শনিবার, ২২ নভেম্বর ২০২৫, ০২:১৮ অপরাহ্ন

ইউক্রেনে যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২৮ পয়েন্টের পরিকল্পনা ফাঁস

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ বন্ধে ট্রাম্পের ২৮ পয়েন্টের পরিকল্পনা ফাঁস। সংগৃহীত ছবি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, একুশের কণ্ঠ:: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবসানে ২৮টি পয়েন্ট সম্বলিত একটি নতুন শান্তি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন, যা গতকাল ফাঁস হয়েছে। বিবিসি, রয়টার্স, সিএনএনসহ অধিকাংশ আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের হাতে এসেছে সেই খসড়া।

ট্রাম্প প্রশাসনের সেই ২৮ পয়েন্ট সম্বলিত খসড়ায় গত প্রায় চার বছর ধরে চলা এই যুদ্ধের অবসানে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়কে কিছু শর্ত মেনে চলার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো-

১) ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে এবং এ লক্ষে রাশিয়া, ইউক্রেন এবং ইউরোপের মধ্যে একটি সম্পূর্ণ এবং বিস্তৃত আগ্রাসনবিরোধী চুক্তি হবে। চুক্তিতে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চয়তার ব্যাপারটি গুরুত্ব সহকারে রাখতে হবে।

২) ইউক্রেন এই শান্তি পরিকল্পনায় সম্মতি জানানোর পর ১০০ দিনের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে।

৩) ইউক্রেনকে অবশ্যই দোনেৎস্ক ও লুহানস্ক থেকে নিজেদের সেনাদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে নিতে হবে এবং এ দুই প্রদেশকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দিতে হবে। এছাড়া ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের অন্যান্য যেসব এলাকা বর্তমানে রুশ বাহিনীর দখলে আছে, সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ নিয়ে আলোচনার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেবেন রাশিয়া ও ইউক্রেনের কর্মকর্তারা। বর্তমানে দোনেৎস্ক, লুহানস্কসহ ইউক্রেনের মূল ভূখণ্ডের প্রায় ২০ শতাংশ এলাকা রুশ বাহিনীর দখলে আছে।

ট্রাম্পের প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনায় বলা হয়েছে, ক্রিমিয়া, লুহানস্ক এবং দোনেৎস্ককে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি দেবে যুক্তরাষ্ট্র। ফলে কোনো কারণে ইউক্রেন যদি এই তিন অঞ্চলকে রুশ ভূখণ্ড হিসেবে স্বীকৃতি না ও দেয়, তাহলেও এগুলো নিজেদের বলে দাবি করতে পারবে না।

৪) ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সদস্য সংখ্যা কোনোভাবেই ৬ লাখের বেশি হতে পারবে না। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের হিসেব অনুযায়ী দেশটির সেনাবাহিনীতে বর্তমানে সক্রিয় সেনাসদস্যের সংখ্যা ৮ লাখ ৮০ হাজার। সেই সঙ্গে চুক্তিতে বলা হয়েছে, কখনও পরমাণু অস্ত্র তৈরির অনুমতি দেওয়া হবে না কিয়েভকে।

৫) যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর সদস্যপদ কখনও পাবে না ইউক্রেন। ন্যাটোও কখনও দেশটির ভূখণ্ড বা জলসীমায় কোনো ঘাঁটি গড়তে পারবে না। তবে ইউক্রেন ইউরোপীয় দেশগুলোর জোট ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ)-এর সদস্যপদ লাভের জন্য যোগ্য বলে বিবেচিত হবে, ইইউ’র বাজারেও প্রবেশাধিকার পাবে।

৬) রাশিয়া এবং ইউক্রেন, উভয়ে শান্তি পরিকল্পনায় সম্মতি জানালে যুদ্ধের কারণে রাশিয়া, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং অন্যান্য যেসব রুশ কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল যুক্তরাষ্ট্র এবং পশ্চিমাবিশ্ব- সেগুলো শিথিল করা হবে। তবে রাশিয়া যদি শর্ত ভেঙে ফের ইউক্রেনে আগ্রাসন চালায়, তাহলে ফের কার্যকর করা হবে সেই নিষেধাজ্ঞাগুলো।

৭) রাশিয়াকে ফের শিল্পোন্নত ও প্রভাবশালী দেশের জোট জি৭-এ অন্তর্ভুক্ত করা হবে। রাশিয়া আগে এই জোটের সদস্যরাষ্ট্র ছিল এবং সে সময় এর নাম ছিল জি৮। ২০১৪ সালে রুশ বাহিনী ক্রিমিয়া উপদ্বীপ দখল করার পর গ্রুপের অন্যান্য সদস্যরাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি, কানাডা এবং জাপানের মতামতের ভিত্তিতে রাশিয়াকে এই জোট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছিল।

এছাড়া রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে নেদারল্যান্ডসের হেগভিত্তিক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পুতিন এবং অন্যান্য রুশ কর্মকর্তাদের ওপর যে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছিল, সেগুলো প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

৮) যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন ব্যাংকে রাশিয়া যে পরিমাণ অর্থ ফ্রিজড অবস্থায় আছে, সেখান থেকে ১ হাজার কোটি ডলার ব্যয় করা হবে ইউক্রেনের অবকাঠামোগত পুনর্গঠন ও উন্নয়নের কাজে। বাকি ১ হাজার কোটি ডলার ইউক্রেনের শিল্পখাতে বিনিয়োগ করা হবে। এই বিনিয়োগের ফলে যে মুনাফা আসবে, তার অর্ধেক পাবে যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া ইউক্রেনের অবকাঠামো ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ইউরোপকে আরও ১ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করার আহ্বানও জানানো হয়েছে ট্রাম্পের প্রস্তাবিত পরিকল্পনায়।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের ব্যাংকগুলোতে রাশিয়ার ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ফ্রিজড অবস্থায় আছে। বাকি ৩০০ কোটি ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার যৌথ মালিকানার ভিত্তিতে একটি গাড়ি তৈরির কারখানা তৈরি করা হবে। সেই কারখানা বা কোম্পানির নাম হবে ‘ইউএস-রাশিয়ান ইনভেস্টমেন্ট ভেহিকেল’।

৯) ঝাপোরিজ্জিয়া পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র আর ইউক্রেনের একক মালিকানায় থাকবে না। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের ৫০ শতাংশ মালিকানা থাকবে রাশিয়ার কাছে। ফলে উৎপাদিত বিদ্যুতের ৫০ শতাংশের মালিক হবে রাশিয়া।

১০) রুশ সংবাদমাধ্যমের ওপর থেকে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে ইউক্রেনকে। সেই সঙ্গে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সংস্কৃতিকেন্দ্রগুলোতে রাশিয়ার, ভাষা, সাহিত্য, চলচ্চিত্র পড়ানো হবে।

১১) সমরাস্ত্র নির্মাণে ইউক্রেনের কোনো বাধা নেই। তবে কিয়েভ যদি কখনও মস্কো বা রাশিয়ার গভীরে হামলা চালায়, সেক্ষেত্রে যুদ্ধবিরতি বাতিল বলে গণ্য হবে।

সূত্র : বিবিসি

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com