঙ্গে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প নতুন এই পদক্ষেপকে ‘শান্তির জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন’ বলে অভিহিত করেছেন।
তবে তিনি বলেছেন, হামাস যদি এই পরিকল্পনায় সম্মত না হয় তাহলে হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যেকোনো পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন থাকবে।
এরপর নেতানিয়াহু বলেন, যদি হামাস এই প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করে অথবা গ্রহণ করে পরে পিছু হটে তাহলে ইসরায়েল একাই কাজটা শেষ করে দেবে।
ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীর পরিচালনাকারী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ মার্কিন প্রেসিডেন্টের প্রচেষ্টাকে ‘আন্তরিক এবং দৃঢ়’ বলে অভিহিত করেছে।
এক যৌথ বিবৃতিতে, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, কাতার, মিশর, জর্ডান, তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা বলেছেন, তারা ট্রাম্পের নেতৃত্ব এবং গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য তার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানিয়েছে।
দেশগুলো জানিয়েছে, তারা চুক্তিটি চূড়ান্ত ও বাস্তবায়নের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত, যা তাদের মতে- ‘একটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের দিকে পরিচালিত করবে, যার অধীনে গাজা একটি ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পশ্চিম তীরের সঙ্গে সম্পূর্ণরূপে একীভূত হবে’।
ট্রাম্পের পরিকল্পনার অধীনে, হামাস তাদের অস্ত্র সমর্পণ করবে এবং তাদের সুড়ঙ্গ ও অস্ত্র উৎপাদন কেন্দ্র ধ্বংস করা হবে।
পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই প্রস্তাবে সম্মত হলে ‘পূর্ণ সাহায্য অবিলম্বে গাজা উপত্যকায় পাঠানো হবে’।
যুক্তরাষ্ট্র গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থার জন্য তাদের পরিকল্পনার রূপরেখাও প্রকাশ করেছে।
এতে বলা হয়েছে, গাজার শাসন ব্যবস্থা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারসহ অন্যান্য নেতারা পরিচালনা কমিটিতে থাকবেন। টনি ব্লেয়ার এই পরিকল্পনাকে ‘সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত’ বলে অভিহিত করেছেন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার এই পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আমরা সকল পক্ষকে একত্রিত হয়ে মার্কিন প্রশাসনের সাথে কাজ করার আহ্বান জানাই, যাতে তারা এই চুক্তি চূড়ান্ত করে এবং এটি বাস্তবে রূপ দেয়।
তিনি আরো বলেন, হামাসের এখন এই পরিকল্পনায় সম্মত হওয়া উচিত এবং অস্ত্র ছেড়ে ও অবশিষ্ট সব জিম্মিকে মুক্তি দিয়ে দুর্দশার অবসান ঘটানো উচিত।
ইউরোপীয় কাউন্সিলের সভাপতি আন্তোনিও কস্তা বলেছেন, তিনি মার্কিন প্রস্তাবের প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর ইতিবাচক প্রতিক্রিয়ায় আশাবাদী। কস্তা আরো বলেন, সব পক্ষকে শান্তির জন্য একটি প্রকৃত সুযোগ দেওয়ার জন্য এই মুহূর্তটি কাজে লাগাতে হবে।
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাখোঁ প্রস্তাবটির প্রশংসা করে বলেছেন, যুদ্ধের অবসান এবং জিম্মিদের মুক্তির প্রচেষ্টায় ফ্রান্স অবদান রাখতে প্রস্তুত।
মার্কিন পরিকল্পনায় আরো বলা হয়েছে, হামাসের ‘প্রত্যক্ষ, পরোক্ষভাবে বা কোনোভাবেই’ শাসনব্যবস্থায় কোনো ভূমিকা থাকবে না।
এতে আরো বলা হয়েছে, ইসরায়েল গাজা দখল করবে না বা তাদের সাথে সংযুক্ত করবে না এবং সময়ের সাথে সাথে ইসরায়িলি বাহিনী পর্যায়ক্রমে এই অঞ্চল থেকে সরে যাবে।
এই পরিকল্পনাটি একটি চূড়ান্ত ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের দরজাও উন্মুক্ত রেখেছে।
যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে পরিচিত একটি ফিলিস্তিনি সূত্র বিবিসিকে জানিয়েছে, কাতার এবং মিশরের কর্মকর্তারা গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য হোয়াইট হাউসের পরিকল্পনা দোহার হামাস কর্মকর্তাদের কাছে হস্তান্তর করেছেন।