শনিবার, ০৯ অগাস্ট ২০২৫, ১০:৪৩ পূর্বাহ্ন

আনন্দে মায়ের আয়োজন: যমজ চার ভাইয়ের ১৫তম জন্মদিন পালন

আনন্দে মায়ের আয়োজন: যমজ চার ভাইয়ের ১৫তম জন্মদিন পালন

নিজস্ব প্রতিবেদক:: মা সেলিনা তখন সবে মাত্র সন্তানসম্ভবা। অস্বাভাবিক স্বাস্থ্য হয়ে উঠাতে ভয় পেয়ে যান পরিবার। চিকিৎসক বলেছিলেন তাঁর পেটে টিউমার হয়েছে। আমলে না নিয়ে অপেক্ষা করেন স্বজনরা। সব চিন্তা মুক্ত হয়ে নতুন সন্তান আসছে এমন ভাবনাই সেলিনাকে আকঁড়ে রাখে। ২০১০ সালের ২৫ জুলাই তাঁর কোল আলো করে জময চার ছেলে সন্তানের জম্ম হয়। একদিকে আনন্দ আরেক দিকে একই সাথে চার নবজাতককে বাঁচিয়ে তোলা পুরো পরিবারের মাঝে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেয়। ঢাকার অদূরে নবাবগঞ্জে বক্সনগর গ্রামে এ চার জময ছেলের জম্ম হয়। সেই চার জময ছেলের বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হয় ২৫ জুলাই শুক্রবার। পারিবারিকভাবে তাঁদের জন্মদিন পালন করা হয়েছে। ছোট চার শিশু আজ কিশোরে পরিণত হয়েছে। তাঁরা সবাই একটি মাধ্যমিক স্কুলে লেখাপড়া করছে।

পরিবারিক সূত্র জানায়, ২০১০ সালের ২৫ জুলাই নবাবগঞ্জ উপজেলার ছোট বক্সনগর গ্রামের বাহরাইন প্রবাসী আরিফুর রহমানের স্ত্রী সেলিনা আরিফের গর্ভে জন্ম নেয় চারটি যমজ ছেলে। এটি ছিল তখন বিরল ঘটনা। এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও পরে সবাইকে বাঁিচয়ে রাখা সম্ভব হয় না। তবে সেই কষ্টের কাজটি করতে পেরেছেন গৃহবধু সেলিনা। তাঁদের নিয়ে এখনও অনেকের মনে কৌতূহল রয়েছে কেমন আছে সেই চার শিশু। শিশু থেকে আজ তাঁরা সবাই কৈশোরে পরিণত হয়েছে। এখন চারজনই বক্সনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করেন। আবুবকর ফারদিন নবম শ্রেণীতে, ওমর ফারুক আদিয়াত ৬ষ্ঠ এবং ওসমান গনি আরিয়ান ও আলী আরেফিন শায়ান ৭ম শ্রেণীতে। ফারদিন শারিরীকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ থাকায় স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে উঠেছে। এছাড়া আদিয়াত বেশির ভাগ সময় অসুস্থ থাকায় এবং আরিয়ান ও শায়ান চঞ্চল হওয়ায় পড়াশুনায় পিছিয়ে পড়েছে। চার জময শিশুকে বাঁচিয়ে তোলার সংশয়ে ছিলেন সয়ং বাবা মো. আরিফ। সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রেখেই ইসলামের চার খলিফার নামের সাথে মিল রেখে তাঁদের নাম রাখা হয়। এরা হলেন- আবুবকর ফারদিন, ওমর ফারুক আদিয়াত, ওসমান গনি আরিয়ান ও আলী আরেফীন শায়ান। ছেলেদের জম্মদিনে বাবা সকলের কাছেঁ দোয়া চান।

কিভাবে বেড়ে উঠে: সে সময় অনেকের মনে শঙ্কা দেখা দেয়। জময চার সন্তানকে কিভাবে আগলে রেখে বড় করে তুলবেন। চার সন্তানের লালন পালন নিয়ে অনেকটা হতাশা আর কষ্টের দিন গুণতে থাকে আরিফ সেলিনা দম্পতি। স্বামী আরিফ থাকেন প্রবাসে। একাকী কি করে সম্ভব এদের বাঁচিয়ে তোলা। সেই চিন্তায় মা বিভোর। তবে কোনো হতাশাই দমাতে পারেনি সেলিনকে। সে তার সন্তানদের বড় করে গড়ে তুলতে চলে যান বান্দুরা বাবার বাড়ি। সেখানে যৌথ পরিবারে চার সন্তানকে বেড়ে উঠতে খুব একটা বেগ পোহাতে হয়নি তাকে। এভাবে টানা প্রায় ৭ বছর সন্তানদের নিয়ে বাবার বাড়ি নতুন বান্দুরাতেই ছিলেন সেলিনা।

আনন্দে মায়ের আয়োজন: যমজ চার ভাইয়ের ১৫তম জন্মদিন পালন

সেলিনা আরিফ বলেন, দেখতে দেখতে ওরা বড় হয়ে উঠেছে। জম্মদিন এলেই আমার দায়িত্ব হয়ে পড়ে ওদের খুশি করা। তাই একটা কেক এনে রাতে ছেলেদের সারপ্রাইজ দিলাম। দুইটা খুব চঞ্চল, সারাদিন খেলাধুলা করে। তাই কেক কাটতে কাটতে রাত ১০টা বেজে গেছে। তিনি বলেন, তবে পথচলা ছিল খুব কঠিন। বাবার বাড়ির পরিবারের সকলের সহযোগিতা ছাড়া ওদের বড় করতে পারতাম কিনা সন্দেহ। এছাড়া ব্যয়বহুল ছিল ওদের লালনপালন। তবে আল্লাহর রহমতে ওদের বাবা বিদেশে ভাল থাকায় আর্থিকভাবে বেগ পেতে হয়নি।

কথা হয় জময চার ভাইয়ের সাথে। এদের মধ্যে ফারদিন সবচেয়ে মিশুক। ফারদিন বলেন, আদিয়াতকে নিয়ে সমস্যা না, শায়ান ও আরিয়ানকে নিয়ে মা অনেক চিন্তায় থাকেন। ওরা দিনভর ঘুরে আর মা চিন্তা করে। তবে আমরা চার ভাই মিলেমিশে ভাল আছি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।

জময ৪ কিশোরের মামা ইমরান হোসেন বলেন, আল্লাহর অশেষ রহমত এরা এখনো বেঁচে আছে। জন্মের সময়ই ডাক্তার বলে দিয়েছিল, হয়তো মাকে অথবা সন্তানদের বাঁচাতে পারবো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় মা ও সন্তানরা সবাই বেঁচে যায়। শুক্রবার পারিবারিকভাবে ওদের জন্মদিন পালন করা হলো।

সেলিনার বড় ভাই ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমে আল্ট্রাসনো প্রতিবেদনে একটি ক্লিনিক থেকে তাঁর পেটে টিউমার হয়েছে বলা হয়। পরে ঢাকায় বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহযোগী অধ্যাপক ডা. জেসমিন বানুর সাথে কথা বলে চিকিৎসা করাই। তাঁর নিবিড় পর্যবেক্ষণে ২০১০ সালের ২৫ জুলাই সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পৃথিবীর আলো দেখে চার জমজ শিশু। আল্লাহ বোন ও তার চার জময ভাগনেকে সুস্থ রেখেছেন এ জন্য দোয়া চান।

সংবাদটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2024  Ekusharkantho.com
Technical Helped by Curlhost.com