রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০১:০৩ অপরাহ্ন

কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ি পুনরুদ্ধারের দাবি

বরিশাল প্রতিনিধিঃ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি জীবনানন্দ দাশের বাড়ি পুনরুদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন কবি ও কথাসাহিত্যিকরা। শুধু উদ্ধার নয় সেখানে সরকারি উদ্যোগে জীবনানন্দ গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের দাবিও জানিয়েছেন তারা। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) জীবনানন্দ দাশের ৬৭তম মৃত্যুবার্ষিকীতে এসব দাবি করা হয়।

জাতীয় কবিতা পরিষদ বরিশালের সভাপতি ছড়াকার তপংকর চক্রবর্তী বলেন, জীবনানন্দ দাশ শুধু বাংলা সাহিত্যের নয়, তিনি বিশ্ব সাহিত্যের বড় মাপের কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যের একটি পরিচয়। জীবনানন্দ দাশের ছয় বিঘা জমির ওপর বাড়ি ছিল। তার ১০ শতাংশ জমির ওপরে তার নামে একটি মিলনায়তন হয়েছে। বাকি জমি বেহাত হয়ে গেছে। সরকার উদ্যোগী হলে যতটুকু জমি পুনরুদ্ধার সম্ভব তা উদ্ধার করে একটি কমপ্লেক্স করে দেওয়া যায়। আমি আশা করি সরকার এই উদ্যোগটি গ্রহণ করবে।

কবি হেনরী স্বপন বলেন, জীবনানন্দের রেখে যাওয়া জমি পুনরুদ্ধার সরকারের সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তার মোট জমির ৭০ ভাগ এখনো সরকারের হাতে রয়েছে। এর মধ্যে সিটি করপোরেশন ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কোয়ার্টার রয়েছে। এগুলোর অন্যত্র স্থানান্তর করে সেখানে গবেষণা কেন্দ্র, পার্ক করে দেওয়া উচিত বলে মনে করি।

প্রাবন্ধিক রণজিৎ মল্লিক বলেন, জীবনাননন্দ দাশের বাড়িটি পুনরুদ্ধার করা অবশ্যই জরুরি। তিনি আঞ্চলিক পরিমণ্ডলের কোনো লেখক নন। তিনি বাঙলা সংস্কৃতির অন্যতম একটি অধ্যায়। এটি দুঃখজনক ব্যাপার জীবনানন্দের পৈত্রিক বাড়িটি এখন আর নেই। এটি উদ্ধার করে শুধু ভৌত অবকাঠামো দেখবো শুধু সেটাই নয়; এটি একটি উত্তরাধিকার। জীবনানন্দ দাশের পৈতৃক বাড়ি উদ্ধার করা তাকে ধরে রাখারই একটি প্রয়াস এবং সেটি করতে হবে।

প্রাবন্ধিক দেবাশীষ হালদার বলেন, শিল্প-সংস্কৃতি রক্ষা করার মধ্য দিয়েই জাতির মানসিকতা গড়ে ওঠে। অতীতের মানুষের স্মৃতিচিহ্ন রক্ষা করা জাতীয় দায়িত্ব। স্বার্থলোভীরা সব কিছু গ্রাস করবে। জীবনান্দ দাশ আমাদের জাতীয় অস্তিত্বের সঙ্গে জড়িত। তার বাড়ি পুনরুদ্ধার করা সরকারের দায়িত্ব। আমি দাবি করি তাতে উদ্যোগী হবে সরকার।

কবি আসমা চৌধীরী বলেন, জীবনানন্দ দাশের বাড়ি পুনরুদ্ধারের দাবি জানাই। কারণ তিনি বরিশালের আঞ্চলিক পর্যায়ের কবি নন, তিনি সারাবিশ্বের কবি। বরিশালে অনেকের আসার একমাত্র আকর্ষণ জীবনানন্দ দাশ ও তার বাড়ি। সেই বাড়িটি পুনরুদ্ধার করা হলে একটি দর্শনীয় স্থান হবে।

বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সাইফুর রহমান মিরন বলেন, জীবনানন্দ দাশ তার জমি বিক্রি করে যাননি। এখানে অনেক জায়গা তার রয়েছে। রাষ্ট্রের উচিত বিশ্বের আধুনিক কবিদের একজন জীবননানন্দ দাশের সম্পত্তি ফিরিয়ে এনে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপন করা।

লিটলম্যাগ কর্মী ও কবি অনিন্দ্য দ্বীপ বলেন, জীবনানন্দ দাশের বাড়ি ঘিরে আমাদের মাঝে একটি মোহ কাজ করে। এই বাড়িটি উদ্ধার করে সরকার একটি প্রত্মতাত্ত্বিক স্থাপনায় রূপ দিবে এই দাবি জানাচ্ছি।

তবে বাড়ির বাসিন্দা জলিল ফারুক বলেন, জীবনানন্দ দাশের পরিবার আমাদেরকে তাদের জমির পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে গেছে। এজন্য পরবর্তীকালে এই সম্পত্তি আর কেউ আমাদের কাছ থেকে নিতে পারেনি।

তিনি বলেন, ১৯৫৫/৫৬ সালের দিকে ৬ হাজার টাকায় আমাদের কাছে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি দিয়ে যান তারা। তাদের মোট জমি ছিল ৯৭ শতাংশ। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ আমরা কিনে রেখেছি। বাকি ৫২ শতাংশ জমি এখনো সরকারের দখলে রয়েছে। জীবনানন্দ দাশ চলে যাওয়ার পরে এই বাড়িতে খ্রিস্টানরা থাকতেন। এরপরে আমরা উঠেছি।

জীবননানন্দ দাশের জমি সরকারের পুনরুদ্ধার করা উচিত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাড়িওতো বরিশালে আছে। সেটা কি সরকার পুনরুদ্ধার করেছে?

এ বিষয়ে বরিশাল জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবিব বলেন, জেলা পরিষদ কেবলমাত্র জীবনানন্দ দাশের বাড়িতে নির্মিত মিলনায়তনের পাঠাগারের দায়িত্বে আছে। বাড়ির জমি যদি অবৈধ দখলদারদের হাতে থাকে তাহলে তা উচ্ছেদে জেলা প্রশাসনকে আমি অনুরোধ করবো।

প্রসঙ্গত, বরিশালে জন্ম নেওয়া কবি জীবনানন্দ দাশ ১৯৭৪ সালে কলকাতা চলে যান। তিনি বা তার পরিবার বরিশালের বগুড়া রোডের জমি কারো কাছে বিক্রি করে গেছেন বলে ঐতিহাসিকভাবে প্রমাণ পাওয়া যায়নি। দেশভাগের পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি ‘শত্রু সম্পত্তি’ হিসেবে এখানকার বাসিন্দারা দখল করেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com